প্রবাসীদের টিকাদান: ভোগান্তি, উধাও স্বাস্থ্যবিধি
কাজে যোগ দিতে এবং কোয়ারান্টিনের খরচ বাঁচাতে প্রবাসীদের টিকাদানের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ৷ এজন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-তে নিবন্ধন করে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে টিকা নেওয়া সুযোগ রাখা হয়েছে৷
ঢাকায় টিকাকেন্দ্র সাতটি
প্রবাসী কর্মীদের টিকাদানের জন্য ঢাকায় সাতটি কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ কেন্দ্রগুলো হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল৷
মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে দ্বিতীয় তলার করিডোরে মানুষের ভিড়, নেই কোন সামাজিক দূরত্ব৷ প্রবাসীরা তীব্র গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ক্লান্ত৷ অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক৷ একজনকে প্রশ্ন করলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘টিকার ব্যবস্থা করেন আগে, মাস্কের কথা পরে জিগাইয়েন৷’’
মাঝরাত থেকে সিরিয়াল
টিকা নিয়ে দশটার দিকে ফেরত যাচ্ছিলেন সৌদি আরবে গমনেচ্ছু চট্টগ্রামের বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ চৌধুরি৷ এতো দ্রুত কিভাবে টিকা পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ভাই, সিরিয়াল দিসি কালকে রাত ২টায়৷’’ কেন এতো আগে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘‘এতো মানুষ, ঐদিন সকালে এসে সিরিয়াল দিলে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে৷’’
এসএমএস ছাড়া টিকা নয়
নিবন্ধনের পর মোবাইলে আসা এসএএমএস ছাড়া কাউকে টিকা দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকার একাধিক টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা৷ প্রবাসীদের ক্ষেত্রে যারা অনেকদিন আগে নিবন্ধন করেছেন কিন্তু এখনো এসএমএস পাননি, তাদের ক্ষেত্রে কী করা হবে জানতে চাইলে তারা বলেন, এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিবে৷ তাদের কিছু করার নেই৷
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিতে এসেছেন এমন একাধিক প্রবাসী অভিযোগ করেন, দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা জনপ্রতি ৫০০-১০০০ টাকা ঘুসের বিনিময়ে সিরিয়ালের বাইরের লোকজনকে টিকাকেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছেন৷ অপরদিকে হাসপাতালটির সুপারভাইজার আব্দুল মান্নান বিশ্বাস বলেন, প্রবাসীরা নিয়ম মানছেন না, বিশৃঙ্খলা করছেন৷ সবাই আগে যেতে চাইছেন বিধায়ই এত বড় সিরিয়াল তৈরি হয়েছে৷
ফেরত যাচ্ছেন অনেকে
সৌদি আরবে যাওয়ার ভিসা নিয়ে ১৭ আগস্টের বিমানের টিকেট কেটেছেন কুমিল্লার বাসিন্দা মোঃ সাব মিয়া৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে টিকা না নিয়েই তাকে ফেরত যেতে হয়৷ কারণ জানতে চাইলে টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বরত মোঃ তৌহিদ জানালেন, ‘‘উনি ফাইজারের প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন সৌদি আরবে৷ যারা প্রবাসে প্রথম ডোজ নিয়েছেন, দেশে তাদের দ্বিতীয় ডোজের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ তাই ওনাকে বলেছি এক সপ্তাহ পরে আবার আসতে৷’’
কোন কেন্দ্রে কোন টিকা?
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল সেখানে প্রবাসীদের বায়োনটেক-ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ অপরদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে দেওয়া হচ্ছে বায়োনটেক-ফাইজার, অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকা এবং সিনোফার্মের টিকা৷ টিকাদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিভিন্ন কেন্দ্রে বিভিন্ন টিকা দেওয়া হচ্ছে৷
হাসপাতাল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল সেখানে দ্বিতীয় তলায় শুধু প্রবাসীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রবাসীদের জন্য পৃথক কোন ব্যবস্থা নেই৷ সাধারণ মানুষদের সাথেই তাদের টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
নারী, বয়স্কদের সিরিয়ালের প্রয়োজন নেই
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে পুরুষদের একাধিক লম্বা লাইন থাকলেও নারীদের কোন লাইন ছিল না৷ দায়িত্বরত একজন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেল, যেহেতু নারী এবং বয়স্ক প্রবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম, তাই তাদের জন্য আলাদা লাইন করা হয়নি৷ তারা সরাসরি টিকা দিয়ে চলে যেতে পারছেন৷
কেন্দ্রভেদে পরিস্থিতির ভিন্নতা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রবাসীদের টিকাকেন্দ্রে ভিড় ছিল তুলনামূলক কম৷ বড় পরিসরে খোলামেলা পরিবেশে সেখানে টিকাদান চলছে৷ বুথের সংখ্যাও অন্যদের চেয়ে বেশি৷ টিকা নিতে আসা প্রবাসীদেরকে সেচ্ছাসেবীরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন৷ উল্টো পরিস্থিতি দেখা গেছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷
কিন্তু শুরু থেকেই কার্যক্রমটি নিয়ে প্রবাসীদের অভিযোগের শেষ নেই৷ মোবাইলে বার্তা না পাওয়া, টিকাকেন্দ্রের স্বল্পতা, কেন্দ্রে এসেও টিকা দিতে না পারাসহ নানাবিধ ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে জানান তারা৷ ঢাকার দুইটি কেন্দ্রের চিত্র থাকছে ছবিঘরে৷