পাকিস্তানি কমিক শিল্পীর তুলি ও ক্যামেরায় নারীবাদ ও বৈচিত্র্য
চিন্তাশীল, প্ররোচনামূলক, ফ্যাশনদুরস্ত: শেহজিল মালিকের নন্দনতত্ত্ব একটি রক্ষণশীল, পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজের রূপান্তর ঘটাতে চায়৷ প্রয়োজনে প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে যেতেও দ্বিধা করেন না এই শিল্পী৷
প্রকাশ্য স্থানে নারী (১)
শেনজিল মালিক বলেন যে, নারী হওয়ার কোনো বাঁধাধরা পন্থা নেই৷ নিজের বাড়ির কাছের পার্কে বারংবার যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা করার পর তিনি এই কমিকের মাধ্যমে সেই আতঙ্কের মোকাবিলা করার চেষ্টা করেন৷ ‘‘বাইরে গেলে যে ভয় হয়, বুদ্ধিতে তার ব্যাখ্যা চলে না,’’ বলেন মালিক৷
প্রকাশ্য স্থানে নারী (২)
শুধু পাকিস্তানি বা মহিলা বলে পিছিয়ে থাকতে রাজি নন মালিক৷ ‘‘বেঁচে থাকার জন্য তো আমাদের এইটুকুই সময় আছে৷ জীবন বড় ছোট আর বাড়িতে বদ্ধ থাকার জন্য বাইরের পৃথিবীটা বড়ই সুন্দর – নিজেকে সেই ম্যাজিক থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়৷ আমি আমার বরাদ্দ মুহূর্তগুলো মুক্ত সূর্যালোকে কাটাতে চাই৷’’
কালো যদি মন্দ...
বহু পাকিস্তানির কাছে কালো হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক৷ কিশোর বয়সে শেহজিলও তাঁর ফর্সা সহপাঠীদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে দুঃখ পেয়েছেন, এমনকি ফর্সা হবার ক্রিমও ব্যবহার করেছেন, যার বিষক্রিয়া অনেক পরে জানা যায়৷ নানা দেশ থেকে আসা শক্তিশালী মহিলাদের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় ঘটে কলেজে ওঠার পর – তখন তিনি বোঝেন যে, সৌন্দর্যের কোনো বিশেষ আকার, গড়ন কিংবা গাত্রবর্ণ নেই৷
দেশি ওয়ান্ডার উওম্যান
আমরা যা, অথবা আমরা যা হতে চাই, তার ছবি আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে ধারণা পাল্টে দেয়৷ শেহজিল মালিক বলেন, তিনি যদি বড় হওয়ার সময় সাহসী অ-শ্বেতকায় মহিলাদের আদর্শ হিসেবে পেতেন, তাহলে তিনি অনেক আগেই উপলব্ধি করতেন যে, তাঁর মধ্যে অনেক বেশি সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে৷ ‘‘কোনো কালো, স্বাধীনচেতা সুপারহিরো মহিলাকে দেখে বড় না হলে, একটি মেয়ে জানবে কী করে, তার পক্ষে কী করা সম্ভব?’’
হিজাব পরা বাইকার গার্ল
মালিকের পাড়াতেই একটি মেয়ে মোটর সাইকেল চালানো শিখছিল৷ সে-ই হলো এই বাইকার গার্ল-এর প্রেরণা৷ ছবিটি ১১ ফুট অবধি বাড়িয়ে লাহোরের একটি দেয়ালে সেঁটে দেওয়া হয়৷ প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা দেখার আগেই – অর্থাৎ সেদিন রাত্রেই পোস্টারটি উধাও হয়ে যায়৷ পাকিস্তানে স্ট্রিট আর্টে ও মহিলাদের যে কিভাবে দেখা হয়, ঘটনাটি তার একটি দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন শেহজিল৷
বইয়ের পোকা
ছবিটি মালিকের বিশেষ পছন্দের, কেননা, এটা তাঁর ছোটবোনের ছবি, যাকে মালিক জ্ঞান, মমতা ও প্রেরণার উৎস বলে গণ্য করেন৷ মালিকের ভাষায়, এই ছবি হলো ‘‘যেসব মহিলা পড়তে পারেন, যারা আমাদের জ্ঞান বাড়ান ও আমাদের শিক্ষা দেন,’’ তাদের প্রতি শ্রদ্ধার্পণ৷
নারী হবার কোনো বাঁধা পথ বা পন্থা নেই
‘‘তা সত্ত্বেও, নারীদেহ রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে,’’ বলেন শেহজিল৷ ফ্রান্সে মুসলিম মহিলাদের বুর্কিনি সাঁতারের পোশাক পরা নিষিদ্ধ হবার পর তিনি এই ছবিটি আঁকেন৷ ‘‘আমি যখন আমার হিজাব পরা বন্ধুদের দেখি, তখন আমি এমন সব মহিলাদের দেখি, যারা পুরোমাত্রায় নিজেদের সম্পর্কে সচেতন ও তার পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন – অথচ (তারা) আমার ভিন্নমত সম্পর্কেও উদার,’’ বলেন শেহজিল মালিক৷
এগিয়ে এসো!
‘উওমেন ইন পাবলিক স্পেসেস’ প্রকল্পটির পর শেহজিলের পরবর্তী প্রকল্প হলো আঁকা ছবি ও ফটোগ্রাফির এক সংমিশ্রণ: ‘স্টেপ আউট!’ এ পর্যায়ের ছবি ও ফটোগুলিতে দেখা যাচ্ছে, মহিলারা কিভাবে শহর দখল করছেন৷ ছবির মডেল হলেন ইমান সুলেমান৷ ছবিটি তোলা হয়েছে শেহজিলের নারীবাদী ফ্যাশনের পোশাক-আশাকের জন্য, জেনারেশন নামের এক ক্লোদিং রিটেইলারের সহযোগিতায় যা তৈরি হচ্ছে৷