1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পারকিনসন্সের বিশেষ চিকিৎসা উদ্ভাবন করেছেন যে বাংলাদেশি

২৮ মে ২০১৯

পারকিনসন্স রোগ গোটা বিশ্বে বড় সমস্যা৷ বাংলাদেশে প্রতিবছর ষোলশ'র মতো মানুষ প্রাণ হারান৷ এর চিকিৎসায় নব্বইয়ের দশকে ‘ডিপ ব্রেইন স্টিম্যুলেশন' পন্থা ব্যবহারের উপায় আবিষ্কার করেছেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রফেসর ড. টিপু আজিজ৷

https://p.dw.com/p/3JGTi
Tipu Aziz britischer Neurochirurg
ছবি: DW/A. Islam

ব্রিটেনের ‘অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি হসপিটালস এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট'-এর নিউরোসার্জারির প্রফেসর টিপু আজিজ৷ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এই চিকিৎসক পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসায় এক বিশেষ পন্থা উদ্ভাবন করেছেন৷

ব্রিটেনে এই রোগ যাঁদের আছে, তাঁদের কাছে এক পরিচিত মুখ প্রফেসর আজিজ৷ ইতোমধ্যে দু'হাজারের বেশি রোগীর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁদের শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি৷

পারকিনসন্স রোগীর চিকিৎসায় ‘ডিপ ব্রেইন স্টিম্যুলেশন' পন্থা ব্যবহার করেন প্রফেসর আজিজ৷ তিনি বানরের উপর গবেষণা করে জেনেছেন যে, মস্তিষ্কের ঠিক কোন অংশে বৈদ্যুতিক স্পন্দন সৃষ্টির মাধ্যমে পারকিনসন্স রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব৷ তাঁর এই গবেষণার ভিত্তিতে নব্বইয়ের দশকে ব্রিটেনে পারকিনসন্স রোগীদের চিকিৎসায় ব্রেইন পেসমেকার ব্যবহার শুরু হয়৷ এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘পারকিনসন্স রোগীরা পাঁচ-ছয় বছর ঔষুধ খাওয়ার পরে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হন৷ কারো কারো শরীরের অনাকাঙ্খিত নড়াচড়া ভালো হওয়ার চেয়ে মোচড়ামুচড়িতে বদলে যায়৷ তখন তারা বসতে পারে না, নড়তে পারে না৷ তখন সার্জারি করলে উপকার হয়৷''

পারকিনসন্স রোগীর হাত-পায়ের কাঁপুনি ও জড়তা রোধে তাঁর মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ‘ইলেক্ট্রোড' প্রবেশ করানো হয়৷ আর সেই ‘ইলেক্ট্রোড' ব্রেইন পেসমেকারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, যা সাধারণত রোগীর বুকে স্থাপন করা হয়৷ পেসমেকারটির মাধ্যমে নির্দিষ্ট মাত্রায় মস্তিষ্কে ‘ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপাল্স' পাঠানো হয়, যা রোগীর শরীরের কাঁপুনি এবং জড়তা পুরোপুরি দূর করতে সক্ষম৷ তবে পুরো সার্জারির প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং সেটি সম্পন্ন করতে কয়েকঘণ্টা সময় লাগে৷ শতকরা সত্তরভাগ ক্ষেত্রে অপারেশন সফল হয়৷

শুরুর দিকে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার খরচ ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষ বহন করতো না৷ তবে, প্রফেসর আজিজের তদবিরের কারণে এখন সাধারণ রোগীরা সেটা রাষ্ট্রীয় খরচেই করতে পারছেন৷

ব্রিটেন ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ কয়েকটি দেশে পারকিনসন্স রোগের এই চিকিৎসাপদ্ধতি চালু করেছেন প্রফেসর টিপু আজিজ৷ গোটা বিশ্বে অন্তত আড়াই লাখ রোগী এভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন৷ তবে নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশে এই চিকিৎসা চালু করা তাঁর পক্ষে এখনো সম্ভব হয়নি৷ প্রফেসর আজিজ বলেন, ‘‘গত বিশ বছর ধরেই চেষ্টা করছি৷ হঠাৎ করে এই বছর থেকে একটু আঞ্চলিক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে৷ কিন্তু আগে তো ওঠেনি৷''

তিনি বলেন, ‘‘এটার একটা কারণ হতে পারে যে অতীতে বাংলাদেশে এখনকার মতো এতো নিউরোসার্জন ছিল না৷ তখন জীবন বাঁচানো প্রথম দরকার ছিল৷ বর্তমানে সেসব জরুরি চিকিৎসার জন্য অনেক চিকিৎসক আছেন৷ এখন ‘ডিজেনারেটেড ডিজিজ' – যেসব মানুষকে মারবে না, সেসব সার্জারির চাহিদা এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে৷''

চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্প্রতি নিউরোসার্জারিতে ব্রিটেনের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘সোসাইটি অব ব্রিটিশ নিউরোলজিক্যাল সার্জন্স' মেডেল পেয়েছেন ড. টিপু আজিজ৷ অদূর ভবিষ্যতে নিজের মাতৃভূমিতেও পারকিনসন্স রোগের আধুনিক চিকিৎসা পৌঁছে দিতে চান তিনি৷