1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গুর দৌরাত্ম্য

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৭ নভেম্বর ২০১৯

ডেঙ্গু মহামারীর আকার নিয়েছে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায়৷ সরকারি প্রচার ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত৷ যদিও সাধারণ মানুষ আঙুল তুলছে পুরপ্রশাসনের দিকে৷

https://p.dw.com/p/3ScBH
ছবি: DW/P. Samanta

কলকাতায় ইদানীং মশার উৎপাত ফের বেড়েছে৷ বিকেল গড়াতেই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে দরজা-জানালা৷ মশার দৌরাত্ম্য কতটা, তা তুলে ধরেছে সাম্প্রতিক একটি ঘটনা৷ বলিউডের বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী সোনু নিগম সল্টলেকের একটি মঞ্চে গান গাইতে উঠেছিলেন৷ তাঁকে ছেঁকে ধরে মশা৷ একাধিক পাখা লাগিয়েও মশা তাড়ানো যায়নি৷ সোনু বিরক্তিতে বলে ওঠেন, ‘‘এত মশা, গান গাইলে মুখে ঢুকে পড়ছে৷’’ এই ছবিটাই কলকাতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীকী হয়ে উঠেছে৷ হাজার হাজার মানুষ মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে৷ চিকিৎসকদের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে ডেঙ্গুর ছদ্মবেশ৷ অনেক ক্ষেত্রে জ্বর হচ্ছে না, কিন্তু ডেঙ্গু হানা দিচ্ছে অন্য উপসর্গের মাধ্যমে৷

Indien Denguefieber
সচেতনতামূলক কার্যক্রমছবি: DW/P. Samanta

ডেঙ্গু রুখতে একেবারে শুরু থেকে প্রচারে নেমেছিল বিভিন্ন পুরসভা৷ বিভিন্ন জায়গায় হোর্ডিং টাঙানো হয়েছে, মাইকে করে চালানো হয়েছে প্রচার৷ সেখানে জল জমা থেকে আরম্ভ করে আবর্জনা ফেলা, নানা বিষয়ে পুরবাসীকে সতর্ক করেছিল প্রশাসন৷ ডেঙ্গু রোখার এই আগাম সাবধানতা যে কোনো কাজে আসেনি, তার প্রমাণ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা৷ জানুয়ারি থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার মানুষ৷ সেই সংখ্যাটা গত এক দেড় মাসে বেড়েছে ১১ হাজার৷ সব মিলিয়ে চলতি বছরে মোট ২৩ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত৷ পুরসভার এক অফিসারেরও মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুর কবলে৷ কলকাতা পুরসভার ২নং বরোর সমাজকল্যাণ দপ্তরের ম্যানেজার শান্তনু মজুমদার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান৷ প্লেটলেট নেমে গিয়েছিল ২০ হাজারের নীচে৷ বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে মারা যান অফিসার৷ তাঁর বাবাও ডেঙ্গুতে আক্তান্ত হয়ে ঐ হাসপাতালে ভর্তি৷ হাওড়া, লেক টাউন, দক্ষিণ দমদম, হাবড়া, বনগাঁ, দেগঙ্গা, সল্টলেকের অনেক পরিবারেই একাধিক সদস্য হাসপাতালে ভর্তি৷ 

Indien Denguefieber
ছবি: DW/P. Samanta

এত মৃত্যুর ফলে সেই পুরনো বিতর্ক সামনে এসেছে, এই মৃত্যু মিছিলের দায় কার? সাধারণ মানুষ আঙুল তুলছে পুরসভার দিকে৷ পুরসভার তরফে কেউ কেউ বলছেন, মানুষের সচেতনতার অভাবেই লাগামছাড়া হয়ে পড়ছে ডেঙ্গু৷ কলকাতার ৫৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ৭ নং বরোর চেয়ারম্যান জীবন সাহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানুষ মোটেই সচেতন নয়৷ জল জমে থাকছে, যত্রতত্র জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে৷ সেটাই মশার আঁতুড়ঘর৷ অথচ আমরা মাইকিং করেছি, লিফলেট বিলি করেছি৷ বাড়ি বাড়ি পুরকর্মীরা গিয়েছেন, কী কী করতে হবে বলে এসেছেন৷ তবু মানুষ সতর্ক হচ্ছেনা৷ সতর্ক না হলে ডেঙ্গু কিছুতেই রোখা যাবে না৷’’ যদিও সাধারণ মানুষের বক্তব্য আলাদা৷ ভাটপাড়া পুরসভার বাসিন্দা রজতেন্দ্র সরকারের অভিযোগ, ‘‘জঞ্জাল নির্দিষ্ট জায়গায় ফেললেও প্রতিদিন সাফ হয় না৷ ভ্যাটেই তা পড়ে থাকে৷ নির্দিষ্ট সময় অন্তর ব্লিচিং পাউডার বা ডিডিটি স্প্রে করা হয় না৷ নর্দমায় নোংরা জমে থাকায় জল নিকাশিতে সমস্যা হয়৷ আমরা এসব কাজের জন্যই তো পুরসভাকে কর দিই৷’’

‘ফাঁকা মাঠে জঞ্জাল ফেলার প্রবণতা রয়েছে’

সর্বত্র এই ছবিটা আবার এক নয়৷ কলকাতা পুরসভার ১২৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সংহিতা দাস বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে মানুষ যথেষ্ট সচেতন৷ আমরা প্রচারের সুফল পেয়েছি৷ খুব বেশি লোক এখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হননি৷ সারা বছর ধরেই আমরা ডেঙ্গু রোখার কাজটা চালাই৷’’ তবে জঞ্জাল জমার সমস্যার কথা তিনি মেনে নেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ফাঁকা মাঠে জঞ্জাল ফেলার প্রবণতা রয়েছে৷ কে আবর্জনা ফেলে যাচ্ছে, তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না৷ কার জমিতে জঞ্জাল পড়ছে, সেটাও সবসময় বার করা যায় না৷’’

আবার এমনও দেখা যাচ্ছে, খোদ হাসপাতালেই জন্মাচ্ছে ডেঙ্গুর মশা৷ এমনই ছবি দেখা গিয়েছে জেলাস্তরের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে৷ উত্তর হাওড়ার টিএল জয়সওয়াল হাসপাতালের বন্ধ হয়ে যাওয়া জরুরি বিভাগের ঘরে মশার লার্ভাদের বাড়বাড়ন্ত৷ বর্ষার জমা জল এই হেমন্তেও চোখে পড়বে সেখানে৷ অথচ এখানেই প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার জন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন৷ হাসপাতালের সুপার সুখেন্দু বিশ্বাস ভয়ে ফুল স্লিভ জামা আর ট্রাউজার্স পরে থাকছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে বিষয়টা জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি!’’