1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুলিশকে চাঁদা দিয়ে ঢাকায় অবৈধ যানবাহন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ আগস্ট ২০১৯

অবৈধ যানবাহন নিয়ে কথা হলেও তা বন্ধের উদ্যোগ কার্যকর হয় না৷ এই অবৈধ যানবাহন ঘিরে আছে অবৈধ আয়ের বিশাল একটি চক্র৷ অভিযোগ এই চক্রে পুলিশ, পরিবহণ নেতা, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে আরো অনেক ক্ষমতাবান জড়িত৷

https://p.dw.com/p/3Ogu1
ছবি: bdnews24/A. Al Momin

গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে লেগুনা(হিউম্যান হলার) চলবে না৷ কিন্তু তার এই ঘোষণা কার্যকর হয়নি৷ এর কারণ প্রধান সড়কে পুলিশের স্লিপ নিয়েই চলাচল করে লেগুনা৷ এই লেগুনার নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ৷ তারা প্রধান সড়কে চলাচলের রুট পারমিট দেয় না, ঢাকার ভিতরের সড়কগুলোতে চলাচলের অনুমতি দেয়৷ নিবন্ধন পাওয়া লেগুনার সংখ্যা পাঁচ হাজার৷ কিন্তু ঢাকা এবং আশপাশে চলাচল করে প্রায় ৩০ হাজারের মত লেগুনা৷ শুধু প্রধান সড়কেই নয়, ঢাকার আশপাশের মহাসড়কেও চলাচল করে৷
বিআরটিএর হিসাবে সারাদেশে বাস , মিনিবাস, প্রাইভেটকার, হিউম্যান হলার ও মোটর বাইকসহ নিবন্ধিত যানবাহন ৪০ লাখ৷ এরমধ্যে চার লাখ যানবাহনের কোনো ফিটনেস নাই বলে জানায় তারা৷ বিআরটিএর রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই- রব্বানী জানান, ‘‘আমাদের কাছে অবৈধ যানবাহনের হিসাব নেই৷ নিবন্ধিত যানবাহনের অবৈধতার হিসাব আছে৷ দেশে এখন অনেক যানবাহন আছে যার নিবন্ধনই নেই৷ ভুয়া নাম্বার প্লেট লাগিয়ে অনেক যানবাহন চলাচল করে৷''
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী ফিটনেসবিহীন যানবাহনসহ সারা বাংলাদেশে অবৈধ যানবাহন ১৫ লাখেরও বেশি৷  এরমধ্যে বাস মিনিবাস যেমন আছে৷ তেমনি ছোট এবং হালকা যানবাহনও আছে৷ তবে অযান্ত্রিক যানবাহনের হিসাব ধরলে এটা অনেক, প্রায় ৫০ লাখ৷ ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক অযান্ত্রিক যানবাহনের মধ্যে পড়ে৷

‘পুলিশের সাথে চুক্তির মাধ্যমে চলাচলকারী অবৈধ যানবাহন সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া’

ঢাকায় যারা লেগুনা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের সাথে চুক্তি করেই লেগুনা চালানো হয়৷ একটি লেগুনা সাধারণভাবে কথিত রুট পারমিটের জন্য পুলিশকে এক হাজার টাকা দেয় মাসে৷ এর বাইরে স্টপেজ চাঁদা এবং অনস্পট চাঁদা দিতে হয়৷ ঢাকাসহ সারাদেশে প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশার নামেও চলছে অবৈধ বাণিজ্য৷ বিআরটিএ এপর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার প্রাইভেট অটোরিকশার লাইসেন্স দিয়েছে৷ এগুলো ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য নয়৷ কিন্তু ঢাকায় পুলিশের সাথে চুক্তি করে এইসব প্রাইভেট অটোরিকশা বাণিজ্যিকভাবে চলছে৷ এই চুক্তি হয় মূলত ট্রাফিক সার্জেন্টদের মাধ্যমে৷ আর মালিকদের মধ্যে পুলিশ সদস্যরাও রয়েছেন৷ গত বছর এই প্রাইভেট অটোরিকশার বাণিজ্যিক চলাচল বন্ধের চেষ্টা করেও তা সফল হয়নি৷
বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানাগেছে অবৈধ যানবাহন তিন পর্যায়ে চাঁদা দিয়ে সড়কে চলাচল করে৷ প্রথমত: তারা ঢাকাসহ সারাদেশে পুলিশকে চুক্তির মাধ্যমে মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমান চাঁদা দেয়৷ দ্বিতীয়ত: পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনকে চাঁদা দেয় এবং তৃতীয়ত তারা স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা দেয়৷ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশের সাথে চুক্তির মাধ্যমে চলাচলকারী অবৈধ যানবাহন সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া৷ তারা কাউকে মানেনা৷ আর একারণে সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়ে যায়৷ তারা ভাড়ার ক্ষেত্রেও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে৷ ঢাকায় একটি বাস থেকে দিনে গড়ে চাঁদা ওঠে দুই হাজার টাকা৷ লেগুনা ও সিএনজি অটোরিকশা থেকে সাতশ টাকা৷’’

‘ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই-তিন হাজার গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়’

তিনি আরো জানান, ‘‘অবৈধ যানবাহনের মাধ্যমে কোনো অপরাধ হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়াও কঠিন হয়ে পড়ে৷’’
বিআরটিএর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী দাবী করেন, ‘‘অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব বিআরটিএর নয়, দায়িত্ব পুলিশের৷ বিআরাটিএ শুধু যেসব যানবাহনের লাইসেন্স দেয় সেগুলোর ব্যাপারেই ব্যবস্থা নিতে পারে৷''
পুলিশ তাদের এই দায়িত্বের কথা অস্বীকার করে না৷ তারা বলছেন তারা অব্যাহতভাবে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘আমরাতো ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই-তিন হাজার গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ মাসে মামলা হয় এক লাখ৷ যানবাহনকে আইনের মধ্যে রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷'' অবৈধ যানবাহন চলাচলে পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘যারা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশের ডেপুটি কমিশনারদের কাছে অভিযোগ করুন৷ অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''
এদিকে গত জুন মাসে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা শহর থেকে অবৈধ যানবাহন অপসারণের জন্য একটি কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছিলেন৷ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে৷ দুই মাসের মধ্যে ওই কমিটির অবৈধ যানবাহন চিহ্নিত করার কথা৷ কিন্তু সেই কাজ কতটুকু হয়েছে জানাতে পারেনি ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষ৷