1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রশ্ন করার অভ্যাস চলে যাচ্ছে, আক্ষেপ কৃতি বিজ্ঞানী দম্পতির

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৯ নভেম্বর ২০২০

পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত শিক্ষার ধারা ক্রমশ গবেষণাবিমুখ করে তুলছে পড়ুয়াদের৷ সিলেবাস ও প্রজেক্টের চাপে তারা প্রশ্ন করতে ভুলে যাচ্ছে৷ এই পরিস্থিতি বদল চাইছেন আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত বাঙালি বিজ্ঞানী দম্পতি৷

https://p.dw.com/p/3lYUq
ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী
ছবি: Payel Samanta/DW

সারা বিশ্বেই  বিজ্ঞানচর্চায় এখনো মহিলারা বেশ কিছুটা পিছিয়ে৷ ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বে তো বটেই৷ এর উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় বিজ্ঞানীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছেন তাতে রয়েছেন তিনি৷ তবে এটুকু বললে সবটা বলা হয় না৷ এই তালিকায় আরো অনেকের সঙ্গে রয়েছেন সংঘমিত্রার স্বামী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক উজ্জ্বল মৌলিক৷ এই বাঙালি দম্পতির সঙ্গে বিজ্ঞান ও সার্বিক শিক্ষার নানা দিক নিয়ে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷

দুজনেই পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশুনো করেছেন৷ দেশবিদেশের নানা নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনো ও গবেষণার কাজে যুক্ত থেকেছেন এই দম্পতি৷ প্রকাশিত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে স্ট্যানফোর্ডের তালিকা৷ গবেষণাপত্রের মান  ও তার ‘সাইটেশন’-এর সংখ্যা বিচার করা হয়েছে৷ এর পাশাপাশি দেখা হয়েছে সেই জার্নালের গুণগত মান যেখানে প্রকাশ পেয়েছে গবেষণাপত্রটি৷

গবেষণার জন্য যে স্বীকৃতি মিলেছে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী হলেও বর্তমান নিয়ে সন্তুষ্ট নন সংঘমিত্রা ও উজ্জ্বল৷ সংঘমিত্রা নিজেও এখন গবেষণার কাজে ততটা সম্পৃক্ত নন৷ তাঁকে এখন মূলত সামলাতে হয় আইএসআইয়ের প্রশাসনিক কাজকর্ম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘গবেষণার ঝোঁক এখন কমেছে৷ আরো বেশি ছেলেমেয়ে গবেষণার কাজে যুক্ত হলে ভালো হয়৷ ত্রুটি রয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়৷ ছোটবেলা থেকে ছাত্ররা প্রশ্ন করতে ভুলে যাচ্ছে৷ বেশি প্রশ্নের মুখে পড়লে শিক্ষকরা বিরক্ত হচ্ছেন৷ হোমটাস্ক ছেলেমেয়েরা নিজেরা করছে না তাদের অভিভাবক করে দিচ্ছে, তা শিক্ষকরা খতিয়ে দেখছেন না৷’ কৃতি বিজ্ঞানীর প্রস্তাব, পড়ুয়াদের উপর থেকে প্রজেক্টের চাপ কমাতে হবে৷ তাদের মধ্যে বিষয় সম্পর্কে আগ্রহ জাগিয়ে তুলে প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷ ছাত্রছাত্রীদের মুখস্থ বিদ্যার দিকে ঠেলে দেওয়ার দায় অনেকটাই অভিভাবকদের বলে মনে করেন সংঘমিত্রা৷

গবেষণার ঝোঁক এখন কমেছে: সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজের গবেষণাকর্ম সম্পর্কে সহজ ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিজ্ঞানী উজ্জ্বল৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স-কে কীভাবে ব্যবহার করা হয়, তার কতটা প্রয়োজন৷ তাঁর ভাষায়, ‘কম্পিউটার বিভিন্ন কাজ করে, কিন্তু তার বুদ্ধি নেই৷ কম্পিউটারের মধ্যে বুদ্ধি ঢোকানোর কাজ বহু বছর ধরে চলছে৷ সব ধরনের ডেটা প্রসেস করার সময় যাতে যন্ত্র বুদ্ধি খাটাতে পারে, সেই চেষ্টা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা৷’ এমনকি কোভিডের টিকা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা রয়েছে৷ বিজ্ঞানী বলেন, ‘করোনা রুখতে যে নতুন ওষুধ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে, সেক্ষেত্রে কম্পিউটারের ভূমিকা রয়েছে৷ যে কোনো ওষুধের পরীক্ষার পর্বে বিপুল টাকা খরচ হয়৷ কম্পিউটার ব্যবহার করে সেই খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব৷' সোশ্যাল মিডিয়ায় আদানপ্রদান হওয়া তথ্য বিশ্লেষণ থেকে অর্থনীতির ক্ষেত্রে পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট, সব কাজই কম্পিউটারের মাধ্যমে সার্থকভাবে করা যায় যদি আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তি কম্পিউটারে যুক্ত হয়৷

কম্পিউটার সায়েন্সের মতো বিজ্ঞানের সব ক্ষেত্রে গবেষণাই পারে এভাবে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে৷ কিন্তু ভারত-সহ তৃতীয় বিশ্বের দেশে গবেষণার ক্ষেত্রে এখনো শুধু সরকারি অনুদানই ভরসা, সেটাও মেধাবী পড়ুয়াদের বিমুখতার অন্যতম কারণ৷ সংঘমিত্রা বলেন, ‘বিদেশে বেসরকারি সংস্থা বিপুল অংকের অনুদান দেয় গবেষণার জন্য৷ আমাদের দেশে এই প্রবণতা এখনো কম৷ মূলত সরকারই টাকা জোগায়৷ কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও একই অনুদান আসে৷ তবে যাদবপুরের মতো রাজ্যের অনুদাননির্ভর প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সমস্যাটা একটু বেশি৷ তবে সেটাই সব কথা নয়, টাকার জোগান কম থাকা সত্ত্বেও আমরা জগদীশচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মতো বিজ্ঞানীদের পেয়েছি৷’

সব দিক সামলে নিজেদের সাফল্যের শিখরে নিয়ে গিয়েছেন উজ্জ্বল ও সংঘমিত্রা৷ একই পথে যাত্রাকে মসৃণ করেছে দম্পতির পারস্পরিক সহযোগিতা৷ ঠিক সংসার যাকে বলে, তা করা হয়ে ওঠেনি সংঘমিত্রার৷ তবে তাতে আক্ষেপ নেই৷ বরং তিনি তাকিয়ে আছেন সামনের দিকে৷ বলেন, ‘এই পেশা থেকে অনেক কিছু পেয়েছি৷ তাই ফিরিয়ে দিতে চাই৷ শিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে৷’