1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে সাংবাদিক গ্রেপ্তার নিয়ে বিতর্ক

২ জুলাই ২০২০

আরামবাগ টিভির সম্পাদক সফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে। পুলিশ বলছে, আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগে তাঁকে ধরা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে খবর করার জন্য তাঁকে ধরা হলো।

https://p.dw.com/p/3eg9s
ছবি: picture-alliance/abaca/N. Fauque

আরামবাগ টিভি হলো হুগলি জেলার মহকুমা শহর আরামবাগের একটি ইউটিউব চ্যানেল। তার কার্যনির্বাহী  সম্পাদক সফিকুল ইসলামকে সম্প্রতি ভোরবেলায় পুলিশ গিয়ে বাড়ির দরজা ভেঙে গ্রেপ্তার করে। তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকেও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেপ্তার করা হয় আরামবাগ টিভি-র সাংবাদিক সূরয আলি খানকেও। তাঁদের সাতদিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

পুরো ঘটনার ভিডিও বাংলার বার্তা নামে ইউটিউব চ্যানেলে দেখিয়েছেন সাংবাদিক সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি বলেছেন, ''সব চেয়ে দুঃখের কথা হলো, সফিকুলের চার বছরের ছেলে ও নয় বছরের মেয়েকেও লক আপে পুরে দেওয়া হয়েছিল। সফিকুল মুক্তকণ্ঠে কথা বলেছেন সেটাই তাঁর অপরাধ? '' ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ দরজা ভেঙে সফিকুলের বাড়িতে ঢুকছে।

সফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি সরকারি গাছ কাটার জন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ হজার টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। না দিলে তাঁর চ্যানেলে খবর দেখানোর হুমকি দিয়েছিলেন।

তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় টুইট করে বলেছেন, ''জনগণের টাকা অস্তিত্বহীন ক্লাবের নামে বিলি করার খবর দেখানোর জন্য আরামবাগ টিভির সফিকুল ইসলামের গ্রেপ্তারসংবাদমাধ্যমের মৌলিক অধিকারের বিষয়টি আবার তুলে ধরেছে।''

কিছুদিন আগে সফিকুল তাঁর চ্যানেলে দেখিয়েছিলেন যে, লকডাউনের মধ্যে আরামবাগ থানায় ৫৭টি ক্লাবকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে অন্য সংবাদমাধ্যমে সেই খবর হয়। সেই খবরের জন্যই সফিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে রাজ্যপাল মনে করেন।

বিধানসভায় সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী টুইট করে বলেছেন, ''সরাসরি পুলিশের ঘুষ খাওয়ার ছবি চ্যানেলে দেখানোর তিনদিনের মাথায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। বাড়ি ভেঙে ভোরবেলা সফিকুল তাঁর স্ত্রী ও বাচ্চাদের গ্রেপ্তার করা হয়।''

ডয়চে ভেলেকে সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ''প্রশাসন কার্যত তৃণমূলের পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে। আরামবাগের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। পুলিশের মাধ্যমে তৃণমূল বহু ক্লাবকে টাকা পাঠিয়েছে, অনেক ক্লাবের অস্তিত্ব নেই। সে সব ফাঁস হয়ে গিয়েছিল বলে ছেলেটিকে এ ভাবে অপদস্থ করা হলো।'' সুজনও মনে করেন, যে কারণ দেখিয়ে পুলিশ সফিকুলকে গ্রেপ্তার করেছে, সেটা প্রকৃত কারণ নয়। তাঁর মতে, আসল কারণ হলো, সফিকুলের করা খবর অস্বস্তিতেফেলছিল ক্ষমতাসীন দলকে।  

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''আমি ফেসবুকে এ নিয়ে লিখেছি। আমি বলেছি, মালিকের চাপে, ভয়ে অনেক সংবাদমাধ্যম অনেক ধরনের খবর করা থেকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে, তখন সফিকুলের আরামবাগ টিভি নির্ভয়ে সেই সব খবর করে চলছিল। খুব উদ্বেগের মধ্যে আছি। সাংবাদিক সফিকুল ইসলামের মুক্তি চাই।''

প্রশ্ন হলো, যে অভিযোগে সফিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার জন্য অত ভোরে বাড়ি ভেঙে ঢোকার কি কোনও দরকার ছিল? তাঁর স্ত্রী ও বাচ্চা ছেলে ও মেয়েকেও থানায় নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল? না কি, এই ভাবে গ্রেপ্তারের পিছনেও একটা বার্তা আছে সরকারের অন্য সমালোচকদের প্রতি? সন্ময়ের চ্যানেলে সফিকুলের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, ''সফিকুল কী করেছে? সে কি চুরি বা ডাকাতি করেছে? রাত ১২টা ১০ মিনিটে থানায় এফআইআর করেছে একজন যে না কি গাছ কাটছিল। সরকারের সমালোচনা করলে এ ভাবে সাজা পেতে হচ্ছে?''

গত মে মাসে এবিপি আনন্দের খবরে বলা হয়েছিল, লকডাউনের নিয়ম ভেঙে সফিকুলের সমর্থনে সকালে মিছিল হয় এবং রাতে তাঁর বাড়ি আক্রান্ত হয়। তখনও সফিকুল অভিযোগ করেছিলেন, তৃণমূলের লোকেরাই তাঁর বাড়ি আক্রমণ করেছিল।

পশ্চিমবঙ্গে, ভারতের অন্য রাজ্যে, কেন্দ্রীয় স্তরে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নানা অভিযোগ উঠছে। বিতর্ক হয়েছে ও হচ্ছে। সেই তালিকায় আরেকটি ঘটনা যুক্ত হলো বলে বিরোধীরা দাবি করছেন।  

জিএইচ/এসজি(বাংলার বার্তা, এবিপি আনন্দ)