পাচারকারীর টাকা তুলতে ফ্রান্সে মাহমুদের সংগ্রাম
ইউরোপে স্থায়ী হতে ইরাক থেকে প্রথমে সুইডেনে যান মাহমুদ৷ সুইডেনে থাকা হয়নি৷ ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনে যাওয়াও হয়ে ওঠেনি টাকার অভাবে৷ এখন চা, স্যান্ডউইচ বিক্রি করে টাকা জমাচ্ছেন মাহমুদ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ভাগ্যগুণে বেঁচে আছেন মাহমুদ
দাওয়ান আনোয়ার মাহমুদ৷ ৩০ বছর৷ কয়েকদিন আগে পাচারকারীকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন ফ্রান্স থেকে নৌকায় ব্রিটেনে পৌঁছে দিতে৷ কিন্তু নৌকার পরিস্থিতি দেখে আর সাহস হয়নি৷ ডুবে মরার ভয়ে পাচারকারীকে জানিয়ে দেন এই দফা তিনি যাবেন না৷ না গেলেও টাকা ফেরত পাননি৷ উল্টে পাচারকারীর লোকজন তাকে পিটিয়েছে, মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে৷ তারপর আবার আশায় বুক বেঁধেছেন মাহমুদ৷
অস্থায়ী তাঁবুতে মানবেতর জীবন
গত সপ্তাহে মাহমুদ ছিলেন ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের দুঁকির্ক অঞ্চলের রেল লাইনের কাছের জঙ্গলে গড়ে তোলা অস্থায়ী তাঁবুতে৷ শীতে এমন জায়গায় বাস করা খুব কঠিন৷ প্রচণ্ড ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টি যোগ হলে গাছের ডাল, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদি না পুড়িয়ে আগুন না পোহালে তাঁবুতে বেঁচে থাকা মুশকিল৷
বারবার নতুন ঠিকানায়
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার পরের দিনই মাহমুদ জানতে পারেন, ফ্রান্সের পুলিশ তাদের এই জায়গা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ সুতরাং আবার যেতে হবে নতুন ঠিকানায়৷ আরেক জায়গায় শুরু হবে অস্তিত্ব রক্ষার অবর্ণনীয় কষ্ট৷
ইরাক থেকে যেভাবে ফ্রান্সে...
১০ বছর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ইরাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তাকে৷ ছয় মাসের জেল হলো৷ জেলে পুলিশের নির্যাতনে একটা পায়ে স্থায়ী সমস্যা দেখা দিলো৷ ২০১৫ সালে দেশ ছাড়লেন৷ সুইডেনে চলে গেলেন বোনের কাছে৷ ছয় বছর চেষ্টা করেও সেখানে থাকতে পারেননি৷ তার অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্য্যান করে সুইডেন সরকার৷
অস্থায়ী তাঁবুতেই বাড়তি আয়
সুইডেনে থাকার সময় কুর্দিদের এক রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন মাহমুদ৷ ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এখন অস্থায়ী তাঁবুতেও বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন৷ স্যান্ডউচ, চা, কাবাব, রুটি, মুরগির কলিজা ইত্যাদি রান্না করে যা আয় হয় তা থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন৷ পাচারকারীকে টাকা দিতে হবে, পাচারকারী তাকে নিরাপদে ব্রিটেনে পৌঁছে দেবে- এই স্বপ্ন স্থায়ী হয়ে গেছে মাহমুদের মনে৷
নিরাপদ যাত্রা ব্যয়বহুল
ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য এক পাচারকারীকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন মাহমুদ৷ নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে দেখেন নৌকায় তিল রাখার জায়গা নেই৷ ছোট নৌকায় ৪৮ তম যাত্রী হওয়ার সাহস হয়নি বলে পিটুনি খেয়ে, মোবাইল হারিয়েও ফিরে এসেছেন মাহমুদ৷ তবে আশা ছাড়েননি৷ ভাবছেন ২৫০০ থেকে ৩০০০ পাউন্ড খরচ করে কম মানুষ নেয়া হয় এমন নৌকায় যাবেন৷ আরেকটু বেশি টাকা জমাতে পারলে যাবেন ট্রাকে৷ ট্রাকে যেতে চাইলে ৪০০০ পাউন্ড দিতে হবে মানবপাচারকারীকে৷
দৈনিক আয়
স্যান্ডউইচ, চা, কাবাব, রুটি ইত্যাদি বিক্রি করে দিনে ৪০ থেকে ৭০ ইউরো আয় করেন মাহমুদ৷ তবে পুরো টাকা সঞ্চয় করতে পারেন না৷ নিজের খাওয়ার খরচ তো আছেই, পাশাপাশি দুজন সহকারীকে প্রতিদিন দিতে হয় ২৫ ইউরো৷
লক্ষ্যে স্থির মাহমুদ
সুইডেনে থাকতে পারেননি৷ ফ্রান্সেও মেলেনি উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা৷ তাতে কী! মাহমুদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য একটাই এবং সেই লক্ষ্যের কথা সরাসরিই জানান সবাইকে, ‘‘আমার কাছে ফ্রান্স বা ইউকে বা জার্মানি বা বেলজিয়াম- সবই সমান৷ আমি এখানে এসেছি নতুন করে জীবন শুরু করতে৷ এখনো তা-ই চাই৷’’