1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাখিদের স্বর্গ যে লেকে

গ্রিট হোফমান/এসি২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মিয়ানমারের উত্তরে ইন্দোচি লেক পাখিদের স্বর্গ৷ লেকের মাঝখানে আবার এক নয়নাভিরাম প্যাগোডা৷ তবুও এখানে টুরিস্টদের ভিড় নেই৷ তবে যাতে হয়, তার চেষ্টা চলেছে৷

https://p.dw.com/p/1I3yY
Reportagebilder Bird beatboxing
ছবি: Prasenjeet Yadav

স্বর্গ, তবু ভিড় নেই সেখানে

ইন্দোচি হ্রদের ধারে যাদের বাস, তাদের অধিকাংশই জেলে, চিরকালই যেরকম ছিল৷ বিশ বছর বয়সের জোয়ে জ জ উইন কিন্তু অর্থনীতির স্নাতক৷ জোয়ে বলেন, ‘‘আমি টুরিস্ট গাইড হতে চাই৷ কাজটা খুব ভালো৷ টুরিস্টরা ইন্দোচি লেক এলাকায় প্রবৃদ্ধি আনতে পারেন, আমরা তা থেকে টাকা কামাতে পারি৷ টুরিস্টদের যাতে ভালো সময় কাটে, আমি তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি – আবার আমার নিজেরও রোজগার হয়৷ যাকে বলে কিনা দুপক্ষেরই সুবিধা৷''

মিয়ানমারের একেবারে উত্তরে এই প্রত্যন্ত এলাকায় আপাতত খুব বেশি টুরিস্ট আসেন না৷ রাজধানী থেকে এখানে পৌঁছাতে লেগে যায় একটা গোটা দিন৷ প্রাদেশিক বিমানবন্দর এখান থেকে পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা৷

ইংরেজি শেখা থেকে পাখি চেনা

জোয়ে ও তাঁর মতো আরো দশজন তরুণ ইন্দোচি হ্রদ এলাকায় টুরিজম বাড়াতে চান৷ সেজন্য তারা সবাই ইংরেজি শিখছেন৷ বিদেশিদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়৷ ট্রেকিং বা কায়াকে চড়ে লেকের জলে বেড়ানো – এ সবের জন্য কী করে খদ্দের ধরা যায়৷ খুব গোলমেলে কাজ: পাঁচ বছর আগেও এখানকার বাসিন্দাদের টুরিস্টদের সঙ্গে কোনোরকম লেনদেন নিষেধ ছিল৷ জোয়ে জানালেন, ‘‘গোড়ায় আমার ভয় ছিল, আমি ঠিক ঠিক কথা বলতে পারব কিনা৷ আসলে তো সেই একই সব প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে: তোমার নাম কী? বাড়ি কোথায়? এই লেকের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু বলো৷ সবচেয়ে দরকারি হল, টুরিস্টরা যাতে আমাকে বুঝতে পারেন; আমি কী বলছি, তা বুঝতে পারেন৷''

ইন্দোচি লেক পাখিদের স্বর্গ৷ ঠিক সেটাই হল জোয়ে আর তার সতীর্থদের মূলধন: ইন্দোচি লেক পরিবেশবান্ধব পর্যটনের একটা লক্ষ্য হয়ে উঠবে বলে তাদের আশা৷ আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা এ-কাজে তাদের সাহায্য করছেন৷ নতুন গাইড-দের শিখতে হবে, পাখি দেখার সবচেয়ে ভালো জায়গাগুলো কোথায়৷ জোয়ে এক অস্ট্রেলীয় অতিথিকে তার পছন্দের পাখি দেখিয়ে বলেন, ‘‘সারসপাখিরা একটা বিপন্ন প্রজাতি৷ ওরা এই লেকে থাকে৷ অন্যত্র ওদের খুব কম দেখতে পাওয়া যায়৷''

বিপন্ন বলে গণ্য দশটি প্রজাতির পাখি এই ইন্দোচি লেক এলাকায় থাকে৷ প্রায় ২০ হাজার পাখি এখানে শীত কাটায় – তখন লেকের জল পাখিতে ভরে যায়৷ মিয়ানমার যে এখন টুরিস্টদের জন্য খোলা, ফ্রাংক মমব্যার্গ-এর কাছে তা একটা বিশেষ সুযোগ৷ আগে প্রকৃতি সংরক্ষণের দায়িত্ব ছিল সামরিক সরকারের উপর – যাতে প্রকৃতির খুব একটা উপকার হয়নি৷

ফনা অ্যান্ড ফ্লোরা ইন্টারন্যাশনাল-এর ফ্রাংক মমব্যার্গ বলেন, ‘‘পরিবেশবান্ধব পর্যটন থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের যদি কোনো সুবিধা হয়, তবেই তারা প্রকৃতি সংরক্ষণে আগ্রহী হবে৷ কাজেই এটা খুব ভালো যে, ওরা পক্ষিবিশারদদের পাখি দেখিয়ে অর্থোপার্জন করতে পারছে, পাখি ধরে পেট চালাতে হচ্ছে না৷''

মিলিটারি, বিদ্রোহী, পারদ

বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য দান৷ এখানকার মানুষ মুক্তহস্তেই দান করেন, যদিও তারা নিজেরা খুব দরিদ্র৷ কাজেই টুরিজম থেকে তাদের প্রত্যাশা অনেক৷ মাসখানেক হল, সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে৷ সামরিক বাহিনীর পুরনো গেস্টহাউস এখন ভাড়া পাওয়া যায়৷ তবে গোলযোগও আছে৷ লেকের উত্তর দিকেই শুরু হচ্ছে কাচিন মুক্তিফৌজের এলাকা৷ কাচিনরা সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ তারা এখানে বেআইনি সোনার খনি চালায় – লেকের চারপাশে প্রায় একশো'টি এ ধরনের খনি আছে৷ পরিবেশ সংরক্ষণকারীদের দৃষ্টিতে যা একটা বিপর্যয়৷ সোনা বার করার জন্য পারদ ব্যবহার করা হয়৷ খনির বালির সঙ্গে সেই পারদ হ্রদের পানিতে গিয়ে পড়ে৷ মমব্যার্গ জানালেন, ‘‘সেই পারদ মাছের শরীরে গিয়ে জমা হয়৷ জেলেরা আর তাদের পরিবার সেই মাছ খায়৷ কাছের শহরগুলোতেও সেই মাছ বিক্রি হয়৷ কাজেই মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে এই মাছ খাওয়া থেকে একটা বিপদ ঘনাবে বৈকি৷ আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে তা বন্ধ না করলে, সমস্যা ক্রমেই আরো সঙ্গীন হয়ে দাঁড়াবে৷''

অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা অতিথি জোয়ে জ জ উইন-এর সঙ্গে একটি কায়াক অভিযানেও যেতে চান৷ এভাবে জোয়ে-র রোজগার হয় দিনে প্রায় সাত ডলার, যা কিনা একজন চাষির রোজগারের প্রায় দ্বিগুণ৷ দূরে দেখা যাচ্ছে শোয়ে মিয়িৎসু প্যাগোডা৷ লেকের মাঝখানে এই বৌদ্ধমন্দির, পর্যটকদের কাছে একটি বিশেষ আকর্ষণ৷ প্রতি সপ্তাহে জোয়ে আসেন এখানে৷ তাঁর বুদ্ধ হলেন মঙ্গলবারের বুদ্ধ, কেননা জোয়ের জন্ম হয়েছিল এক মঙ্গলবারে৷ এখনও এখানে টুরিস্টদের কোনো ভিড় নেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য