প্রাণীরা কেন বেশি শুনতে পায়?
বিজ্ঞানিরা বলেন, বিবর্তনের ফলে মানুষের শ্রবণশক্তি কমেছে৷ আমরা হাতির মত খুব অল্প বা বাদুড়ের মত অতি উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পাই না৷ অনেক প্রাণীর কানের নড়াচড়া শ্রবণক্ষমতা বাড়ানোর কৌশল৷ এভাবে তারা বিপদ থেকে বাঁচে৷
খরগোশ কান ঘোরাতে পারে ২৭০ ডিগ্রি
খরগোশেরা শব্দের দিকে তাদের কান ঘুরিয়ে নেয়৷ এতে করে তারা আক্রমণকারী প্রাণীর গতিবিধি বুঝতে পারে৷ আবার কানের নড়াচড়ার সঙ্গে তাদের মনোজগতও টের পাওয়া যায়৷ যেমন, তাদের দু’কান খাঁড়া মানে একেবারে মনোযোগ দিয়ে কিছু শুনছে৷ এক কান খাঁড়া ও এক কান শোয়ানো মানে শুনছে কিন্তু মনোযোগ নেই৷ পিঠের ওপর দু’কান পরস্পর স্পর্শ করে পড়ে থাকা মানে নিরুদ্বেগ সময় কাটানো, কিন্তু কান যদি পরস্পর স্পর্শ না করে, তার মানে ভয় পেয়েছে৷
বিড়াল ও কুকুর খুব মনোযোগী
মানুষের ক্ষমতার চেয়ে উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায় কুকুর৷ তারা মনিবের পায়ের শব্দ আলাদা করতে পারে৷ বিড়াল আরো বেশি সংবেদনশীল৷ কুকুরের যেখানে ১৮টি কানের পেশি আছে, বিড়ালের আছে ৩০টি৷ এমনকি তারা কান ১৮০ ডিগ্রি ঘোরাতে পারে৷ তাই চুপ করে বিড়ালের পিছু নেবেন? সম্ভব নয়৷
আলট্রাসনিক তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে বাদুড়
বাদুড় রাতে উড়ে বেড়ানোর সময় শব্দের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে৷ তাদের মুখ থেকে আলট্রাসনিক তরঙ্গদৈর্ঘ্য বের হয় এবং তা সামনে কোন বস্তুর ওপর লেগে তা তাদের কানে ফেরত আসে৷ এতে বস্তুর অবস্থান ও আকার টের পায় তারা৷ বাদুড়ের কানে ২০টি পেশি আছে৷ এগুলো ব্যবহার করে তারা শব্দের প্রতিধ্বনির সূক্ষ্মতা যাচাই করে৷
যার কান নেই, সেই শোনে সবচেয়ে ভালো
তুলনামূলক বড় আকারের এই মথগুলোর কান খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ কিন্তু এর শুনতে পাবার ক্ষমতা প্রাণীকূলে সেরা৷ তারা মানুষের চেয়ে দেড়শ’ গুণ ভাল শোনে৷ আর বাদুড়ের চেয়ে ১০০ হার্ৎস বেশি শুনতে পায় এই মথগুলো৷
অন্য কীটগুলো তাদের শিকারীদের শুনতে পায়
গুবরে, ঝিঁঝিঁ বা মথ পোকাগুলোর আলট্রাসাউন্ড সংবেদনশীল শ্রবণক্ষমতা রয়েছে৷ এরা তাদের শিকারীদের শুনতে পায়৷ তখন শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে এরা আঁকাবাঁকা দৌঁড়ে পালায় বা গোলগোল করে উড়ে৷ কোন কোনটি ভয় দেখাতে নানান শব্দও তৈরি করে৷
চোয়াল দিয়ে শোনে ডলফিন
শুনতে হলে সবসময় কানের প্রয়োজন নেই৷ এর প্রমাণ ডলফিন৷ তারা বাদুড় ও তিমি মাছের মত পানির নীচে শব্দ তৈরি করে অপর বস্তু বা প্রাণীর অবস্থান ও আকার নির্ধারণ করে৷ কিন্তু সেই তথ্য সংগ্রহ করে চোয়াল ও দাঁত দিয়ে৷
হাতি বজ্রধ্বনি টের পায়!
বিরাট কান দিয়ে হাতি বৃষ্টির আগেই মেঘের হালকা গর্জন টের পায়, যা মানুষের কান শুনতে পায় না৷ এগুলো নিম্ন কম্পাঙ্কের বা ইনফ্রাসাউন্ড তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শব্দ৷ তাদের পায়ের স্নায়ুকোষ দিয়ে তারা মাটির নীচের কম্পন ও শব্দ টের পায়৷
প্যাঁচা: প্রকৃতির ‘সার্ভেইলেন্স’ ক্যামেরা
প্যাঁচা শুধু রাতে দেখতেই পায়না, মাথাও ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরাতে পারে৷ তাদের অসাধারণ শ্রবণক্ষমতাও আছে৷ তাদের দুই কান একরকম নয়৷ প্যাঁচা যখন উড়ে, তখন এক কান দিয়ে ওপরের শব্দ ও এক কান দিয়ে নীচেরটা শুনতে পায়৷ এতে তাদের শিকার করতে সুবিধা হয়৷