1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পিয়নও দাম না দেয়ায় এমপির দুঃখ এবং বাস্তবতা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ জানুয়ারি ২০২২

ময়মনসিংহ-৩ আসনে সরকার দলীয় এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদের সংসদে দেয়া বক্তব্য এখন তুমুল আলোচনায়৷ তিনি তার ক্ষোভের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘পিয়ন পর্যন্ত আজকে আমাদের দাম দেয় না৷''

https://p.dw.com/p/45hfp
ছবি: bdnews24.com

তিনি তার নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার নানা উন্নয়ন কাজে অগ্রগতি ও বরাদ্দ না পাওয়ায় সোমবার সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘এমপির মূল্য নাই সচিবের কাছে৷ জাতীয় সংসদের একজন এমপি হিসেবে সচিবের কাছে গেলে এমপির কোনো মূল্যায়ন নাই৷ তারা যে আমাদের শ্রদ্ধা করবে সেই শ্রদ্ধাবোধ নাই৷''

সংসদের ওই বক্তব্য নিয়ে তিনি মঙ্গলবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পিয়নও দাম দেয় না এই পরিস্থিতির কেন সৃষ্টি হলো আমি বলতে পারব না৷ তারা যদি মূল্যায়ন না করে তার কী কারণ তা আমি বলতে পারব না৷ তবে পিয়নদের কথা একটা কথার কথা৷ তাদের তো ১০ টাকা দিলেই দৌড় দেয়৷ আমরা সচিবের কাছে একটা ডিও লেটার নিয়ে  গেলে উনি পাঠিয়ে দেন নিচে৷ তারপর আর কোনো খবর থাকে না৷ কেনো ফলোআপ থাকে না৷  তিনি একটা ফোন করেও যদি জানান কাজটা হবে কী হবে না তাহলে তো কোনো সমস্যা থাকে না৷ আর ডিসি এসপিদের কাছেও কোনো কাজ পাঠালে দেব দিচ্ছি করে ঘুরায়৷ তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  এবং ওসিদের নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না৷''

আমলাতন্ত্র  এখন জেঁকে বসেছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আইয়ুব খান যখন ক্ষমতায় আসেন তখন ৩০৩ জন আমলাকে চাকরিচ্যুত করেন৷ একেক সময় একেক রকম হয়৷ তবে পরিকল্পনা মন্ত্রী তো আগে বলেছেন ফেরাউনের আমলেও আমলাতন্ত্র ছিলো৷ কিন্তু আমাদের তো জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়৷ তাই আমরা আমাদের কাজ যাতে করতে পারি তার নিশ্চয়তা প্রয়োজন৷''

জাতীয় পার্টির এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী মনে করেন, ‘‘পরিস্থিতি এতটা খারাপ না৷ এমপি এবং আমলাদের কাজের একটা সীমারেখা আছে৷ তবে মন্ত্রীরা সবসময়ই এমপিদের নানা চাওয়া পাওয়া ও  এলাকার দাবি দাওয়া মেটাতেন৷ এতে একটা ভারসাম্য রক্ষা হতো৷ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মনে হচ্ছে মন্ত্রীরা সেটা পারছেন না আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে৷''

তারা কথা, ‘‘আমলারা টেকনিক্যাল অনেক বিষয় ভালো বুঝবেন৷ কিন্তু দেশের স্বার্থ জনগণের চাওয়া পাওয়া রাজনীতিবিদদের চেয়ে কেউ ভালো বুঝবেন না৷''

বিএনপির এমপি হারুন অর রশীদ অবশ্য বলেন ভিন্ন কথা৷ তার মতে, ‘‘বর্তমান সরকার আমলা এবং প্রশাসন নির্ভর৷ তারাই ভোটে কারচুপি করে তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে৷ তারা মনে করে সরকারকে তারাই ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে৷ ফলে তারা এমপি এবং জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন মনে করে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘সরকারি দলের এমপিদেরই গুরুত্ব নেই, তাহলে বিএনপি বা বিরোধী দলের এমপিদের কী অবস্থা বুঝতেই পারছেন৷ আমরা আসলে খুব প্রয়োজন না পড়লে তাদের সাথে যোগাযোগ করি না৷ এমপি হিসেকে আমি আইন-শৃঙ্খলা কমিটি, উন্নয়ন কমিটির উপদেষ্টা৷ কিন্তু এসপিরা তো ওই কমিটির বৈঠকেই আসনে না৷''

সাবেক তথ্যমন্ত্রী এবং জাসদের এমপি হাসানুল হক ইনু  মনে করেন, যে যার সীমানার মধ্যে থাকলে এই সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷ এমপি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কী কাজ তা আইন দিয়ে নির্ধারণ করা আছে৷ আর এমপিরা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সচিবদের উপরে৷''

তিনি বলেন, ‘‘কিছু এমপি যারা এই ধরনের কথা বলেন তাদেরও সমস্যা আছে৷ তারা যে ডিও লেটারের কথা বলেন সেই ডিও লেটার অনুযায়ী প্রশাসন কাজ করতে বাধ্য নয়৷ যদি আইন ও নিয়মের মধ্যে পড়ে তাহলে করতে পারেন৷''

তিনি জানান, একজন এমপি তার মেয়াদকালে তার পছন্দে সর্বোচচ ২০ কোটি টাকা উন্নয়নে খরচ করতে পারেন৷ কিন্তু সেটা তিনি নিজে খরচ করতে পারবেন না৷ তিনি প্রজেক্ট দেবেন প্রকল্প কর্মকর্তারা নিয়ম অনুয়ায়ী তা বাস্তবায়ন করবেন৷''

তিনি অভিযোগ করেন, কিছু এমপি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানের উন্নয়ন খাত দখল করেন৷ এটা কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে না৷ স্থানীয় পর্যায়ে এইধরনের কাজ জটিলতার সৃষ্টি করে৷

তার কথা,নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হলেন জনগণের প্রতিনিধি৷ আর সরকারি কর্মকর্তারা হলেন প্রজাতন্ত্রের বেতনভুক্ত  কর্মচারী৷ যার যার কাজের সীমানা আইন দিয়ে নির্ধারিত৷

এর আগে  প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদও সংসদে আমলাতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন৷ গত জুনে তিনি সংসদে বলেন, ‘‘সংসদ সদস্যদের স্থান সচিবদের ওপরে৷ এটা খেয়াল রাখতে হবে৷''

আর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ডিসি সম্মেলনে কথা বলার পর মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে ওঠা গেলে প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ হবে৷''

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘‘আমার বিবেচনায় এখন সংসদ সদস্যদের প্রভাব প্রতিপত্তি তো আগের চেয়ে বেশি৷ তবে এখন মর্যাদা কমেছে বলে অনেকেই মনে করেন৷ আগে মর্যাদা বেশি ছিলো৷ তখন তারা ভোটে নির্বাচিত হতেন৷ তবে দুর্ভাগ্যজকভাবে  গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোট বিতর্কিত হয়েছে৷ যা তাদের মর্যাদা কমিয়ে দিয়েছে৷ মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসতে হবে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ওনারা আইন প্রণেতা৷ তারা প্রশাসনের কাজ দেখবেন না তা নয়৷ কিন্তু সবাই নয়, কেউ কেউ প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ করেন৷ প্রভাব বিস্তার করেন৷ এটা তো তারা পারেন না৷''