পোস্টকার্ডের দেড়শ বছর
পোস্টকার্ডের ব্যবহার এখন নেই বললেই চলে৷ দেড়শ বছরের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের পোস্ট কার্ড নিয়ে বার্লিনে চলছে একটি প্রদর্শনী৷ বিশ শতকে গোড়াপত্তন হওয়া কিছু কার্ড তুলে ধরা হলো ছবিঘরে৷
বিশ্বের প্রথম দাপ্তরিক পোস্টকার্ড
১৮৬৫ সালে খামের বদলে খোলা চিঠির প্রস্তাব দিলেন জার্মান ডাক বিভাগের প্রবর্তক হেইনরিচ ফন স্টিফান৷ যুক্তি দিলেন খোলা চিঠি খরচ কমাবে৷ কিন্তু গোপনীয়তা রক্ষা হবে না বলে প্রস্তাবটির বিপক্ষে দাঁড়ালেন অনেকে৷ ততদিনে যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় হয়ে উঠে খোলা চিঠি৷ তবে দাপ্তরিকভাবে পোস্টকার্ডের সূচনা করে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ানরা৷ ১৮৬৯ সালের ১ অক্টোবর পাঠানো কার্ডটিকে বলা হয় প্রথম দাপ্তরিক পোস্টকার্ড৷
পালে হাওয়া
সমালোচকদের নিন্দা মাথায় না নিয়ে, পোস্টকার্ডকে সাদরে সম্ভাষণ জানান সাধারণ জার্মানেরা৷ ১৮৭০ সালের ২৫ জুন বার্লিনে শুরু হয় পোস্টকার্ড বিক্রি৷ সেদিন ৪৫ হাজার পোস্টকার্ড কেনেন জার্মানেরা৷ ১৮৮৫ সালে পোস্টকার্ডে শুরু হয় ছবির ব্যবহার৷ ১৯০০ সালে এসে বাজিমাৎ করে নতুন এই মাধ্যমটি৷ ওই বছর জার্মান সাম্রাজ্য থেকে বিলিয়নের মতো পোস্টকার্ড পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন স্থানে৷
পোস্টকার্ডে অলঙ্করণ
১৯০৫ সালের পোস্ট কার্ড এটি৷ আঁকা নয়, বরং ব্যবহার করা হয়েছিল ক্যামেরায় তোলা ছবি৷ দেখা যায়, এক ডাকপিয়ন পোস্ট বক্সে চিঠি রাখছে৷ সঙ্গে আছে তাঁর প্রিয় বাহন সাইকেল৷ তবে হাতে আঁকা ছবিরও প্রচলন ছিল৷ এই প্রথা অনেককে উৎসাহী করে তুললো৷ অনেকেই পোস্টকার্ড অ্যালবামে রাখাও শুরু করেছিলেন৷
বদলের হাওয়া
১৮৯৯ সালে এই কার্ডটি পাঠানো হয় মিশর থেকে৷ বাষ্পচালিত নৌকা আর রেলপথ পেড়িয়ে এক সপ্তাহে কার্ড পৌঁছে যায় জার্মানির উত্তরের শহর শোয়ারিনে৷ পোস্টকার্ডে ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফাঁকা জায়গা রাখা হতো, যাতে চিঠি লেখার জায়গা থাকে৷ ১৯০৫ সালে এসে বার্তা লেখার জায়গা রাখা হয় বামদিকে আর ঠিকানার জন্য বেছে নেয়া হয় ডানদিককে৷
যুদ্ধের দামামা
‘‘আমরা জেনে গেছি, এই শতকে আর শান্তি আসছে না৷ ১৮৯৮ সালে দ্বিতীয় কায়সার ভিলহেমের নেতৃত্বে সামরিক কুচকাওয়াজ দেখার সুযোগ হয়েছিলো আমার৷ যা নিয়ে বাড়িতেও দু’কলম লেখা যায়৷’’,-কার্ডটির লেখক এভাবে লিখেছিলেন নিজের অনুভূতি৷ খোলা চিঠিতে আরো জানা যায়, সম্রাটের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি৷
ময়দান থেকে আসা খবর
১৯০৬ সালের এই পোস্টকার্ডে দেখা যায় চিঠি পেয়ে কতোটা উদ্বেলিত সেনারা৷ কার্ডটির সঙ্গে একটি ফর্মও যোগ করা হয়৷ যেখানে খুব দ্রুত স্বাস্থ্য, চাহিদা নিয়ে এক-দুই শব্দে লেখা যায়৷ ১৮৭০-৭১ সালে ফ্রাঙ্কো-জার্মান যুদ্ধেও খুব জনপ্রিয়তা পায় পোস্টকার্ড৷ প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় সেনারা প্রায় ১০ বিলিয়ন পোস্টকার্ড পাঠিয়েছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে৷
পোস্টকার্ডে দুর্ঘটনা
কোনো ঘটনার ছবি যেমন উঠে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, তেমনি পোস্টকার্ডেও ছাপা হতো নির্মম বা নাটকীয় ঘটনার ছবি৷ উদ্দেশ্য ছিল বাইরের মানুষকেও ওই ঘটনা সম্পর্কে জানানো৷ ১৯০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বার্লিনে এলিভেটেড রেলওয়ের ভয়াবহ দুর্ঘটনার ছবিটিকে ঠাঁই দেয়া হয়েছে এই পোস্টকার্ডে৷
পোস্টকার্ডে লোকগাঁথা
প্রুসিয়ান সামরিক কর্মকর্তার বেশে দাঁড়িয়ে আছেন ভিলহেম ফোকট৷ ক্যোপেনিকের পৌর কোষাগার থেকে অর্থ চুরি করতে একদল সেনা সদস্যকে রাজি করানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি৷ চুরির ঘটনায় নড়ে উঠে সম্রাটের মন৷ তাঁকে এতোটাই নাড়া দিয়েছিল যে, অপরাধীকে ক্ষমা করে দেন তিনি৷ লোকগাঁথায় ‘দ্য ক্যাপ্টেন অব ক্যোপেনিক’ বনে গেলেন নায়ক৷ এ গল্প নিয়েই এই পোস্ট কার্ড৷