প্যারিসের মঞ্চে নাচ দেখিয়ে সন্তুষ্ট নোরা
৯ মার্চ ২০২২চাকচিক্য, গ্ল্যামার ও খোলামেলা পোশাক৷ মুল্যাঁ রুজের মঞ্চে নোরা মোগাল এভাবেই স্বাচ্ছ্ন্দ্য বোধ করেন৷ গত প্রায় ১৯ বছর ধরে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত শো-র প্রথম সারিতে নেচে চলেছেন৷ আজ তার বয়স ৩৯৷ এতকাল টিকে থাকবেন, এমনটা তিনি ভাবতেই পারেননি৷ শখই পেশায় পরিণত হয়েছিল৷ নোরা আসলে কিন্তু ডাক্তারি পড়েছিলেন৷ নোরা বলেন, ‘‘মনে আছে, শোয়ে অংশ নেবার এক সপ্তাহ পর ভেবেছিলাম, কীভাবে সবকিছু সহ্য করবো? একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে মনে হলো, শরীরের উপর এমন চাপ নেওয়া সম্ভবই নয়৷ কিন্তু সেটাই আমার দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠলো৷''
সপ্তাহে ছয় বার নোরা প্যারিসের মুল্যাঁ রুজের শোয়ে অংশ নেন৷ প্রতিষ্ঠিত নর্তকী হিসেবে এর মধ্যে তার আলাদা নিজস্ব ঘর হয়েছে, যেখানে তাকে মেকআপ নেওয়ার সময় কেউ বিরক্ত করে না৷ বড় বিলাসিতা বটে৷ নোরা মোগাল বলেন, ‘‘পথে বের হবার আগে মেকআপের সঙ্গে মঞ্চের জন্য মেকআপের কোনো তুলনা চলে না৷ এভাবে অবশ্যই পথে বের হবো না৷ এবার শুধু লাল লিপস্টিক বাকি৷ সেটা লাগালে সত্যি চোখে পড়ে৷ এমন সাজ আমার দৈনন্দিন জীবনের জন্য বেমানান৷''
নর্তকীর পাকা চাকরি তার কাছে কঠিন পরিশ্রম ও কড়া নিয়মানুবর্তিতার বেড়াজাল৷ প্রতি সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টার দুটি করে শো হয়৷ কিন্তু নাচ নোরা মোগালের জন্য পেশা নয়, নেশার মতো৷ মুল্যাঁ রুজ তাঁর দ্বিতীয় ঘরসংসার হয়ে উঠেছে৷ নোরা বলেন, ‘‘এই থিয়েটার আমার কাছে কাজের জায়গা নয়, বরং অনেকটা বাসার মতো৷ প্রত্যেকটি কোণ আমার চেনা৷ অনেকটা প্যারিস শহরের মতো, আনাচে কানাচে নতুন দরজা লুকিয়ে রয়েছে৷''
দুই সন্তানের মা সামান্য জিরিয়ে নেবার সময় পেলেই সাক্র ক্যোর গির্জার চারিপাশে হেঁটে নেন এবং টিলার উপর থেকে প্যারিসের দৃশ্য উপভোগ করেন৷ কুয়াশা থাকলেও সুন্দর লাগে৷ তার মতে, ‘‘আবহাওয়া ভালো না হলেও প্যারিস খুব সুন্দর৷ ফলে কঠিন দিনেও স্বস্তি পাওয়া যায়৷''
ফ্রান্সের রাজধানীতে প্রায় দুই দশক কাটানোর পরেও নোরা নিজেকে ঠিক প্যারিসের বাসিন্দা মনে করেন না৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘মুল্যাঁ রুজের নর্তকী হিসেবে প্যারিসের সমাজের অংশ হওয়া অবশ্যই কঠিন৷ প্যারিসের জন্য আমরা গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা এক সমান্তরাল জগতে বাস করি৷ সে কারণে প্যারিসের আসল বাসিন্দাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের সুযোগ কম৷''
জীবনের একই ছন্দের কারণে অন্যান্য নর্তকীরাই নোরার বন্ধু হয়ে উঠেছে৷ মুল্যাঁ রুজ ও সেখানকর মঞ্চ এবং ব্যাকস্টেজই তাদের জগত৷ সেখানে এক হাজারেরও বেশি হাতে তৈরি অভিনব কস্টিউম রয়েছে৷
সন্ধ্যায় শোয়ের সময় নোরাকে ২০ বার পোশাক বদলাতে হয়৷ কয়েক'শো মানুষের সামনে স্বল্প পোশাকে নিজেকে প্রদর্শন করতে নোরার কোনো সমস্যা হয় না৷ তিনি বলেন, ‘‘কস্টিউম পরলে বেশ নিরাপদ মনে হয়৷ সেগুলি আমাকে একটা ভূমিকা দেয়, আমি সেই চরিত্রের মধ্যে আশ্রয় নিতে পারি এবং নিজেকে সুরক্ষিত মনে করি৷''
১৯ বছর মুল্যাঁ রুজে কাজ করার পর ২০২২ সালে নোরা মোগালের অন্য পরিকল্পনা রয়েছে৷ তিনি আবার বার্লিনে ফিরে গিয়ে নাচকে শখ হিসেবেই ধরে রাখতে চান৷
কাটিয়া লিয়ার্শ/এসবি