প্রকৃতির মাদক গবেষণাগার
রসায়নবিদদের দায়ী করে কোনো লাভ নেই, বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পদার্থ প্রকৃতির নিজেরই সৃষ্টি৷ অনেক ফুল, বীজ এবং পাতায় রয়েছে ভয়াবহ বিষ, যেগুলো জীবননাশকারী মাদকও বটে৷
গাঁজা বা ক্যানাবিস: ধোঁয়া ওড়াও বা কাপড় বানিয়ে পরো
গাঁজার পাতায় সাইকোঅ্যাকটিভ সাবসটেন্স টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল বা টিএইচসি রয়েছে৷ এটি মানুষকে আনন্দ এবং শান্তির অনুভূতি দেয়৷ পাশাপাশি কিছুটা বেদনার অনুভূতিও জাগায়৷ স্ত্রী উদ্ভিদের ফুলে উচ্চ মাত্রায় টিএইচসি থাকে৷ এ কারণে এসব ফুল থেকে মারিজুয়ানা উৎপন্ন হয়৷ ক্যানাবিসের কিছু প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে সুতাও উৎপাদন হয়৷
অ্যাসপিরিনের চেয়েও ভালো
পপি ফুলের গাছ থেকে আফিম হয়৷ পপি ফুলের বীজ শুকিয়ে এটি তৈরি করা হয়৷ আফিমে উচ্চ মাত্রার মরফিন রয়েছে, যা ব্যথানাশক হিসেবে ভীষণ কার্যকর৷
ম্যাজিক মাশরুম
মাশরুম বা ব্যাঙের ছাতা এক ধরণের রাসায়নিক শিল্পী৷ কয়েকটির মধ্যে সাইকোঅ্যাকটিভ পদার্থ রয়েছে৷ এদের মধ্যে একটি হলো ধূসর রঙের প্লুটেয়াস স্যালিসিনাস৷ এটির মধ্যে সিলোসাইবিন রয়েছে, যার কারণে দৃষ্টি এবং মানসিক বিভ্রান্তি বা হ্যালুসিনেশন দেখা দেয় অনেকটা এলএসডি’র মতো৷ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলো বমি বমি ভাব এবং প্যানিক অ্যাটাক বা আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া৷
ড্রাগ স্ন্যাক
কোকা উদ্ভিদের পাতা, যাতে অনেকটা কোকেইনের মতো পদার্থ রয়েছে৷ এটি একই সাথে ব্যথানাশক এবং উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার অনেক দেশে কোকা পাতা চিবানো সাধারণ একটা ব্যাপার৷ এই পাতাগুলো পচিয়ে এবং শুকিয়ে অন্য রাসায়নিকের সঙ্গে মিশিয়ে কোকেইন উৎপাদন করা হয়৷
সুন্দর বিষাক্ত ফুল
এঞ্জেলস ট্রাম্পেটস দেখতে দারুণ সুন্দর, কিন্তু খেতে গেলেই এর ভয়াবহতা টের পাবেন৷ এই উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে মাদকীয় রাসায়নিক রয়েছে, যা মানবদেহে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে৷ যখন আপনি এই উদ্ভিদটি খাবেন বা পুড়িয়ে ধোঁয়া নেবেন, আপনার হৃদস্পন্দন অনেক বেড়ে যাবে এবং হ্যালুসিনেশন হবে৷ এই ফুল খেয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে৷
ধুতুরা ফুল
ইন্টারনেটে ধুতুরা ফুলের আর একটি নাম থর্নঅ্যাপেলস৷ সেখানে এটিকে প্রাকৃতিক ড্রাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এই উদ্ভিদটিতে হ্যালুসিনেশন সৃষ্টিকারী পদার্থ রয়েছে, এ ছাড়া অনেকেই এটি গ্রহণের ফলে বাস্তবজ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷
হাওয়াইয়ান বেবিস
আরগাইরিয়া নারভোসা যদিও এশিয়ার উদ্ভিদ, কিন্তু এটি ‘হাওয়াইয়ান বেবি উডরোজ’ নামে পরিচিত৷ এর বীজে এলএসডি’র মতো পদার্থ রয়েছে৷ এটি গ্রহণ করলে চোখে যেন রঙিন দৃশ্য ভাসে আর বমিবমি ভাব ও সাইকোসিস হয়৷
ক্যাকটাস
মেক্সিকো ও টেক্সাসের পেয়োটি ক্যাকটাসে রয়েছে হ্যালুসিনেশন সৃষ্টিকারী উপাদান৷ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন সাইকোট্রপিক সাবসটেন্সের তালিকাভুক্ত এই উপাদানটি অবৈধ৷ এটি চিন্তা প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে এবং সময় ও নিজের সম্পর্কে ভাবনা সাময়িকভাবে কেড়ে নেয়৷ ক্যাকটাস ছোট ছোট করে কেটে সেদ্ধ করে বা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়৷
জয়ফল থেকে সাবধান
জয়ফল বেশি খেলে মাদকদ্রব্যের মতো কাজ করে, কেননা, এতে হ্যালুসিনেশন সৃষ্টিকারী পদার্থ মাইরিস্টিসিন রয়েছে৷ কিন্তু মশলা হিসেবে ব্যবহার করলে জয়ফল ক্ষতিকর নয়৷ এটি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব এবং ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে৷
সাইকেডেলিকের পাতা
চিরসবুজ ক্র্যাটম গাছ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রায় প্রত্যেকটি অঞ্চলেই দেখা যায়৷ এর পাতায় রয়েছে ওপয়েডের মতো পদার্থ মিট্রাজিনাইন৷ ব্যথানাশক হিসেবে এর পাতা কবিরাজী ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ এছাড়া এটি খেলে খাওয়ার রুচি বাড়ে এবং ডায়রিয়া নিরাময় হয়৷ তবে অতিরিক্ত গ্রহণে নেশা হয়৷
প্রকৃতির সবচেয়ে ভয়াবহ ঘাতক
এই তামাক উদ্ভিদটি বিষাক্ত৷ এটি নেশাজাত রাসায়নিক উৎপাদন করে৷ যেমন এর পাতায় রয়েছে নিকোটিন এবং অন্যান্য অ্যালকালয়েড৷ এই পাতা শুকিয়ে পোড়ানোর পর ধোঁয়া গ্রহণ করলে শরীরে নানা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ প্রবেশ করে৷