টিকে থাকার কলাকৌশল
২ জুন ২০১৪কিছু প্রাণীকে শুধু ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় যে, তারা পাতা বা গাছের ডালপালা নয়৷ অনেক পতঙ্গ পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির রূপ ও রং গ্রহণ করে নিজেকে প্রায় অদৃশ্য করে ফেলে৷ একে অনুকৃতি বলা হয়৷ যেমন এক ধরনের ‘স্টিক ইনসেক্ট' বা কাঠি পোকাকে চলন্ত পাতা বলে মনে হয়৷ প্রাণীদের ছদ্মবেশ ধারণের প্রবণতা বহু আগে থেকেই চলে আসছে বলে গবেষকরা জানতে পেরেছেন৷ কাঠি পোকা বলে পরিচিত প্রাণীটির অনুকরণের প্রবণতা পুস্পক গাছের উত্থানের সাথে সাথে বেড়ে উঠেছে৷ এতদিন মনে করা হতো এসবের শুরু হয় বুঝি ৯০ মিলিয়ন বছর আগে৷
১২৬ মিলিয়ন বছর আগেও একই কৌশল
গ্যোটিংগেন শহরের বিবর্তনবিষয়ক জীববিজ্ঞানী সোয়েন ব্রাডলার-এর পরিচালনায় এক গবেষণা টিম কাঠি পোকার ফসিলের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করেছেন যে, এই প্রাণীটি ১২৬ মিলিয়ন বছর আগেও অনুকরণের কৌশল চালাতো৷ বিবর্তন-গবেষণা জগতে এক চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার এটি৷ সম্প্রতি এই বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘প্লস ওয়ান'-এ এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়৷
১২৬ মিলিয়ন বছর আগে চক প্রস্তরযুগে প্রাণীজগতে ডাইনোসোর ও উদ্ভিদ জগতে ফার্ন, গিংকো নেকেড সিড প্ল্যান্ট ইত্যাদির আধিপত্য ছিল৷ পুস্পক গাছ প্রায় দেখাই যেত না৷
ব্রাডলারের পরীক্ষিত ফসিলটি অবশ্য় কোনো পুস্পক গাছকে নয় বরং গিংকো জাতীয় উদ্ভিদকে অনুকরণ করতো৷ ‘‘অনুকরণকারী পতঙ্গগুলি সাধারণত যেসব উদ্ভিদ তারা খেয়ে থাকে, চেহারার দিক দিয়ে সেসব উদ্ভিদকে অনুকরণ করতে চায়৷ আজ সেটা হলো পুস্পক গাছ, আর সেকালে সেগুলি ছিল নেকেড সিড প্ল্যান্ট'', বলেন জীববিজ্ঞানী ব্রান্ডলার৷
খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারে ওস্তাদ পতঙ্গরা
জীবজগতের মধ্যে, বিশেষ করে পতঙ্গরা উদ্ভিদজগতের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে ওস্তাদ৷ এতে তারা শুধু আত্মরক্ষাই করার চেষ্টাই করতে চায় না, শিকারের প্রাণীটিকে ফাঁদেও ফেলতে চায়৷ যেমন ম্যান্টিস বা লম্বা পা বিশিষ্ট এক ধরনের ফড়িং এই কৌশলটি ভালোভাবে আয়ত্ত করেছে৷
অদৃশ্য হওয়ার কলাকৌশলে প্রকৃতিতে কোনো কমতি নেই৷ ‘‘এক ধরনের শুঁয়াপোকা পাখির বিষ্ঠার মতো আকৃতি ধারণ করে'', বলেন জীববিজ্ঞানী ব্রাডলার৷ তাঁর কথায়, ‘‘জীবজগতে অনুকরণের ক্ষেত্রে এই সাফল্য দেখে মনে হয় এখন পর্যন্ত যা প্রমাণিত হয়েছে, বিষয়টি তারা চেয়েও অনেক পুরানো৷''