1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌পশ্চিমবঙ্গে নিগৃহীত শিক্ষকরা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২০ আগস্ট ২০১৯

পূর্ণ সময়েরই শিক্ষক হলেও খাতায়–কলমে কেউ পূর্ণ শিক্ষক নন, পার্শ্ব–শিক্ষক৷ খুব কম সাম্মানিকের বিনিময়ে কাজ করেন৷ নিজেদের ন্যায্য পাওনা চাইতে গিয়ে মার খেলেন পুলিশের!‌

https://p.dw.com/p/3OB1h
Indien Westbengalen | Polizeigewalt Protest "para-teacher" für Gleichstellung mit regulären Lehrern
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

সরকারি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্কুলে পার্শ্ব–শিক্ষকের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩০৫৷ কিন্তু পার্শ্ব–শিক্ষকদের নিজেদের হিসেবে ওঁদের সংখ্যা ৪৮ হাজার মতো৷ এঁরা কেউ পূ্র্ণ সময়ের শিক্ষকদের মতো মাস গেলে বেতন পান না৷ ওঁদের একটা ভাতা দেওয়া হয়, যার পোশাকি নাম ‘‌সাম্মানিক'৷ তার পরিমাণ এতই কম, যে পার্শ্ব–শিক্ষকদের তাতে সম্মানরক্ষা তো হয়ই না, এমনকি সংসার চালানোও অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ উচ্চ প্রাথমিক স্তরে যে পার্শ্ব–শিক্ষক ক্লাস নেন, তাঁর মাসিক ভাতা ১৩ হাজার টাকা৷ ২০১৫ সাল থেকে ‘এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ড ফান্ড' বাবদ কিছু টাকা কাটা চালু হয়েছে৷ এছাড়া বাদ যায় বৃত্তি কর৷ ওঁরা হাতে পান ১১ হাজার ৩৩০ টাকা৷ এই নিখুঁত হিসেব ডয়চে ভেলেকে দিলেন বর্ধমানের এক সরকারি স্কুলের পার্শ্ব–শিক্ষক চন্দ্রচূড় গাঙ্গুলী৷ আর প্রাথমিক স্তরের পার্শ্ব–শিক্ষকরা ১০ হাজার টাকা পান, হাতে আসে আট হাজার ৮০০ টাকা৷ আজকের দিনে এই সামান্য টাকায় যেহেতু চালানো সম্ভব নয়, ওরা নানা ধরনের কাজ করতে বাধ্য হন৷ তার মধ্যে হকারি, ভ্যান রিকশা চালানোর মতো কায়িক পরিশ্রমের কাজও আছে৷ ফলে বাধ্য হয়েই ওরা দাবি তুলেছেন— সমান কাজ, সম বেতন৷ অর্থাৎ, যেহেতু একজন পূর্ণ শিক্ষক রোজ যে কাজ করেন, পার্শ্ব–শিক্ষকরাও সেই কাজই করেন, ওঁদের পারিশ্রমিকও সমান হওয়া উচিত বলে ওঁরা মনে করেন এবং সেই দাবিতে সম্প্রতি পথে নেমেছিলেন৷

‘পুলিশ আমাদের আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে দিল’

কিন্তু সরকারের তরফে সহানুভূতি বা আশ্বাসের বদলে ওরা পেলেন পুলিশের লাঠি৷ পার্শ্ব–শিক্ষিকা সুচিত্রা দাস ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ওরা প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষক–শিক্ষিকা ১৬ আগস্ট কলকাতায় জমায়েত হয়ে মিছিল করে যান পূর্ব কলকাতার সল্ট লেকের বিকাশ ভবনে, যেখানে রাজ্য শিক্ষা মন্ত্রকের দপ্তর৷ লক্ষ্য ছিল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির হাতে নিজেদের দাবিদাওয়ার লিখিত সনদটি তুলে দেওয়া৷ কিন্তু রাজ্যের একটি আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে তলব পড়ায় শিক্ষামন্ত্রীকে সেদিন সিবিআইয়ের দপ্তরে হাজিরা দিতে হয়েছিল৷ ফলে তার দেখা পাননি তারা৷ তখন বিকাশ ভবনের সামনেই ধর্নায় বসার সিদ্ধান্ত হয়৷ সুচিত্রা দাস জানাচ্ছেন, পুলিস তার পর কীভাবে মিথ্যে কথা বলে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়, এবং কার্যত তাড়া করে ট্রেনে–বাসে জোর করে উঠিয়ে দিয়ে শহরছাড়া করার চেষ্টা করে৷ তার পর শেষ পর্যন্ত কল্যাণীতে অবস্থানরত শিক্ষক–শিক্ষিকাদের ওপর পড়ে পুলিশের লাঠি৷ বেদম মারা হয়, এমনকি নারীদেরও৷ তাঁদের শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করে পুলিশ৷ ‘আমরা ‌কিন্তু  কেউ ফিরে যাইনি!‌'‌ তেজিয়ান গলায় বললেন সুচিত্রা৷

‘শিক্ষকমহলের অনেকেই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন’

শিক্ষিকাদের ওপর পুরুষ পুলিশকর্মীদের অত্যাচারের ঘটনাটি বিশেষ করে ভাইরাল হয়েছে সোশাল মিডিয়ায়৷ সাড়া পড়েছে, জোরালো প্রতিবাদ আসছে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে৷ চিত্রপরিচালক অপর্ণা সেন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে টুইট করেছেন, যে আপনারই দায়িত্ব দোষীদের শাস্তি দেওয়ার!‌ অপর্ণা জানিয়েছেন, তিনি শহরে থাকলে প্রতিবাদী পার্শ্ব–শিক্ষকদের পাশে গিয়ে অবশ্যই দাঁড়াতেন৷ ‘‌‘শিক্ষকদের লাঠিপেটা করছে পুলিশ, মহিলাদের শ্লীলতাহানি করেছে— কী হচ্ছে টা কী আমাদের রাজ্যে!‌'‌', টুইটে ক্ষোভ অপর্ণার৷

বাংলার শিক্ষকসমাজও এই ঘটনার নিন্দায়, প্রতিবাদে সরব৷ ‘‌‘সরকারপন্থী কয়েকজন বাদ দিয়ে, সকলেই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ আজও করে চলেছেন৷ রাস্তায় নেমেছেন, নামছেন, মিছিল করছেন'',‌ বললেন চন্দ্রচূড় গাঙ্গুলী৷ তিনি এক প্রবীণ শিক্ষিকার হেনস্থার কথা জানালেন, যিনি শরীরে জড়িয়ে রেখেছিলেন জাতীয় পতাকা৷ সেই পতাকাও পুলিশ টেনে হিঁচড়ে কেড়ে নিয়ে পায়ে মাড়িয়েছে৷ চন্দ্রচূড় বলছেন, এই বর্বরতার প্রতিবাদ যাতে সারা সমাজে এবার ছড়িয়ে পড়ে, সেই চেষ্টা ওরা করছেন৷ আন্দোলন থামছে না, থামার প্রশ্নই নেই৷

আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি চিরাচরিত নিয়মে এখন রক্ষণাত্মক ভঙ্গীতে৷ শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠি, শিক্ষকদের অপমান নিয়ে তাঁর পাল্টা যুক্তি, সম্মান দিয়েছি বলেই ক্ষমতায় এসে ওঁদের ভাতা বাড়িয়েছি৷ অসম্মানের প্রশ্ন উঠছে কেন!‌ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য