প্রবাসের বাঙালিরা
কেমন আছেন প্রবাসে বাঙালিরা? কেমন লাগে প্রবাসে স্বজন ছাড়া থাকতে? দেশ নিয়ে কী বা তাঁদের চিন্তা? ডয়চে ভেলের সাথে দেখে আসা যাক বিভিন্ন দেশে থাকা বাঙালির জীবনযাত্রা, তাঁদের নিজেদের জবানিতে৷
আসাদুজ্জামান খান, চীন
প্রায় এক দশক হতে চলল, পথে-প্রবাসে৷ চীনে এসেছিলাম উচ্চশিক্ষার জন্যে৷ এরপর কর্মজীবনে প্রথমে চীন, তারপর ম্যাকাও, ভিয়েতনাম ঘুরে আবার চীনে৷ বর্তমানে কাজ করছি সিচুয়ান প্রদেশের লুঝৌ শহরের সাউথওয়েস্ট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে, ‘রিসার্চ প্রফেসর’ হিসেবে৷ সুবিশাল এবং বৈচিত্রময় চীনে কাটানো এতদিনের অভিজ্ঞতা জীবনের বিশেষ প্রাপ্তি বলেই আমি মনে করি৷ এখানকার মানুষের সততা, কর্মস্পৃহা আমাকে মুগ্ধ করেছে বরাবর৷
রফিক আহমদ খান, মালয়েশিয়া
বছরের পর বছর ভিসা-পাসপোর্ট ও আইনি জটিলতা এবং বহু প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করেই ১৫ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় যাপন করছি প্রবাসজীবন৷ এই প্রবাসেও লেখালেখি করি প্রাণের টানে৷ লিখি মালয়েশিয়ায় প্রবাসী প্রায় দশ লাখ বাংলাদেশির সুখ-দুঃখের কথা৷ তুলে ধরতে চেষ্টা করি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সোয়া কোটি প্রবাসীর মনের কথা৷
শিপু ও শারমিন, লন্ডন
প্রবাস জীবনটা আমাদের কাছে বেশ ক্যালকুলেটিভ৷ কারণ প্রতিনিয়ত অনিশ্চিয়তা ঘিরে রয়েছে চারদিকে, বিশেষ করে আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য৷ পরিবার থেকে দূরে যান্ত্রিক জীবন হলেও কিছু সুবিধার জন্য কষ্টগুলো এক নিমিষে দূর হয়ে যায়৷ প্রবাস শিখিয়েছে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল হতে৷ বিপুল নাগরিক সুবিধাও রয়েছে৷ সে কারণেই আমাদের কাছে মনে হয় প্রবাস জীবন হচ্ছে প্রচণ্ড শীতের মাঝে এক টুকরো রোদের হাসি...!
জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, আরব আমিরাত
দু’দশক ধরে আছি আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে৷ ২০১২ সালে দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য পযর্টন ভিসা বাদে সব ধরনের ভিসা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা ট্রান্সফার বন্ধ করে দেয়ায় আমরা বেশ বিপদে রয়েছি৷ চাই এ অবস্থার অবসান৷ এখানে থেকে শত সংকটের মাঝেও ভালো লাগে তখন, যখন দেশে রেমিটেন্স পাঠাই৷
আরিফুর রহমান, সৌদি আরব
পারিবারিক স্বপ্নপূরণের আশায় ২০০৮ সালে সৌদি আরব এসেছি৷ কম্পিউটারের কাজ জানা থাকলেও ভিসায় প্রভিশন ইলেকট্রিশিয়ান হওয়ায় অন্য কাজ করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে৷ অনেক সময় রিয়াদের এক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও বেতন পাইনি৷ কপিল আকামা নতুন করে না দেয়ায় অবৈধ হতে হয়েছে৷ না খেয়ে সৌদির মরুভূমির রাস্তায় দিনাতিপাত করতে হয়েছে৷ এখন একটি ট্র্যাভেল কোম্পানিতে কাজ করছি৷ দেশ-মা-মাটিকে ভালোবাসি৷ মনে পরে সবকিছু...৷
মোয়াজ্জেম হোসেন তারা, প্যারিস
ঢাকার একটা কলেজে শিক্ষকতা করতাম৷ সমাজের পিছিয়ে পড়াদের আলোকিত করার স্বপ্ন দেখতাম৷ কিন্তু সমাজে গেড়ে বসা ধর্মান্ধদের জন্য স্বদেশ প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছে এবং সেইসাথে আলোকিত সমাজ গড়ার স্বপ্নে বিভোর অসংখ্য তরুণ মেধা হারিয়ে ডুকরে কাঁদছে৷ প্রবাসে ভালো আছি৷ ধর্মান্ধের চাপাতির কোপ পড়ার আশঙ্কা নেই৷ তবে স্বদেশ আলোকিতের স্বপ্ন নিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়৷ যতদূরে থাকি না কেন প্রার্থনায় রয় জননী মাতৃভূমি তোমার মঙ্গল কামনা!
নাঈম আব্দুল্লাহ, অস্ট্রেলিয়া
১৯৯৫ সালের শেষ দিকে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে নিউজিল্যান্ড গিয়েছিলাম৷ আপেল বাগানে পিঠে ১৫ কেজির ঝুড়ি আর মই হাতে দৌড়ে আপেল পারার প্রতিযোগিতায় আমি মোটেই সিদ্ধহস্ত ছিলাম না৷ তাই ঐ কাজ ছেড়ে ট্যাক্সি ক্যাব চালাতাম৷ সুবিধা করতে না পারায়, পেলাম হাসপাতালে চাকরি৷ ২০০০ সালে চলে এলাম অস্ট্রেলিয়ায়৷ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসে পেলাম ব্যাংকের চাকরি৷
মো. ফারুক হোসেন, ওমান
ভিনদেশে থেকে স্বদেশ ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না৷ জীবিকার তাগিদে বসবাস এখন ওমানে৷ মরুদেশের সাথে পলিমাটির বাংলার মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ আরব সাগরের ধারে খুঁজি কক্সবাজারের সৌন্দর্য্য, ওমানের পাহাড়-পর্বতে খুঁজি রাঙামাটি-বান্দরবন, খারিফ (বর্ষা) মৌসুমে সবুজ সালালায় পাই বাংলাদেশের ঘ্রাণ আর কৃত্রিমতায় ভরপুর দুবাই শহরে পাই যান্ত্রিক ঢাকার টান৷ জোড়াতালির এত মিলের পরও অমিলের হাহাকার থাকে বারো আনা৷