1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডাক্তারদের নির্বাচনেও ছাপ্পার অভিযোগ, অশান্তি !

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১০ মার্চ ২০২২

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন মানেই উত্তেজনা। চিকিৎসক সংগঠনের নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হলো না। কলকাতায় শাসক দলের চিকিৎসকদের দুই গোষ্ঠীর টানাপোড়েনে তুমুল অশান্তি আদতে কিসের ইঙ্গিত?

https://p.dw.com/p/48HQL
Symbolbild - Rollstuhl
প্রতীকী ছবিছবি: Getty Images/AFP/J. Evrad

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন মানেই উত্তেজনা। চিকিৎসক সংগঠনের নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হল না। কলকাতায় শাসক দলের চিকিৎসকদের দুই গোষ্ঠীর টানাপোড়েনে তুমুল অশান্তি আদতে কিসের ইঙ্গিত?

চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন(আইএমএ)। তার পরিচালন সমিতির নির্বাচন ছিল গত শনিবার। শাসক দলের ভিন্ন ভিন্ন শিবির ছিল যুযুধান। এই নির্বাচন ঘিরে নজিরবিহীন গন্ডগোল। বাকবিতন্ডা থেকে পথ অবরোধ, ছাপ্পা থেকে ভুয়ো ভোটার, এসব নিয়ে দিনভর উত্তেজনা ছিল সংগঠনের লেনিন সরণি কার্যালয়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ মোতায়েন ছিল বটে, তবে গন্ডগোলের মাত্রা এতটাই ছিল যে ভবনের গেট পর্যন্ত ভেঙে যায়। চাপানউতোরের মধ্যে সংগঠনের বর্তমান সভাপতি, তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি ফের সভাপতি নির্বাচিত হন। কোভিডের সময় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া অনির্বাণ দোলুই নির্মলের বিরোধী গোষ্ঠী থেকে সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন।

অর্জুন দাশগুপ্ত

এই বাংলায় নির্বাচনের সমার্থক হয়ে উঠেছে সহিংসতা। অশান্তি ছাড়া গত কয়েক দশকে কোনো নির্বাচনই সম্পন্ন হয়নি। সাম্প্রতিক পুরভোটে একই ধরনের ছবি দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলি যে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত, সেগুলির ক্ষেত্রেই শুধু অশান্তি হচ্ছে, তা নয়। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক নির্বাচন সে কথাই বলে। সমাজের অগ্রণী অংশ হিসেবে স্বীকৃত যে চিকিৎসকরা, তাদের সাংগঠনিক নির্বাচনেও এই ছবি কেন? সাধারণভাবে অন্য নির্বাচনে বুথ দখল, বোমাবাজি-সহ সন্ত্রাসের যে অভিযোগ ওঠে, তার ছায়া কেন দেখা গেল চিকিৎসকদের মতো সমাজের এগিয়ে থাকা অংশের ক্ষেত্রে?

ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম এই ঘটনায় বিস্মিত, বিচলিত। সংগঠনের পক্ষে অর্জুন দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ওই সংগঠনের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় আমরা এখন অন্য সংগঠন করছি। কিন্তু হাজার হোক ওটা তো চিকিৎসকদের সংগঠন। তাদের এই আচরণ আমাদের মাথা হেঁট করে দিয়েছে। শুধুমাত্র সেবা করা বা সংগঠনে পদ পাওয়ার লোভে কেউ এত দূর এগোতে পারেন না। এর পিছনে অর্থ বা ক্ষমতার গন্ধ আছে নিশ্চয়ই।”

চিকিৎসকেরা যদি এ কাজ করেন, তাহলে সমাজ কী শিখবে? বিষয়টিকে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখার চেষ্টা করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়।

পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতার রাজনীতির পরম্পরাকে তুলে ধরেছেন তিনি। নীলাদ্রি বলেন, "সিদ্ধার্থশংকর রায়ের কংগ্রেস আমল থেকে সিপিএম হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস, সেই একই ট্র্যাডিশন চলছে। দখল করে নেওয়ার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছে রাজনৈতিক দলগুলি। এই সংস্কৃতি সর্বত্রই সঞ্চারিত হচ্ছে। সে কারণেই চিকিৎসকদের ভোটেও অশান্তির ছবি দেখা গেল।”

বহু বছর ধরে বাংলার রাজনীতিকে পর্যবেক্ষণ করছেন প্রবীণ সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রায়। আইএমএ-র নির্বাচনে গন্ডগোল প্রসঙ্গে তার মন্তব্য, "চিকিৎসক বা আইনজীবীদের আন্দোলনে রাজনীতি নতুন কিছু নয়, কিন্তু এ ধরনের নগ্ন উপদলীয় কোন্দল ও মস্তানতন্ত্র আগে দেখিনি। বাম-কংগ্রেস আমলে অফিসের মধ্যে দুটো প্যানেলের লড়াই হত। কিন্তু জনসমক্ষে দু'দল মারামারি করছে বা পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে, এ দৃশ্য কলকাতা আগে দেখেনি।”

পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ঘনিষ্ঠ মহলে থাকার সুবাদে অনেকেই সুবিধা প্রত্যাশা করেন। সে কারণেই প্রার্থীকে জেতাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন কর্মীরা। এই ব্যক্তিস্বার্থের বিষয়টি সর্বত্র সঞ্চারিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রধান সুরিতা সাহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "চিকিৎসকদের বদলিতে অস্বচ্ছতা আছে। কে, কোথায় বদলি হবেন তা নিশ্চিত হয় সংগঠনের কর্তাদের হস্তক্ষেপে। তাই সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা থাকে। একই কারণে তাদের জেতানোর ইচ্ছা তৈরি হয় ব্যক্তিস্বার্থ থেকে।”

বিভিন্ন পেশাভিত্তিক সংগঠন সংশ্লিষ্ট পেশার মানুষদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গে কর্মচারী আন্দোলনের উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু তা কি ক্রমশ স্বার্থসিদ্ধির যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে? এই যুক্তিকে আর একটু প্রসারিত করে বিশ্বজিৎ রায়ের বক্তব্য, "সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করছে সরকার। এটা ভালো ব্যাপার। কিন্তু ক্রমশ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)মডেলের ঝোঁক বাড়তে থাকায় দুর্নীতিও বাড়ছে। বাইরের প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে চলছে হাসপাতালগুলি। এ সবের ক্ষেত্রে কর্তাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবিধা তো আছেই, এই স্বার্থের জায়গা থেকেই সংঘাত বাড়ছে।”

সম্প্রতি একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে, স্কুলেই শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এ বার ভিন্ন কারণে চিকিৎসকদের প্রকাশ্যে মারমুখী হতে দেখা গেল। সুতরাং সমাজের মূল্যবোধের জায়গাটা কি ক্রমেই নড়বড়ে হচ্ছে? বিশ্বজিৎ বলেন, "আগে সামাজিক ক্ষেত্রে মানুষের ভরসাস্থল ছিলেন শিক্ষক,

ডাক্তাররা। এদের সম্পর্কে ইদানীং অশ্রদ্ধা বেড়ে চলেছে। এ সব ঘটনায় তারা সমাজের চোখে আরো খাটো হয়ে পড়বেন।”