পারভেজ মুশাররফ: অভ্যুত্থান, নির্বাসন ও মৃত্যুদণ্ড
পাকিস্তানের একসময়কার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী জেনারেল এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ৷ যার নামে এখন ঝুলছে মুত্যুদণ্ড৷ তার আদ্যোপান্ত জানুন ছবিঘরে৷
দিল্লি থেকে করাচি
পারভেজ মুশাররফের জন্ম ১৯৪৩ সালে ভারতের দিল্লিতে৷ ভারতভাগের পর ১৯৪৭ সালে পরিবারের সঙ্গে তিনি চলে যান পাকিস্তানের করাচিতে৷
সেনাবাহিনীর সদস্য
মুশাররফের বাবা ছিলেন কূটনীতিক৷ ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি তুরস্কে ছিলেন৷ ১৯৬১ সালে মুশাররফ যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে৷
সেনাপ্রধান
১৯৯৮ সালের অক্টোবরে মুশাররফ চার তারকার জেনারেল পদে উন্নীত হন৷ তাকে পাকিস্তানের চিফ আর্মি স্টাফের দায়িত্ব দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ৷
অভ্যুত্থান
সেনাপ্রধান হওয়ার ঠিক এক বছরের মধ্যেই ১৯৯৯ সালে রক্তপাতহীন অভ্যত্থান ঘটান মুশাররফ৷ ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের হাত থেকে৷ প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি ২০০৭ পর্যন্ত তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্বও আঁকড়ে থাকেন৷
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র
ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন মুশাররফ৷ যোগ দেন জর্জ ডব্লিউ বুশের ঘোষিত সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে মিত্র দেশগুলোর জোটে৷
হত্যা চেষ্টা
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করেছে আল-কায়দা৷ নয় বছর শাসনকালে অন্তত তিনবার তিনি গুপ্তহত্যা প্রচেষ্টার হাতে থেকে রেহাই পেয়েছেন৷
একচ্ছত্র ক্ষমতা
প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি মুশাররফকে৷ তবে বিপত্তি বাধে দেশটির বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ করতে গিয়ে৷ ২০০৭ সালের মার্চে তার আইনী বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হয় আদালতে৷
পদত্যাগ
২০০৮ সালে অভিসংশন এড়াতে গিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মুশাররফ৷ নির্বাচনে পাকিস্তান পিপলস পার্টি জয়লাভ করলে তিনি লন্ডন চলে যান৷
দেশে ফেরা ও গ্রেপ্তার
২০১০ সালে নিজের রাজনৈতিক দল অল পাকিস্তান মুসলিম লীগ গঠন করেন মুশাররফ৷ ২০১৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসেন৷ সেসময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
মামলা
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর নওয়াজ শরীফ সরকার তার বিরুদ্ধে সংবিধান বরখেলাপ করে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মামলা করেন৷ ২০১৪ সালের মার্চে আদালতে হাজির হয়ে মুশাররফ অভিযোগ অস্বীকার করেন৷
স্বেচ্ছা নির্বাসন
লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর পাকিস্তান সরকার তার ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল৷ ২০১৬ সালে সেটি তুলে নেয়া হলে ৭৬ বছর বয়সী এই জেনারেল চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে পাড়ি জমান দুবাইয়ে৷ কয়েকমাস পরই বিশেষ আদালত তাকে অপরাধী ঘোষণা করে এবং তার সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেয়৷
মৃত্যুদণ্ড
দেশের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে ২৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আদালত তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে৷ এটিকে দেখা হচ্ছে এক ঐতিহাসিক রায় হিসেবে৷ কেননা পাকিস্তানের আদালতে সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো রায় দেয়ার ঘটনা বিরল৷
পক্ষ-বিপক্ষ
তবে সবাই যে এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছে এমন নয়৷ এর ফলে পাকিস্তার আর তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মধ্যে আরো বিভাজন তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী৷ বিমান বাহিনীর সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেহজাদ চৌধরী মনে করেন পুরো বিচার প্রক্রিয়াতেই ত্রুটি ছিল৷ মুশাররফ এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন বলেও জানান তিনি৷