1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সেচের পানি সরবরাহের অভিনব উদ্যোগ

২০ নভেম্বর ২০১৯

জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার ফলে পানি সরবরাহ ও পানির মানের বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ জার্মানির রাইন নদীর তীরে এক পরিশোধন কেন্দ্র পানীয় জল ও সেচের পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3TMi9
রাইন নদীছবি: Imago/imagebroker

রাইন ইউরোপের প্রধান নদীগুলির একটি৷ ১,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাপথের অর্ধেকের বেশি জার্মানির মধ্যেই পড়ে৷ একদিকে অসাধারণ নিসর্গ, অন্যদিকে পরিবহণের ব্যস্ত পথ হিসেবেও রাইনের গুরুত্ব রয়েছে৷

নদীর তীরে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান অবস্থিত৷ সেগুলির বর্জ্য পানিও নদীতে গিয়ে পড়ে৷ আগেই পরিশোধন না করলে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়বে৷ তখন সেই পানি কি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে? পানি পরিশোধন কেন্দ্রের প্রতিনিধি মিশায়েল পলোৎসেক বলেন, ‘‘আমরা রাইনের পানির নমুনা সংগ্রহের জায়গায় রয়েছি৷ তীরের কাছে বয়ে চলা নদীর পানি সংগ্রহ করা হয়৷ তারপর এক দশমিক দুই শূন্য মিটার ব্যাসের দু-দুটি পাইপের মাধ্যমে সেই পানি সরাসরি পরিশোধন কেন্দ্রে চলে যায়৷’’

সেখানে খুব ভালো করে পানি পরিশোধন করা হয়, তারপর ভূগর্ভস্থ পানির দিকে চালিত করা হয়৷ ফ্রাংকফুর্ট শহরের দক্ষিণে অবস্থিত এই কেন্দ্র জার্মানিতে নদীর পানি পরিশোধনের একমাত্র স্থাপনা৷ সেখানে ফিল্টারিং প্রক্রিয়ার বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে৷ পলোৎসেক বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে জার্মানিতে কখনো নদীর উপরিভাগের পানি পান করার জন্য ব্যবহার করা হয়নি, কারণ, রাইনের উপর বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেবার কোনো উপায় না থাকায় দিনরাত সরবরাহের কোনো গ্যারান্টি ছিল না৷ তারপর স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টিও রয়েছে৷ ইনফিলট্রেশন প্রক্রিয়ায় পানি থেকে ব্যাকটিরিয়া ছেঁকে নেওয়া হয়৷ সম্পূর্ণ দূর না করতে পারলেও দূষণের মাত্রা কমানো হয়৷ গ্রীষ্মকালে রাইনের পানির তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁতে পারে৷ ইনফিলট্রেশন প্রক্রিয়া তাপমাত্রার মধ্যে ভারসাম্য আনতে পারে৷’’ 

নদীর পানি বিশুদ্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ

অর্থাৎ, দীর্ঘ খরার সময়েও বিশুদ্ধ পানি ভরা আধার নিশ্চিত করতে ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রা ঠিক রাখাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়৷ সেখানে বছরে ৪ কোটি ৩০ লক্ষ কিউবিক মিটার পানি প্রক্রিয়াজাত করা হয়৷ এক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে গোটা প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়৷ রাজ্য পানি পরিশোধন প্রতিষ্ঠানের হুবার্ট শ্রাইবার বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, যে একমাত্র স্থানীয় ভূতাত্ত্বিক পরিবেশের কারণে এই সমাধানসূত্র সম্ভব হয়েছে৷ এখানে বিশাল আকারের প্রাকৃতিক অ্যাকুইফাইয়ার বা জলাধার রয়েছে৷ সব জায়গায় এমন পরিবেশ পাওয়া যায় না৷ যেমন জার্মানির পূর্বাঞ্চলে কোনো প্রাকৃতিক জলাধার নেই৷ তাই ভূতাত্ত্বিক কারণে সেখানে এই সমাধানসূত্র কাজে লাগবে না৷’’

রাইন নদীর পানি এই সব জলাধারে বয়ে যায়৷ বিশেষভাবে তৈরি এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি পরিশোধন করা হয়৷ পানি পরিশোধন কেন্দ্রের মিশায়েল পলোৎসেক বলেন, ‘‘দূষিত ওয়াটার পাম্প স্টেশনে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিশোধনের পরের ধাপ হলো ফ্লকুলেশন৷ এটি রাসায়নিক পরিশোধন প্রক্রিয়ার অংশ৷ ফেনা তোলার জন্য ফ্লকুলেশন এজেন্ট যোগ করা হয়৷ প্রথমে সেটি দ্রবণীয় থাকলেও তারপর তলানি হিসেবে উপরে ভেসে ওঠে৷ পরের ধাপে বিশুদ্ধ পানি ফিল্টার করা হয়৷’’

প্রায় ৩০ বছর আগে স্থাপনাটি তৈরি করা হয়েছিল৷ সে যুগে এটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নমুনা ছিল৷ রাইন নদীতে বেড়ে চলা দূষণের মোকাবিলা করতে বর্তমানে সেটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে৷

পানির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া, হেভি মেটাল ও কীটনাশক আছে কিনা, গবেষণাগারে তা পরীক্ষা করা হয়৷ জার্মানিতে পানীয় জল ও সেচের পানির ক্ষেত্রে কড়া মানদণ্ড চালু রয়েছে৷ নির্দিষ্ট মাইক্রোবায়োলজিক্যাল মাপকাঠির ভিত্তিতে তা স্থির করা হয়৷

এই স্থাপনা থেকে চাষিদের জন্যও বিশুদ্ধ সেচের পানি সরবরাহ করা হয়৷ তাপ প্রবাহের সময় গোটা অঞ্চলের মাটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ সম্প্রতি স্থানীয় চাষিদের ফসল বাঁচাতে আগের তুলনায় অনেক বেশি মাত্রায় সেচের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে৷ এই স্থাপনায় পরিশুদ্ধ পানির প্রায় ১২ শতাংশ চাষিদের জন্য ধার্য করা হয়৷ কৃষি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে হান্স-ইয়ুর্গেন ফিশার মনে করেন, ‘‘এটা একেবারে অপরিহার্য৷ আমরা পিঁয়াজ, স্ট্রবেরি ও অ্যাস্পারাগাস চাষ করি, যার জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়৷ পানির মান ভালো হওয়ায় আমরা যে কোনো সময় স্ট্রবেরি গাছে পানি দিতে পারি৷ নিয়মিত পানি পরীক্ষা করা হয়৷ প্রায় পানীয় জলের মতো৷ ফলে আমরা সরাসরি স্ট্রবেরি বিক্রি করতে পারি৷ আমাদের কৃষিপণ্যের মান নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷’’

চাষিরা প্রতি কিউবিক মিটার সেচের পানির জন্য ৩০ থেকে ৫০ সেন্ট মাশুল দেন৷ হান্স-ইয়ুর্গেন ফিশারের মতে, পানীয় জলের মূল্য এর প্রায় ১০ গুণ বেশি৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গোটা অঞ্চলের জন্য বিশুদ্ধ পানির গুরুত্ব অত্যন্ত বেড়ে গেছে৷

টানিয়া ব্লুট/এসবি