পৃথিবীকে বাঁচাতে কম কাজ করুন
সবসময় বলা হয়, পৃথিবীকে বাঁচাতে সম্পদের ভোগ সীমিত করুন৷ এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করুন৷ কিন্তু কখনো কি বলা হয়, কাজ কম করুন? সত্যি বলতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ তাহলে কি ভবিষ্যতের পৃথিবী এমনই হবে?
সপ্তাহে মাত্র নয় ঘণ্টা
জার্মান গবেষক ফিলিপ ফ্রে গত বছর প্রস্তাব করেছিলেন, ইউরোপীয়দের সপ্তাহে নয় ঘণ্টার বেশি কাজ করা উচিত নয়৷ তিনি বলেন, যত বেশি মানুষ কাজ করবে তত বেশি কার্বন নিঃসরণ হবে৷ যেমন, সপ্তাহান্তে সবসময় কার্বন নিঃসরণ কম হয়৷ কারণ তখন শিল্প উৎপাদন বন্ধ থাকে বা কম হয়, ফলে কার্বন খরচও কম হয়৷
শুধু শিল্প উৎপাদনেই নয়
শুধু যে শিল্প উৎপাদনের কারণে কার্বন খরচ হচ্ছে তা কিন্তু নয়৷ সাধারণ অফিস আদালত চালাতেও কার্বন খরচ হয়৷ মানুষের যাতায়াতেও প্রচুর কার্বন খরচ হচ্ছে৷ এমনকি দেখা গেছে, যখন মানুষ কাজের চাপে থাকেন, তখন ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি ব্যবহার করেন৷
উৎপাদন কেন বেশি করছি?
সবাই বলে ভোগের পরিমাণ কমাতে৷ কিন্তু কেউ বলে না উৎপাদন কমাতে৷ এ প্রশ্ন ফ্রে-র৷ তিনি বলেন, এত উৎপাদন আমরা কেন করছি, যা পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর?
কাজের মূল্য
বিশ্লেষকরা মনে করেন, পৃথিবীর অনেক কাজ আছে যেগুলো না হলেও চলে৷ আবার অনেক কাজ আছে, যেগুলোর মূল্য নেই৷ জাতিসংঘের মতে, পৃথিবীর ৪১ ভাগ কাজের কোনো পয়সা দেয়া হয় না৷
উৎপাদনকেন্দ্রিক অর্থনীতি
স্প্যানিশ গবেষক মার্গারিটা মেডিয়াভিয়ার মতে, লাভ ও উৎপাদনকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে আমরা শুধু পণ্য ও বর্জ্য তৈরি করেই যাচ্ছি৷ অথচ মানুষ ও পরিবেশের পুষ্টি উপাদানগুলোতে গুরুত্ব দিচ্ছি না৷ তিনি মনে করেন, এতে ধংস অনিবার্য৷ কোভিড-১৯ তেমনই এক অতি উৎপাদন ও অতি ভোগের ফল৷
সর্বনিম্ন সার্বজনীন আয়
সমস্যা উত্তরনে সম্প্রতি সর্বনিম্ন সার্বজনীন আয়ের বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে৷ অর্থাৎ একটি জনগোষ্ঠীর কম আয়ের লোকেরা সরকারের কাছ থেকে একটা নির্দিষ্ট অর্থ পাবেন৷ তখন তারা যদি মনে করেন, কোনো কাজ তার নিজের বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, তবে তিনি তা বাধ্য হয়ে গ্রহণ করবেন না৷
সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা
গত বছর ইউরোপীয়দের সপ্তাহে নয় ঘণ্টা কাজ করার আহ্বান জানালেও ফিলিপ ফ্রে সব হিসেব নিকেষ করে এখন বলছেন, কর্মঘণ্টা কমালে হয়তো কার্বন নিঃসরণ অনেক কমে যাবে৷ কিন্তু বিষয়টা এত সরলভাবে হবে না৷ তার মতে, উৎপাদন বা কাজের পদ্ধতি সব ঢেলে সাজিয়ে সপ্তাহে ২০ থেকে ২৪ ঘণ্টা কাজ করা যেতে পারে৷