পোল্যান্ড সীমান্তে বাংলাদেশিদের সহায়তায় দূতাবাস, প্রবাসীরা
যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ইউক্রেন থেকে প্রায় তিন থেকে পাঁচশ বাংলাদেশি মেডিকা সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে ঢুকেছেন৷ মঙ্গলবার বাংলাদেশিদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করে পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস৷ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশিও এগিয়ে এসেছেন৷
সাড়ে ছয় লাখের বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছে
যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ইউক্রেনের মানুষ দেশ ছাড়ছে৷ তাদের বেশিরভাগই পোল্যান্ডে ঢুকছেন৷ পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তের সবচেয়ে ব্যস্ত ক্রসিং হচ্ছে মেডিকা৷ এই সীমান্ত দিয়ে ইউক্রেনের নাগরিক ছাড়াও ইউক্রেনে বাস করা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশের নাগরিক পোল্যান্ডে ঢুকছেন৷
বাসের ব্যবস্থা
মেডিকা সীমান্তে আসা বাংলাদেশিদের জন্য মঙ্গলবার বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ দূতাবাস৷ বাসটি আজ বুধবার পর্যন্ত সেখানেই থাকার কথা৷ সীমান্ত পেরিয়ে আসা বাংলাদেশিরা বাসটিতে বিশ্রাম ও আশ্রয় নিতে পারছেন৷ সেখানে তাদের খাবারসহ বিভিন্ন কিছু সরবরাহ করা হচ্ছে৷
হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ
বাংলাদেশিদের দেখাশোনা করতে মেডিকায় উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা অনির্বাণ নিয়োগী (বামে)৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি মঙ্গলবার জানান, ‘‘আমাদের কয়েকটা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ আছে৷ হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগতভাবে সবাই আমাকে জানাচ্ছেন৷ মোবাইলে যখনই আমরা তথ্য পাচ্ছি, কারো সহায়তা দরকার, সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিজেরাই সেখানে যাচ্ছি বা রিসোর্স মোবিলাইজ করছি৷’’
প্রবাসীরাও এগিয়ে এসেছেন
পোল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশিরাও স্বদেশিদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন৷ যেমন হামিম নামের এক ব্যক্তি ডয়চে ভেলেকে মঙ্গলবার জানান, তিনি চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে ৬০০ কিলোমিটার দূর থেকে খাবার, পানি নিয়ে এসেছেন৷ ইউক্রেন থেকে আসা বাংলাদেশিরা যেন বুঝতে পারেন সেজন্য তিনি পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন৷ মানবিক ও নৈতিক কারণে তিনি সেখানে গিয়েছেন বলে জানান৷ দূতাবাস ওয়ারশোতে বাংলাদেশিদের থাকার ব্যবস্থা করেছে বলে জানান হামিম৷
বাংলাদেশিদের আশ্রয় দান
পোল্যান্ডে বাস করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মঙ্গলবার জানান, পোল্যান্ডে বাস করা বাংলাদেশিরা ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে যাওয়া ২৫ থেকে ৩০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছেন৷ নিজের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়ে মেডিকায় গিয়েছেন মেহেদী৷ ইউক্রেন থেকে আসা বাংলাদেশিদের পোল্যান্ড সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন তিনি৷
রেলস্টেশনে আশ্রয়
মেডিকা সীমান্তের পশ্চিমে অবস্থিত একটি শহর শেমিসেল৷ সেখানকার রেলস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক শরণার্থী৷ তাদের বিস্কুট, পানি, মিষ্টি জাতীয় খাবার ছাড়াও গরম খাবার ও অন্যান্য খাবার দিয়ে সহায়তা করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা৷ শরণার্থীরা যেন বিশ্রাম নিতে পারেন সেজন্য কিছু বিছানারও ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
দীর্ঘপথ হাঁটা
সীমান্ত পার হওয়ার পথে দীর্ঘ যানজটের কারণে শরণার্থীদের অনেকটা পথ হেঁটে পার হতে হয়েছে৷ প্রায় ৩৫-৪০ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়েছে বলে ডয়চে ভেলে বাংলার প্রতিবেদক আরাফাতুল ইসলামকে জানিয়েছেন কয়েকজন বাংলাদেশি৷ এদের একজন মুজাহিদুল এতটা পথ হাঁটতে গিয়ে তার পায়ে ফোসকা পড়ার বিষয়টি দেখিয়েছেন৷
ওয়ারশোতে যুদ্ধের প্রভাব
পোল্যান্ডের রাজধানীতে থাকেন পার্থ প্রতীম মজুমদার৷ তিনি বলছেন, ‘‘ওয়ারশোর বাসিন্দারা ইউক্রেনীয়দের প্রতি সহানুভূতিশীল৷ যুদ্ধের প্রতিবাদে সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে৷ অনেকে শরণার্থীদের জন্য রিলিফ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন৷’’ তবে অল্প সংখ্যক ওয়ারশোবাসী ইউক্রেন যুদ্ধ পোল্যান্ডেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে অতিরিক্ত খাবার জোগাড় করে রাখছেন, এটিএম থেকে টাকা তুলে রাখছেন বলেও জানান পার্থ৷