1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পায়ে হেঁটে গোটা ব্রিটেন ঘুরে ছবি তুলেছেন ফটোগ্রাফার

২৬ মার্চ ২০২১

দ্রুতগামী পরিবহণের এই যুগে পায়ে হেঁটে আর ক'জন বেড়ায়৷ এক ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পায়ে হেঁটে গোটা দেশ চষে বেড়িয়েছেন৷ বিপদ-আপদ সত্ত্বেও প্রকৃতি ও মানুষ সম্পর্কে অসাধারণ উপলব্ধি হয়েছে তাঁর৷

https://p.dw.com/p/3rDB3
ছবি: DW

ইংল্যান্ডের দক্ষিণে ইস্টবোর্নের কাছে উপকূলবর্তী এলাকা চক বা খড়িপাথরের খাড়া টিলার কারণে বিখ্যাত৷ সমুদ্রের উপর মাথা উঁচু করে রয়েছে সেই টিলা৷

কুইন্টিন লেক এই পথও ভালই চেনেন৷ হাইকার ও ফটোগ্রাফার হিসেবে তিনি পায়ে হেঁটে গোটা দ্বীপ প্রদক্ষিণ করে ‘পেরিমিটার' নামের দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন৷ নিজের কাজের পদ্ধতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘‘কোনো ধরনের যান ব্যবহার না করাই আমার নিয়ম৷ বন্দরে হেঁটে বেড়ানোর সময় নৌকায় চড়া চলবে না৷ বেশিরভাগ সময়ে তাঁবুর মধ্যেই ঘুমাই৷ পাঁচ দিন ধরে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে থাকি৷ ক্যামেরার জন্য ব্যাটারি এবং পাঁচ দিনের খাবার ও জ্বালানি থাকলেই চলে৷ পাঁচ দিন পর পর কোথাও বিছানার সন্ধান করে আবার রসদের ব্যবস্থা করি৷''

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল৷ লন্ডন থেকে হাঁটা দিয়ে তিনি টেমস নদীর মোহনা ছুঁয়ে ব্রিটেনের উপকূল ধরে এগিয়ে গিয়েছিলেন৷ ঘড়ির কাঁটার দিক অনুযায়ী চলে তিনি ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ড পৌঁছে যান৷

পায়ে হেঁটে দেশ দেখলেন কুইন্টিন লেক

প্রায় পাঁচ বছরের সময়কালে তিনি এভাবে বার বার বেরিয়ে পড়েছেন এবং দুই থেকে নয় সপ্তাহ ধরে এক একটি এলাকায় ট্রেকিং করেছেন৷ ল্যান্ডস্কেপ ও স্থাপত্যের ফটোগ্রাফার হিসেবে তিনি একাধিক পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন৷ এখনো পর্যন্ত এটাই তাঁর সবচেয়ে বড় প্রকল্প৷

সব রকম আবওয়া ও সব ঋতুতেই কুইন্টিন লেক প্রকৃতির চরম রূপ উপেক্ষা করে হেঁটে বেড়িয়েছেন৷ কখনো কখনো বিপদেও পড়েছেন তিনি৷ এমনই এক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘ইয়র্কশায়ারে হোল্ডারনেস টিলায় আমি সত্যি সমস্যায় পড়েছিলাম৷ ইউরোপে অন্য কোথাও এমন ভূমিক্ষয় হয় না৷ বছরে প্রায় পাঁচ মিটার উধাও হয়ে যায়৷ জোয়ারের সময় আমি সেখানে  আটকে পড়েছিলাম৷ অন্ধকারের মধ্যে টিলা বেয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলাম৷ একেবারে শেষ মূহূর্তে সফল হয়েছিলাম৷ এই যাত্রার সেটা সবচেয়ে ভয়ের মুহূর্ত ছিল৷''

প্রকৃতির মাঝে হাঁটার সময় বেশিরভাগ সময়ে কুইন্টিন লেক সম্পূর্ণ একাই ছিলেন৷ বেশ কয়েকবার শরীরে চোট পেয়ে এবং ব্রিটেনে প্রথম করোনা সংকটের সময় লকডাউনের কারণে তার কাজে বার বার বিলম্ব ঘটেছে৷ কিন্তু প্রকৃতির অসাধারণ রূপ সেই ক্ষতি পূরণ করে দিয়েছে৷ বিশেষ করে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলির বৈচিত্র্য তাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে৷ নিজের পছন্দের জায়গাগুলি তুলে ধরে কুইন্টিন লেক বলেন, ‘‘ওয়েলসে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা সম্ভবত বারমাউথ ব্রিজ৷ ভিক্টোরিয়ান আমলের সুন্দর এই সেতুর ঠিক পেছনে ইড্রিসের চেয়ার নামের পর্বত দেখা যায়৷ ইংল্যান্ডে আমার পছন্দের জায়গা বোধহয় দক্ষিণ উপকূলের লিজার্ড৷ তিনটি অঞ্চলের মধ্যে স্কটল্যান্ড আমার সবচেয়ে প্রিয়৷ সেখানে আডমেনইয়াক ও নইডট উপদ্বীপ খুবই সুন্দর৷''

ছবির জ্যামিতিক ও বিমূর্ত চরিত্র ধরে রাখতে কুইন্টিন চৌকো ফরম্যাটে ছবি তোলেন৷ স্থাপত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুবাদে সেটা তাঁর পক্ষে সহজ কাজ৷ নিজের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছবির প্রিন্ট বিক্রি করেন তিনি৷ এই প্রকল্পের দৌলতে দ্বীপরাষ্ট্র সম্পর্কে তার নিজস্ব ধারণাও বদলে গেছে৷ সে বিষয়ে কুইন্টিন বলেন, ‘‘ব্রিটেনকে আমি অবশ্যই তিনটি দেশ হিসেবে দেখি৷ তার মধ্যেও আমি মানুষের একাধিক সমষ্টি দেখতে পাই, যারা নিজেদের এলাকা ভালোবাসেন এবং খুব ভালোভাবে চেনেন৷ সব মিলিয়ে আমার কাছে দেশটি আসলে অনেক বেশি ‘ওয়াইল্ড' বা বন্য প্রকৃতির৷''

৪৫৪ দিনে প্রায় ১১,০০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কুইন্টিন লেক আবার যাত্রার সূচনার জায়গা – অর্থাৎ লন্ডনের সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রালে ফিরে গেছেন৷ সুখের সেই অনুভূতির বর্ণনা দিতে গিয়ে কুইন্টিন বলেন, ‘‘যাত্রার শেষে লন্ডনে ফিরে আমার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করে খুব ভালো লাগলো৷ আমি নিজেকে আরও ভালোভাবে চেনার সুযোগ পেয়েছি৷ বিশেষ করে শরীরে চোট পেয়ে বুঝেছি, তাতে কিছু যায় আসে কিনা৷ কখন মানুষের সান্নিধ্য চাই, সেটা টের পেয়েছি৷ তবে প্রকৃতির মাঝে একা থাকতে যে আমার ভালো লাগে, সেটা সত্যি উপলব্ধি করেছি৷''

গোটা ব্রিটেন হেঁটে বেড়ানোর অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা নিয়ে কুইন্টিন লেক একটি বই লিখছেন৷ ছবি তোলার আগামী বিষয়ও তার মাথায় ঘুরছে৷ সম্ভবত আয়ারল্যান্ডে একই প্রকল্পে হাত দিতে চান তিনি৷

ডিনা ওসিনস্কি/এসবি