1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাঞ্জাবি গান: জনপ্রিয়তার সুফল অর্থ আর অর্থের ‘কুফল' সন্ত্রাস

৭ জুন ২০২২

সিধু মুজে ওয়ালাকে হত্যা করার জন্য সন্ত্রাসীরা যেন ওঁত পেতে ছিল ৷ আগের দিন তার দেহরক্ষীদের প্রত্যাহার করা হয়, পরের দিনই সশস্ত্র হামলা এবং সেই হামলায় ২৮ বছর বয়সি জনপ্রিয় শিল্পীর জীবনাবসান!

https://p.dw.com/p/4CN3j
Indien Sänger Sidhu Moose Wala wurde ermordet
ছবি: Dafydd Owen/Photoshot/picture alliance

মর্মান্তিক ঘটনাটি গত ২৯ মে'র৷  শুভদীপ সিং সিধু, যাকে সবাই সিধু মুজে ওয়ালা নামে চিনতেন, পাঞ্জাবের মানাসা জেলার জনাকীর্ণ বাজারে এভাবে আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারাবেন- তা প্রশাসন হয়ত বুঝতে পারেনি৷ সে কারণেই হয়ত র‍্যাপ গায়ক থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা শিল্পীকে দেয়া বিশেষ নিরাপত্তা প্রত্যাহার করেছিল রাজ্য সরকার৷ তবে পাঞ্জাবের অন্য সব জনপ্রিয় সংগীত শিল্পীর মতো সিধু মুজে ওয়ালারও নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় ছিল৷ তা থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ, পাঞ্জাবের সংগীত শিল্পে যখন থেকে জনপ্রিয়তার হাওয়া লাগছে শিল্পীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলাও চলছে তখন থেকে৷

সাধারণত হামলা হয় পাঞ্জাবে, তবে হামলার পরিকল্পনা হয় ভারতের অন্য রাজ্য বা ভারত থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরের দেশ ক্যানাডায়৷ সিধু মুজে ওয়ালা হত্যায় গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারের হাত রয়েছে বলে পাঞ্জাব পুলিশের ধারণা৷ সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়ায় দিল্লি কারাগারে আটক গ্যাং সদস্য লরেন্স বিশনোইয়েরও এ হত্যাকাণ্ডে হাত থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ৷

প্রতিনিয়ত চাঁদা দাবি এবং হত্যার হুমকি

পাঞ্জাবের শিল্পীদের হত্যার হুমকি পাওয়া এবং হুমকির পর হামলার শিকার হওয়া নতুন কিছু নয়৷ অনেকে প্রাণ দিয়ে জেনে গেছেন এই সত্য৷ সিধু মুজে ওয়ালার মৃত্যুর পর আগের সব হামলা, হামলায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিল্পীর মৃত্যুর ঘটনাগুলোও ফিরে এসেছে আলোচনায়৷ ফলে সব শিল্পীর মনেই ছড়িয়ে পড়ছে মৃত্যুর আতঙ্ক৷

Indien Delhi | Protest nach der Ermordungung von Punjabi Sänger Sidhu Moose Wala
সিধু মুজে ওয়ালা হত্যার প্রতিবাদে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তার দল আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে কংগ্রেস সমর্থকদের বিক্ষোভছবি: Kabir Jhangiani/Pacific Press/picture alliance

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্যানাডিয়ান র‍্যাপার অমৃতপাল সিং ধিলোঁরও এখন মৃত্যুর আতঙ্কে বিপর্যস্ত৷ সদ্যপ্রয়াত সিধু  মুজে ওয়ালার ঘনিষ্ঠ এই শিল্পী বলছিলেন, ‘‘পাঞ্জাবি শিল্পীদের প্রতিদিন যে কত ধরনের বিপদের মুখোমুখি হয়ে গান গাইতে হয়, তা অনেকেই জানেন না৷ ভালোবেসে একটা করি বলে লাগাতার বিচার-বিশ্লেষণ, ঘৃণা জানানো মন্তব্য, হুমকি- বলতে গেলে সব কিছুরই মোকাবেলা করতে হয় আমাদের৷'' সিধুর মৃত্যুতে শোক জানাতে গিয়ে পাঞ্জাবের আরেক জনপ্রিয় শিল্পী মিকা সিংও বলেছেন একই কথা, জানিয়েছেন হত্যার হুমকি তিনিও পেয়েছেন, ‘‘পাঞ্জাবের শিল্পীরা এমন হুমকি প্রায়ই পেয়ে থাকেন৷ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- মাথার ওপর এমন হুমকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া সত্যিই খুব কঠিন৷''

সিধু মুজে ওয়ালা নিহত হওয়ার পর অনেকেই নিরাপত্তা জোরদার করেছেন৷ সংগীত শিল্পী মনকীর্ত আউলাখ গত এপ্রিলেও হত্যার হুমকি পান৷ দাভিন্দর বামবিহা গ্যাং তাকে হুমকি দেয়ার পরই বিষয়টি পাঞ্জাব পুলিশকে জানিয়েছিলেন৷ সিধু মুজে ওয়ালা নিহত হওয়ার পর মনকীর্তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷

Indischer Sänger -  Mika Singh
‘ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- মাথার ওপর এমন হুমকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া সত্যিই খুব কঠিন৷’ছবি: picture-alliance/dpa/B. Walton

আরো কিছু হামলা

ভারতের শিল্পীদের ওপর হামলায় ক্যানাডা প্রবাসী বা ক্যানাডায় বসবাসরত সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার কারণ কী? রাজনৈতিক বিশ্লেষক জয়দীপ সারিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাঞ্জাবের অনেক সফল গায়ক বা অভিনেতারই কিন্তু ক্যানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি) বা নাগরিকত্ব রয়েছে্৷'' তাদের অনেকেই ক্যানাডায় খুব জনপ্রিয়৷ ক্যানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর পাঞ্জাবির বাস৷ জয়দীপের মতে, ক্যানাডায় বসবাসরত ভারতীয় বংশোদ্ভুত পাঞ্জাবিদের মধ্যে কিছু তরুণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত৷ তাদের ইন্ধন বা প্রত্যক্ষ মদতেই সংগীত শিল্পীদের ওপর হামলা চালানো হয় বলে ভারতের পুলিশও মনে করে৷

সাম্প্রতিক সময়ে পাঞ্জাবি শিল্পীদের ওপর চালানো হামলার মধ্যে সবার আগে বলতে হয় পারমিশ ভার্মার ওপর হামলাটির কথা৷ পারমিশকে উরুতে গুলি করা হয়৷ ২০১৮ সালে তাকে গুলিবিদ্ধ করার পর নিজের ফেসবুক পেজে সমস্ত দায় স্বীকার করেছিলেন গ্যাং সদস্য দিলপ্রীত সিং৷

সে বছর সংগীত শিল্পী নভজোত সিংয়ের দেহও গুলিতে ঝাঁঝরা অবস্থায় পাওয়া যায় দেরা বাস্সির একটা খালি প্লটে৷ নভজোত হত্যায় কারা জড়িত তা জানার জন্য এখনো তদন্ত চলছে৷

ক্যানাডার সহায়তা কামনা

পাঞ্জাবি গানের শিল্পীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে৷ ক্যানাডায় বসবাসরত গ্যাংস্টারদের আইনের আওতায় আনতে ইতিমধ্যে ক্যানাডা সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা চেয়েছে ভারত সরকার৷ ভারতে বিভিন্ন গ্যাং-এর সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং কিছু ক্ষেত্রে ‘এনকাউন্টারে' সন্ত্রাসীদের মৃত্যুর পরও বন্ধ হচ্ছে না প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা৷ পাঞ্জাবি গানের শিল্পীদের কিছুদিন পরপরই প্রাণ দিতে হচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে৷ অনেক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে ক্যানাডা থেকে৷

২০২১ সালে ভারতের সন্ত্রাস দমন টাস্কফোর্স এনআইএ-র একটি প্রতিনিধি দল অটোয়ায় যায়৷ সেখানে গিয়ে তারা বেশ কয়েকজন ভারতীয়-ক্যানাডিয়ান সন্ত্রাসীকে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ক্যানাডার তরফের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান৷ এ বিষয়ে এখনো কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি৷ মুরালি কৃষ্ণন (নতুন দিল্লি)/ এসিবি