পিনা বাউশ-এর নট্ট কোম্পানি
ভুপারটাল-এর ‘ডান্স থিয়েটার’-এর প্রবাদপ্রতিম কোরিওগ্রাফ বা নৃত্যপরিচালক ছিলেন পিনা বাউশ, যিনি ব্যালে নাচের দুনিয়ায় বিপ্লব এনেছিলেন৷ পিনার মৃত্যুর ছ’বছর পরে তাঁর নাচের দল নতুন প্রোগ্রাম দেখাতে চলেছে৷
নাচের কোম্পানিতে নবসূচনা
২০১৫ সালের হেমন্তে পিনা বাউশ-এর ডান্স থিয়েটার আবার নতুন নাচ পরিবেশন করতে চলেছে, একটি তিন অঙ্কের নৃত্যসন্ধ্যায়৷
ব্যালে নাচে বিপ্লব
গোড়ায় কেউ ভাবতেও পারত না যে, নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মফস্বল শহর ভুপারটাল-এর নট্ট কোম্পানি একদিন বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠবে৷ নর্তকী তথা নৃত্যপরিচালক পিনা বাউশ এমন একটি নৃত্যশৈলী রচনা করেন, যা এর আগে কেউ দেখেনি অথবা দেখায়নি৷ সেখান থেকেই আধুনিক নৃত্যজগতে যেন একটা জোয়ার, যেন একটা বিপ্লব আসে৷
অভিব্যক্তিই সব
পিনা বাউশ শুধুমাত্র সেই সব নর্তক-নর্তকীকে দলে নিতেন, যাদের মধ্যে – পিনার চোখে – অসাধারণ কিছু ছিল৷ ১৯৭৩ সালে তিনি ভুপারটালের নাচের দলটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা সারা বিশ্বে তাদের অভিব্যক্তিপূর্ণ নাচের জন্য বিখ্যাত হয়েওঠে৷ সব নাচিয়ের পক্ষে পিনার নাচ নাচা সম্ভব ছিল না, কেননা এগুলো রচনা করা হয়েছিল বিশেষ বিশেষ নর্তক-নর্তকীর ব্যক্তিত্বের কথা মনে রেখে৷
নাচ না দুঃস্বপ্ন?
পিনা বাউশ-এর নাচ দেখে সত্তরের দশকের দর্শকরা ক্ষেপে যেতেন৷ ঐ ধরনের পরীক্ষামূলক, দুর্বোধ্য নৃত্যশৈলীতে তারা অভ্যস্থ ছিলেন না৷ ভুপারটালের প্রথম কয়েকটি অনুষ্ঠান থেকে দর্শকরা রেগেমেগে প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে৷ অভিযোগ করে চিঠি এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে৷
নৃত্যের তালে তালে
পিনা বাউশ-এর নর্তক-নর্তকীরা শুধু নাচেন না, তারা দৌড়ন, কথা বলেন, গান গান, কাঁদেন হাসেন, আবার সেই অতি জটিল কোরিএগ্রাফিটির প্রতিটি খুঁটিনাটি ফুটিয়ে তোলেন৷ এ যেন নাচের এক সম্পূর্ণ নতুন সংজ্ঞা৷ বিশ্বের অন্যত্র দর্শকদের প্রশ্ন হলো: এরা কি অভিনেতা, না গায়ক, না নর্তক-নর্তকী?
এক মন, এক প্রাণ
পিনা বাউশ-এর নাচের দলে যিনি একবার যোগ দিতেন, তিনি অনেকদিন থাকতেন, কখনো-সখনো সারা জীবন ধরে৷ ফলে ভুপারটালের ড্যান্স থিয়েটার একটা অনন্য প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে, যার আজ অবধি বিশ্বে জুড়ি মেলা ভার৷ ২০০৯ সালের ৩০শে জুন পিনার মৃত্যুর পরেও তাঁরা পিনার সৃষ্ট নৃত্যনাট্যগুলিই নেচে চলেছেন৷
পিনা যাবার পর
পিনা যাবার পর তাঁর নাচের দল চালানোর ভার নেন নর্তক দমিনিক মার্সি এবং নাট্যপরিচালক রব্যার্ট স্টুর্ম৷ মার্সি হলেন পিনার নাচের দলের প্রবীণতম সদস্য৷ তাঁর লক্ষ্য হলো, পিনা বাউশ-এর ঐতিহ্য যতদিন সম্ভব বাঁচিয়ে রাখা৷ তাঁর ৩৬ বছরের কর্মকালে পিনা ৪৬টি নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি আজ ‘ক্ল্যাসিক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ছবিতে ভিম ভেন্ডার-এর জীবনীচিত্র ‘পিনা’-তে নাচছেন দমিনিক মার্সি৷
কপিরাইট: পিনা বাউশ
পিনার সৃষ্ট কোরিওগ্রাফিগুলির কপিরাইট সংরক্ষিত৷ শুধুমাত্র ভুপারটালের নাচের কোম্পানিই এগুলি মঞ্চস্থ করতে পারে, যে কারণে অতীতে এই কোম্পানিকে সারা বিশ্বে ‘নেচে’ বেড়াতে হয়েছে! দলের প্রায় চল্লিশটি কোরিওগ্রাফি আছে৷ ‘কনটাক্টহোফ’ বা ‘আলাপের জায়গা’ নাচটিও তার মধ্যে পড়ে৷ ২০১৩ সাল অবধি সে নাচের কোনো রদবদল করা চলত না৷
পিনা যেমন চাইতেন
পিনার নাচের দল ভবিষ্যতে বিভিন্ন কোরিওগ্রাফের সঙ্গে কাজ করবে, কোনো একজন নৃত্য পরিচালকের সঙ্গে নয়, কেননা ‘‘পিনাকে দ্বিতীয়বার পাওয়া যাবে না’’৷ পিনা যেরকম চাইতেন, ঠিক সেইভাবেই তাঁর দলের ৩৫ জন সদস্যের সকলকে রাখার চেষ্টা করা হবে৷