1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গের ব-দ্বীপ এলাকার মানুষ অন্যত্র চলে যাচ্ছে

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৯ মার্চ ২০১৯

এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাঁদের রুজি-রোজগারে টান পড়ছে৷ তাই তাঁরা চলে যাচ্ছে অন্যত্র৷মূলত এটাই কারণ৷ ডয়চে ভেলেকে বললেন এই সমীক্ষার ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তুহিন ঘোষ৷

https://p.dw.com/p/3FInP
Bangladesch Hindus Überfall Jessore
প্রতীকী ছবিছবি: DW

পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনসহ ব-দ্বীপ এলাকার জনগোষ্ঠী কেন যেতে বাধ্য হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক স্তরে এক সমীক্ষা চালানো হয়৷ শিরোনাম, ব-দ্বীপ,  জলবায়ু পরিবর্তন এবং বহিরাগমন, সংক্ষেপে ডেকমা৷ সমীক্ষা চালানো হয় তিনটি ব-দ্বীপ এলাকায়৷ গঙ্গা, ব্রম্মপুত্র ও মেঘনা ব-দ্বীপ ( ভারত ও বাংলাদেশ) ভারতের মহানদী এবং ঘানার ভোল্টা নদী অঞ্চলে৷ ২০১৪ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত রিপোর্টে দেখা গেছে, জলবাযু পরিবর্তনের অভিঘাত ঐসব অঞ্চলে বেশি৷ সুন্দরবনকেন্দ্রিক ঐসব অঞ্চলের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের সবথেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলি হলো, গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা, ক্যানিং ও মথুরাপুর৷ সবগুলিই দক্ষিণ ২৪-পরগণার অন্তর্গত৷ ঐসব অঞ্চলের অধিবাসীরা মূলত কৃষিজীবী৷ ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ যেমন, বন্যা এবং জলে লবণের মাত্রা খুব বেশি থাকায় কৃষি উত্পাদন মার খায়৷ ফলে সেখানকার অধিবাসীদের রুজি রোজগারে টান পড়ে৷ জীবন ও জীবিকার তাগিদে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়৷ মূলত আর্থিক কারণই এজন্য দায়ী৷

আরো দেখা গেছে, বহিরাগমনে মহিলাদের চেযে পুরুষদের সংখ্যা অনেক বেশি৷ প্রায় পাঁচগুণ৷ পুরুষরা যায় অর্থনৈতিক কারণে আর মহিলারা বেশি যায় সামাজিক কারণে৷  পশ্চিমবঙ্গে এই সমীক্ষা চালানো হয় উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলাগুলির ৫১টি ব্লকে৷ দেখা গেছে, ৬৪ শতাংশ লোকজন নিজের এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দেয় অর্থনৈতিক কারণে৷ যেমন, পেট চালাবার মতো কৃষি উত্পাদন হয় না, বিকল্প রোজগারের সুযোগ নেই এবং সর্বোপরি আছে ঋণভার৷ ২৮ শতাংশ মানুষ স্থানান্তরে যেতে বাধ্য হয় সামাজিক কারণে এবং ৭ শতাংশ যায় সামুদ্রিক ঝড়-তুফান এবং বন্যার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে বেশির ভাগেরই গন্তব্য কলকাতা. ১০ শতাংশ মহারাষ্ট্রে, ৯ শতাংশ তামিলনাড়ুতে, ৭ শতাংশ কেরালা এবং ৬ শতাংশ গুজরাটে৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৭ শতাংশ বহিরাগমন বাড়ে-কমে মরসুম অনুযায়ী৷ বছরে একবার কিংবা দুবার৷

অর্থনৈতিক কারণই মূলত দায়ী: তুহিন ঘোষ

 ভারতে এই সমীক্ষার ভারপ্রাপ্ত ছিলেন পরিবেশ ও সমূদ্রবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তুহিন ঘোষ৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে বার্তালাপে তিনি বললেন, ‘‘সাধারণ জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক কারণটাকেই মূলত দায়ী করেন৷ ঘর-সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে, তারজন্য অন্যত্র য়েতে বাধ্য হচ্ছে৷ কিন্তু যখন আমরা প্রশ্ন করি, আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে কেন, তখন ওরা ধীরে ধীরে স্বীকার করতে থাকে, কৃষি উত্পাদন কমে গেছে, চাষাবাদের খরচ বেড়ে গেছে৷ কৃষিকাজে আগে যে লাভ হতো, এখন তা হচ্ছে না ইত্যাদি৷ তাই জমির বেশির ভাগ অন্যদের দিয়ে দিতে হচ্ছে৷ যেমন ধরুন, কারো হয়ত ১০ বিঘা জমি আছে, তারমধ্যে তিন বিঘা রেখে বাকিটা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে হচ্ছে৷''

অধ্যাপক তুহিন ঘোষ আরো বললেন, ‘‘এখনকার দিনে মাত্র একটা পেশা নিয়ে থাকলে চলে না ওদের৷ সবাইকে সব ধরনের কাজ করতে হয়৷ ওদের জন্য বিকল্প কাজ মাছ চাষ কিংবা খালবিলে মাছ ধরা৷ সেক্ষেত্রেও ওরা বলে, মাছ আর আগের মতো পাওয়া যায় না৷ অনেক লোক মাছ ধরে, তাই মাছ কম পাই৷ শুধু তাই নয়, সরকারের কিছু পলিসির জন্য সব জায়গায় মাছ ধরতে দেওয়া হয় না৷ তাছাড়া জলধারায় পরিবর্তন হচ্ছে৷ নদীতে চড়া পড়ছে৷ মাছের প্রজননের সময় মাছ বেশি পাবার কথা, তা পাচ্ছি না– এই ধরণের কথাবার্তা বলে থাকে ওরা৷ কিন্তু আমরা সমীক্ষাকালে দেখেছি, জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষনীয় একটা প্রভাব রয়েছে এর পেছনে৷ ওদের চিন্তায় সেটা আসে না৷ অন্যভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জানতে চাইলে জলবায়ুর প্রভাবটা অনেকাংশে মেনে নেয়৷   কৃষিভিত্তিক জীবন থেকে ওরা ক্রমশ সরে আসছে৷ অন্যত্র চলে যাচ্ছে কাজের সব্ধানে৷ যেহেতু ওদের অন্য কাজে পেশাগত দক্ষতা নেই, তাই অসংগঠিত ক্ষেত্র, যেমন, ইমারত নির্মাণ শিল্পে মজুর হিসেবে কাজ পায়,'' ডয়চে ভেলেকে বললেন পরিবেশ ও সমূদ্রবিজ্ঞানি তুহিন ঘোষ৷

বহিরাগমনের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের  সংখ্যায় এত বেশি ফারাকের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সমাজটা প্রধানত পুরুষশাসিত৷ বাইরে গিয়ে কাজ করবে পুরুষ, নারী নয়৷ পুরুষ রোজগার করে টাকা পাঠাবে, ঘরের মহিলা তাই দিয়ে সংসার সামলাবে৷ মহিলারা বাইরে যাবে কিনা, তা ঠিক করবে বাড়ির পুরুষ৷ তুলনা করলে মহিলাদের ওপর সংসারের দায়-দায়িত্ব অনেক বেশি৷ সংসার সামলাবে, বাচ্চা সামলাবে, জমিজমা দেখভাল করবে৷ এইসব কারণে মহিলাদের মাইগ্রেশান কম হয়, হলেও কোলকাতা কিংবা তার আশপাশ এলাকায়৷ যেমন নার্সিং হোমে আয়া হিসেবে, বেবি সিটার হিসেবে, রাঁধুনি হিসেবে অথবা পরিচারিকা হিসেবে৷ পুরুষরা কাজ পায়, নির্মাণ শিল্পে মজুর হিসেবে৷ বর্ষার সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকলে ফিরে যায় নিজের এলাকায়৷ জমিজমার সিজন্যাল কাজ করে, মাছ ধরে৷ সারা বছরের আহারের সংস্থান করে৷'' এই মাইগ্রেশন স্রেফ বদ্বীপ অঞ্চলেই কেন? অন্যান্য জায়গায় নয় কেন? ‘‘অন্য জায়গাতেও হয়৷ তবে ব-দ্বীপ এলাকায় পরিবেশগত প্রভাবটা পড়ে বেশি৷''

ডেকমা সমীক্ষায় দেখা গেছে, বহিরাগমনে পুরুষ ও মহিলাদের গড়পড়তা বয়স কম৷ কার্যত ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতির সঙ্গে ব-দ্বীপ এলাকার জনগোষ্ঠী ঠিক মানিয়ে নিতে পারছে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য