1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পৃথিবীতে বেড়ে যাচ্ছে বাতাস, বিপদের হাতছানি

৩ এপ্রিল ২০১১

বিশাল বিপদের হাতছানি দিচ্ছে বাতাস! কথাটা শুনে অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন বাতাস আবার কী করে বিপদ বয়ে আনছে? কিন্তু এ কথাই সত্যি – জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷

https://p.dw.com/p/10mcU
পৃথিবীতে বাতাস বাড়ছেছবি: AP

পৃথিবীতে বাতাস বেড়ে যাচ্ছে৷ আর এই বাড়তি বাতাসের অবস্থান এখন মহাসাগরগুলোর উপরে৷ নতুন একটি গবেষণায় এমন গুরুত্বপূর্ণ অথচ ভীত হবার মতোই বিষয়টিই তুলে ধরেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা৷ তাঁরা নানা তথ্য উপাত্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেখতে পেয়েছেন, সাগরের উপরের সবচেয়ে উচ্চ স্তরের বাতাসের পরিমাণ বেড়েছে গত ২৩ বছরে সবচেয়ে বেশি৷

কিন্তু কী কারণে বেড়ে গেলো বাতাসের পরিমাণ? প্রশ্নের সঠিক উত্তরটা কি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন? না, এ কথা সরাসরি বলছেন না তারা৷ হতে পারে এটা নিছকই প্রকৃতির খেয়াল৷ আর প্রাকৃতিক ভাবেই দীর্ঘ দিন ধরে সেখানে জমা হয়ে নিজেদের শক্তি বাড়াচ্ছে এটি – এমনটাও বলছেন বিজ্ঞানীরা৷ সঠিক কারণ অনুসন্ধানে উঠে পড়ে লেগেছেন তারা৷

কিন্তু কথা হলো এই বাতাস বৃদ্ধির এখনকার হারটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে বিপদ এই বিশ্ববাসীর জন্য৷ সমুদ্রে বাতাসের এই ঘূর্ণমান গতির কারণে জন্ম নেবে অনেক ঘূর্ণিঝড়৷ আর হ্যারিকেন নামক এই সব ঝড় হবে প্রচণ্ড শক্তি সম্পন্ন৷ এক কথায় মহাশক্তিধর হয়ে এ ঝড় যেখানে আঘাত হানবে, সেখানেই হবে ধ্বংসলীলা৷ আর এগুলো এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে লণ্ডভণ্ড করে দেবে অনেক জনপদ৷

Frances auf dem Weg nach Florida
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার উপকূলে হারিকেন বা ঘূর্ণিঝড়ছবি: AP/NASA

বিজ্ঞান ভিত্তিক সাময়িকী সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় এই গবেষণা প্রতিবেদনটি৷ অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া বিষয়ক গবেষক ইয়ান ইয়ং এবং তাঁর সহকর্মীরা বেশ কয়েক বছর ধরে এই গবেষণাটি করছিলেন৷ শেষ পর্যায়ে এসে তারা তাদের খুঁজে পাওয়া তথ্য পৃথিবীবাসীর সামনে উপস্থাপন করলেন৷ বললেন, আমরা সমুদ্রের আকাশে এই বাতাসের অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছি৷ আর এটা অবশ্যই নীচের দিকে নেমে আসবে৷ তিনি জানান, আমরা এই বিষয়টি লক্ষ্য করছি পুরো বিশ্বব্যাপী, তা উত্তর গোলার্ধ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধ পর্যন্ত, সর্বত্র৷ আর এটার অবস্থান যে দীর্ঘ মেয়াদী, তাও আমরা বুঝতে পারছি৷ আর এই বাতাসের কারণে সাগরে ঢেউ এর পরিমাণও যে বেড়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷

Symbolbild Grafik Seebeben Tsunami Erdbeben Flutkatastrophe
বাড়বে ঢেউ’এর উচ্চতাছবি: AP

কেবল ঢেউ এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া নয়, একই সঙ্গে বেড়ে যাবে ঢেউ-এর উচ্চতাও৷ এর কিছু উদাহরণও বিজ্ঞানীদের দেখেছেন বলেই জানা গেলো৷ সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা আরেকটি কারণে বিজ্ঞানীদের নজরে সব সময় থাকছে, কারণ, এর সঙ্গে উষ্ণতা এবং নানা ধরণের গ্যাসের অস্তিত্ব বুঝতে সহায়তা করে৷

গবেষকরা এই কাজের জন্য সাতটি মহাসাগরের ১৯৮৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আকাশ বাতাসের সমস্ত ডাটা-উপাত্ত পরীক্ষা করেছেন৷ এরপর তাঁরা পাঁচটি ভিন্ন ধরণের পরীক্ষার মাধ্যমে পুরো বিষয়টি নিরীক্ষা করেছেন৷ সবগুলো পরীক্ষার একই ফলাফল এসেছে৷ আর মাঠ পর্যায়ে তো তারা নেমেইছিলেন৷ সব মিলিয়ে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, পৃথিবীতে বাতাসের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে৷

বিজ্ঞানী বলছেন, গত দুই শতকে সমুদ্রে বাতাসের পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি৷ কিন্তু চলতি শতাব্দীতে ঘটছে এর বিপরীত ঘটনা৷ ফি বছর দ্রুতগামী বাতাসের পরিমাণটা বাড়ছে দশমিক ৫০ শতাংশ হারে৷ আর সমুদ্রে বড় ঢেউ এর পরিমাণ বেড়েছে দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে দশমিক ৫০ শতাংশ হারে৷ এই দুই বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি হচ্ছে দুই উত্তর আর দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের কাছে৷

তবে কেবল ঝড়-জলোচ্ছ্বাস নয়, পৃথিবীর বাতাস বেড়ে গেলে অন্যতম সমস্যা হবে প্রাণিকূলের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের৷ তাছাড়া বাতাসে যদি বেড়ে যায় কার্বন ডাই অক্সাইড, তাহলে এক সময় পৃথিবীর খাতা থেকে হয়তো কিছু নাম মুছে যাবে, তার বদলে, কয়েক লাখ বছর বাদে যোগ হবে নতুন কিছু নাম৷ আর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বলে দাবিদার মানুষের নাম মুছে যাওয়াও তেমন অসম্ভব নয়!

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন