1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাথর-বাহিনীর মুখোমুখি হয়েও বেঁচে ফেরা

গৌতম হোড়
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ততক্ষণে প্রায় ঘন্টা তিনেক ধরে যুদ্ধক্ষেত্রে ঘুরে ফেলেছি৷ পোড়া, ভাঙা বাড়ি থেকে ধোঁয়া উঠছে৷ জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে স্তূপাকার পড়ে রয়েছে গাড়ির পাহাড়, রাস্তাভর্তি ইট ও কাচ৷ দেখে মনে হচ্ছে, সমরাঙ্গনে বোমা পড়েছে৷

https://p.dw.com/p/3YalR
Indien Neu Delhi | Zerstörung nach den Unruhen durch Proteste wegen Staatsbürgerschaftsgesetz
ছবি: DW/S. Ghosh

একটি বাড়ির আঙিনায় পড়ে রয়েছে সবজি৷ খাবার বানানো হচ্ছিল৷ আক্রমণ হয়েছে সে সময়৷ পোড়া, ভেঙে পড়া বাড়ির অন্দরে শুধুমাত্র একটি কুকুর অত্যন্ত করুণভাবে চেয়ে রয়েছে ধ্বসস্তূপের দিকে৷ হিংসার আগুন তাকেও ছাড়েনি৷ নষ্ট হয়ে গিয়েছে একটি চোখ৷ সারা গায়ে ছাই৷ আমাদের দেখে একবার মুখ তুলে তাকিয়ে সে আবার পায়ের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ল৷ সম্ভবত এই হিংসা, অমানবিকতা সহ্য করতে না পেরে৷

এই সব অসহনীয় দৃশ্য দেখার পর গাড়ি চলল শিববিহারের দিকে৷ মূল রাস্তা থেকে নেমে গিয়েছে একটা ছোট গলি৷ দুটি গাড়ি সেখানে পাশাপাশি চলতে পারে৷ সেই গলিতে এসে থামল আমাদের গাড়ি৷ সহকর্মী স্যমন্তক ছুটল ছবি তুলতে৷ থমথমে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল ঝড়ের আগের পরিস্থিতি৷ যে কোনও সময়ে বিপদ ঘতে পারে৷ তাই প্রথমে বলেছিলাম, ''ফিরে চল৷'' কিন্তু স্যমন্তক তখন আরও ছবি তোলার জন্য মরিয়া৷ সঙ্গী সাংবাদিক রাজা বন্ধ্য়োপাধ্যায় ও চিত্র সাংবাদিক সঞ্জিত দত্ত কাজে নেমে পড়লেন৷ তাঁরা লাইভ করছেন৷ ওই গলিতে আরও কিছু সংবাদিক আছেন৷ এতক্ষণ ধরে ওই ভয়াবহ দৃশ্য দেখার ফলে ক্লান্ত হয়ে গাড়িতে বসেছিলাম৷ চোখ ফোনের দিকে৷ হঠাৎ সামনে দেখলাম, এক মহিলা বড় রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে কেমন যেন ভয় পেয়ে পিছনের দিকে দৌড় লাগালেন৷

Goutam Hore
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লিছবি: privat

ঠিক সেই সময় তাঁর পায়ে এসে লাগল একটা ইটের টুকরো৷ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তিনি দৌড়াবার চেষ্টা করলেন৷ বড় রাস্তার অন্য দিক থেকে দৌড়ে এসে এক তরুণ রাস্তা থেকে ইট তুলে সজোরে ছুড়ে মারল সামনের দিকে৷ সেটা গিয়ে লাগল আরেক যুবকের হাতে৷ পিছন থেকে হইহই শব্দ আসছে৷ বোঝা যাচ্ছে, যুবক একা নয়, পিছনে প্রচুর উন্মত্ত সহযোগী রয়েছে৷ ঢিল হাতে তরুণের চোখ পড়ল আমাদের গলির দিকে৷ ততক্ষণে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আরও কয়েকজন মারমুখি যুবা৷
আমাদের গাড়ির একশো মিটার দূরে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশের গাড়ি৷ গাড়ির চালক ছাড়া তাতে একজন পুলিশ কর্মী ছিলেন৷ এ বার তিনি বেরিয়ে খালি হাতেই সোজা ওই উন্মত্ত জনতার সামনে গিয়ে চিৎকার করে হিন্দিতে বললেন, ‘‘কী হচ্ছে, এক্ষুনি পিছনে যাও৷ ভাগো৷’’ যুবকের দল কিছুটা থমকালেও তখনও যায়নি৷ বরং গলির দিকে আসার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ আমার সহকর্মীরা পিছনে৷ আমি চালককে বলছি, ‘‘গাড়ি পিছনে করুন৷ আগে ওরা গাড়িতে উঠুক৷’’ আর তিনি সমানে বলে যাচ্ছেন, ‘‘কোনও অবস্থাতেই পিছনে যাব না৷ তা হলে ওরা ঘিরে ফেলে মারবে৷’’ ওই দৃশ্য দেখে তাঁর মধ্যে মৃত্যুভয় চলে এসেছে৷ আমি সমানে ফোন করে যাচ্ছি স্যমন্তক, রাজাকে৷ ''পাথর বৃষ্টি শুরু হয়েছে, কালবিলম্ব না করে চলে আয়৷'' নিজের হৃৎপিণ্ডের শব্দে নিজেই চমকে যাচ্ছি৷ প্রবল উৎকণ্ঠা গ্রাস করছে৷ বুঝতে পারছি, সামনে একজন মাত্র পুলিশ ওই উন্মত্ত জনতার সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে৷ তারপরই আক্রান্ত হব আমরা৷

ঠিক সেই সময়, রাস্তার অন্যদিক থেকে পরিত্রাতাদের আবির্ভাব৷ বন্দুক হাতে আধা সামরিক বাহিনীর তিন চারজন জওয়ান৷ সম্ভবত ওই পুলিশকর্মীর চিৎকার ও জনতার হইচই তাঁদের নিয়ে এসেছে ঘটনাস্থলে৷ তাদের দেখেই এ বার পিছু হঠল ধ্বংসোন্মাদ জনতা৷ সেটা দেখেই কালবিলম্ব না করে চালক গাড়ি চালিয়ে দিলেন সামনে৷ হইহই করে বললাম, ‘‘করছেন কী৷ সবাইকে আসতে দিন৷’’ কিন্তু মৃত্যুভয় গ্রাস করা চালক কিছুটা দূরে গিয়ে থামলেন৷ যে রাস্তা থেকে জনতা আসছিল, সে দিকে দেখি প্রায় শ'দুয়েক লোকের জমায়েত৷ স্যমন্তক, রাজারাও দৌড়ে ততক্ষণে গাড়িতে৷

কালবিলম্ব না করে চালকও গাড়ি চালিয়ে দিলেন৷ বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে কে চায়!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য