পৌরাণিক চাঁদের যত কথকতা
জুলাইয়ে শতাব্দীর দীর্ঘস্থায়ী চন্দ্রগ্রহণ দেখেছে গোটা বিশ্বের মানুষ৷ কোনো কোনো জাতিগোষ্ঠীর কাছে চাঁদ আজও আরাধ্য৷ হাজার বছর ধরে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে চাঁদের উপস্থিতি নিয়েই এ ছবিঘর৷
রক্তিম সৌন্দর্য
আমাদের চাঁদ মামা তার স্বর্গীয় সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দিয়েছিল গত মাসের শেষ শুক্রবার, ‘ব্লাড মুন’ হিসেবে৷ রক্তিম সৌন্দর্যের এ বিরল আভা উপভোগ করেছিল বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ৷ চাঁদের অনন্য এ সৌন্দর্যের দেখা মেলে খুব কম সময়ই৷ এ সময় চাঁদ, মঙ্গলগ্রহের খুব কাছে চলে এসেছিল৷
ধর্ম ও জ্যোতির্বিদ্যায় চাঁদ
সৃষ্টির শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কাছে চাঁদ ধর্মীয় উপাসনার বস্তু৷ আদিমকালের অনেক জাতিগোষ্ঠীই চাঁদকে বিবেচনা করত ধর্মীয় শক্তি হিসাবে৷ আর তাই নিয়মত পূজা করত চাঁদের৷ কখনো কখনো দিন ও মাসের হিসাবের বদলে সময় হিসাব করত তারা অমাবস্যা-পূর্ণিমা দিয়েই৷
ভালোবাসায়, উপমায় চাঁদ
ভিজুয়াল আর্টস-এ চাঁদেকে উপস্থাপন করা হয় নানারকম অর্থে৷ যেমন নিষ্পাপ বা ভার্জিন মেরির প্রতীকায়নে৷ এমনকি রোম্যান্টিকতায়ও চাঁদের সৌন্দর্য উঠে এসেছে উপমা হিসেবে৷ চাঁদের জাদুকরী সৌন্দর্য তাই বার বরাই হয়ে উঠেছে শিল্পের অনুপ্রেরণা৷ ভিজুয়াল আর্টস-এ সৌন্দর্য প্রকাশের উপমা হিসেবে চাঁদের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে কাসপার ডেভিড ফ্রিডরিশ-এর ‘টু মেন কন্টেমপ্লেটিং দ্য মুন’ নামের বিখ্যাত চিত্রকর্মটির৷
সাহিত্য চর্চায় চাঁদ
সাহিত্য চর্চায় চাঁদকে উপমা হিসেবে ব্যবহারের ইতিহাসও বেশ পুরোনো৷ তবে সাহিত্যে চাঁদকে একটু ভিন্ন অর্থেও ব্যবহার করেছেন কেউ কেউ৷ যেমন বিশ্বখ্যাত জার্মান সাহিত্যিক ইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে তাঁর কবিতা ‘টু দ্য মুন’-এ চাঁদকে সান্ত্বনার উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছেন৷ আর বাঙালি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য পূর্ণিমার চাঁদকে ‘ঝলসানো রুটি’-র সঙ্গে তুলনা করেছেন৷
গানে গানে চাঁদ
চাদঁ ও নিশাচর প্রাণীর মাঝে রয়েছে এক নিবিড় সম্পর্ক৷ যেমন পেঁচা চাঁদের আলোয় তার ডানা মেলাকে উপভাগ করে৷ নেশা জাগানিয়া চাঁদের এ প্রভাব বোধ হয় পড়েছে মানুষের মাঝেও৷ চাঁদের সাথে প্রেমের এ সম্পর্ক বুঝাতেই হয়ত মাটিয়াস ক্লাউডিউস গেয়েছেন তাঁর বিখ্যাত গান ‘জেন্টলি দ্য মুন হেজ রাইজেন’ বা ‘ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে চাঁদ’৷ আবার পিঙ্ক ফ্লয়েডের কণ্ঠেও আমরা শুনেছি ‘দ্য ডার্ক সাইড অফ দ্য মুন’ অ্যালবামটির গান৷
পৌরাণিক কথা
বিশ্বখ্যাত অ্যামেরিকান সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন বলেছিলেন, ‘‘প্রতিটি মানুষই একটি চাঁদ, যার একটি অন্ধকার দিকও আছে৷ তবে এ অন্ধকার দিকটি সে কাউকে দেখাতে চায় না৷’’ আদিমকালে এক ধরনের পৌরাণিক কাহিনিও চালু ছিল যে কোনো কোনো মানুষ নাকি ভরা পূর্ণিমায় নেকড়েতে রূপান্তরিত হয়৷ বিখ্যাত একটি সিনেমাও আছে এ নিয়ে – ‘দ্য উল্ফ ম্যান’৷
চন্দ্রজয় ও রহস্যের অবসান
১৯৬৯ সালে চন্দ্রজয় মানব ইতিহাসের একটি মাইলফলক৷ এটি শুধু চন্দ্র জয়ই নয়, এর মধ্য দিয়ে মানুষ জয় করে চাঁদের সব গোপন রহস্য৷ এক সময় যার দিকে শুধু দৃষ্টি দিয়েই সৌন্দর্য উপভোগ করত মানুষ, সেই রহস্যময় ও সৌন্দর্য্যের আঁধার এবার চলে আসে হাতের মুঠোয়৷ উত্তর মেলে অনেক অজানা রহস্যের৷
সৃষ্টিশীলতায় অনুপ্রেরণা
চন্দ্রজয়ের মধ্যেই কি সব রহস্য উন্মোচিত হয়েছে? না, হয়নি৷ চাঁদ এখনো অজানা রহস্যের আঁধার৷ এ রহস্য প্রতিনিয়তই আমাদের অনুপ্রাণিত করছে৷ চীনা শিল্পী আই ওয়েওয়ে ও তাঁর ডেনিশ সহযোগী এলিয়াসন ২০১৩ সালে ‘মুন’ নামে ইন্টারনেটে একটি প্রজেক্ট চালু করেন, যেখানে চাঁদ-আকৃতির একটি বল বৃত্তকারে ঘুরছে৷ আগ্রহীরা নিজ নিজ ভাবনা ঐ বৃত্তটির ওপর লেখার পর, সেটা নাকি বৃত্তটির অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তির ভাবনার সাথে যুক্ত হয়৷