1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ উন্নয়নে অভিনব উদ্যোগ

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষার দায় কি শুধু কর্তৃপক্ষের? নাগরিক হিসেবে আমাদেরও কিছু কর্তব্য নেই? পাকিস্তানে একটি পাহাড়ি পথকে জঞ্জালমুক্ত রাখতে ও জায়গাটিকে আরও সবুজ করে তুলতে অভিনব এক উদ্যোগ চলছে৷

https://p.dw.com/p/3QCOM
ছবি: DW/I. Jabeen

৫ নম্বর ট্রেল

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের এক পরিচিত রাস্তার প্রান্তে একটি ফলকে ‘৫ নম্বর ট্রেল’ লেখা রয়েছে৷ মারগলা শ্রেণির পাদদেশে এই পাহাড়ি পথের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে৷ ইসলামাবাদের বাসিন্দারা এখানে জগিং করতে অথবা নিসর্গ উপভোগ করতে ভালবাসেন৷ ব্যস্ত নাগরিক জীবনযাত্রা থেকে ক্ষণিকের আরাম পেতেও এটি আদর্শ জায়গা৷ আসফন্দ ইয়ার খান তাঁদেরই একজন৷ তাঁর মতে, ‘‘ট্র্যাকিং-এর নানা উপকার রয়েছে৷ এতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়৷ আজকাল স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণে অনেক রোগ হয়৷ ট্র্যাকিং-এর সময় শরীর এন্ডোর্ফিন ছাড়ে, যার সাহায্যে স্ট্রেস কমে যায়৷’’

ছাত্র হিসেবে মুহিবুল্লাহ পাখি ভালবাসেন৷ তিনি ‘৫ নম্বর ট্রেল’ পথে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কয়েকশো প্রজাতির পাখির উপর নজর রাখেন৷ মানুষের বসতির কাছে এমন সব পাখি দেখতে পাওয়া বিরল ঘটনা৷ মুহিবুল্লাহ বলেন, ‘‘আমাদের এখানে ৩৫০ প্রজাতির পাখি স্থায়ীভাবে বসবাস করে৷ আর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা চারশোরও বেশি৷ শীতকালে সাইবেরিয়া বা বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত থেকে সেগুলি এখানে আসে৷ কালিজ ফেজেন্ট নামের এক পাখি সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো৷ সেগুলি ‘মারগলার রানি’ নামেও পরিচিত৷ এই প্রজাতির সংখ্যা কমার অর্থ প্রাকৃতিক পরিবেশে ইকোলজিকাল বিঘ্ন ঘটছে৷’’

যে পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও জঞ্জাল সাফাই

‘৫ নম্বর ট্রেল’ এলাকায় বিরল বন্যপ্রাণীও দেখা যায়৷ ৩৪টি স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩২টি সরীসৃপ সেই তালিকায় রয়েছে৷ কিন্তু পিকনিক পার্টির ফেলে যাওয়া জঞ্জালের কারণে বন্যপ্রাণী ও পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ক্ষতি হচ্ছে৷ বিশেষ করে প্লাস্টিকের ব্যাগ ও খাবারের মোড়ক সবচেয়ে ক্ষতিকর৷

ওয়াজাহাত মুস্তফা একজন ইকোলজিকাল অ্যাক্টিভিস্ট৷ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তিনি এই পথে জঞ্জাল সাফ করার কাজে হাত লাগান৷ ওয়াজাহাত বলেন, ‘‘উপরে ওঠার পথে আমি জঞ্জাল সংগ্রহ করি৷ ফেরার পথে সবসময়ে প্লাস্টিক ব্যাগে যতটা সম্ভব জঞ্জাল ভরে ফেলি৷’’

ইসলামাবাদ বন্যপ্রাণী ম্যানেজমেন্ট বোর্ড ‘৫ নম্বর ট্রেল’ পথের রক্ষণাবেক্ষণ করে৷ তবে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের অবদান ছাড়া বোর্ড বিশেষ কিছু করতে পারতো না৷

স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগ

‘৫ নম্বর ট্রেল’-এ প্রবেশের আগে স্বেচ্ছাসেবীরা মানুষের জিনিসপত্রের মধ্যে খাবারদাবার, সিগারেট, লাইটারের খোঁজ করেন৷ গোটা পথে জঞ্জাল ফেলা নিষেধ৷ মানুষকে জঞ্জাল সংগ্রহের জন্য ব্যাগ সঙ্গে রাখতে বলা হয়৷ তাদের পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে জমা রাখা হয়৷ ফেরার পথে তাঁরা সেগুলি আবার হাতে পান৷ বোর্ডের সভাপতি ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের তৈরি কোনো বস্তু নিয়ে মারগলা পাহাড়ে যাওয়া নিষেধ৷ পাহাড়ের সব পথই প্লাস্টিকমুক্ত৷ আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা মালপত্র নিরাপদে রাখেন৷ হাঁটার পর আপনি সেগুলি ফেরত পাবেন৷’’

মারগলা জাতীয় পার্কের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ নাগরিক পরিবেশের উন্নতির চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে৷ পার্ক কর্তৃপক্ষ সচেতনতা বাড়াতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে৷ পরিবেশবিদ ড. সারা আসগর এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা ইসলামাবাদের সব বাসিন্দাদের বীজ জমিয়ে রাখার অনুরোধ করছি৷ দয়া করে ব্যবহৃত বীজগুলি নিরাপদে রাখুন এবং হাইকিং-এর সময়ে সেগুলি ছড়িয়ে দিন৷ ছড়িয়ে দিলেই দেখবেন, সবুজ গাছপালার পরিমাণ কীভাবে বেড়ে যাবে৷’’

প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ভারসাম্য আনাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ ট্রেলের শেষ প্রান্তে এসে সেই উপলব্ধি হলে সুস্বাদু কিছু নাস্তা ও চিরায়ত পাকিস্তানি চা খাবার মজাই আলাদা৷

পরিবেশ দূষণ আজকের যুগের বড় চ্যালেঞ্জ৷ ‘৫ নম্বর ট্রেল’ নানাভাবে আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সুরক্ষা ও উপভোগ করার পথ দেখাচ্ছে৷

আম্মার মসুদ/এসবি