পশ্চিমবঙ্গে এখনো বন্ধ লোকাল ট্রেন
করোনার লকডাউন কার্যত উঠে গেছে। খুলে গেছে অফিস-শপিং মল-বাজার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখনো বন্ধ লোকাল ট্রেন। সমস্যায় সাধারণ মানুষ।
লকডাউনে ট্রেন বন্ধ
করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর বেশ কয়েকমাস বন্ধ ছিল পশ্চিমবঙ্গের লোকাল-ট্রেন। তারপর চলাচল শুরু হলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তা পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় তিনমাস বন্ধ রয়েছে লোকান-ট্রেন। আপাতত গণপরিবহনের অন্যান্য মাধ্যমগুলোয় কিছুটা ছাড় দেওয়া হলেও, লোকাল-ট্রেন নিয়ে কোনও আশার বাণী শোনাতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী।
স্টাফ স্পেশাল
হাতে গোনা কয়েকটি স্টাফ-স্পেশাল চললেও লোকাল-ট্রেনের এই বিপুল চাহিদা তা দিয়ে মেটানো সম্ভব নয় বলেই মনে করেন নিত্যযাত্রীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অমানুষিক ভিড় ঠেলে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় যতদিন না টিকাকরণ সম্পন্ন হচ্ছে, ততদিন তিনি লোকাল-ট্রেন চালানোর ঝুঁকি নেবেন না। তিনি আরও জানান যে, সেপ্টেম্বরে সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের জন্যই তিনি আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে চান।
চা বিক্রেতার বক্তব্য
দমদম ক্যাণ্টনমেণ্ট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ওপরেই চায়ের দোকান পরেশ নস্করের। লোকাল-ট্রেন বন্ধ তাই যাত্রীও নেই। যাত্রী নেই তাই বিক্রিও নেই। রুটিরুজিতে টান পড়েছে।
নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভ
মফস্বল থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করেন কলকাতায়। রোজগারের তাগিদে বাধ্য হয়ে এখনও যাতায়াত করতে হচ্ছে। অসম্ভব ভীড় ঠেলে দেড়-ঘণ্টার পথ পাড়ি দেওয়া হরিদাসের কাছে কষ্টকর। ''চালাতে হলে ঠিক করে চালাক, না হয় বন্ধ করে দিক। আমরা না খেতে পেয়ে মারা যাই।'' ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন হরিদাস।
রেলকর্মীদের অবস্থা
পেশায় রেলকর্মী রাজেশ সিং জানিয়েছেন, এই ভীড় ঠেলে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে স্টাফ-স্পেশালে যাতায়াত করতে হ’লে লকডাউনের কোনও অর্থই থাকে না। প্ল্যাটফর্মে আসা একটি ট্রেনের দিকে দেখিয়ে বলেন, ''আপনার মনে হচ্ছে এ’টা লকডাউন চলছে?''
লাটে উঠেছে রাজমিস্ত্রির কাজ
স্টাফ-স্পেশালের অমানুষিক ভিড় ঠেলে সকালে হাবড়া থেকে দমদমে এসেছিলেন মিনতি বিশ্বাস। পেশায় রাজমিস্ত্রি। আশা নিয়ে এসেছিলেন, ঠিকে কাজ জুটে যাবে। জোটেনি। বেলা বারোটা পর্যন্ত বসে থেকে আবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ''বাইরে যে কিছু কিনে খাব সেই পয়সাও নেই। কাজ না জুটলে না খেতে পেয়ে মরতে হবে।''
দোকান মালিকের হতাশা
স্টেশনের ঠিক বাইরে দোকান মানিক সাহার। ট্রেন নেই, যাত্রী নেই তাই বিক্রিবাটা সিকিভাগের নীচে নেমে এসেছে। বাড়িতে তিনি একমাত্র রোজগেরে।
রিকশা চালকের হাহাকার
স্টেশন থেকে বেরিয়ে নিত্যযাত্রীদের অনেকেই সাইকেল রিকশায় চেপে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছান। তেমন যাত্রীর আশায় পথ চেয়ে বসে থাকেন শিব নারায়ণ মণ্ডল। লোকাল-ট্রেন বন্ধ, তাই খদ্দেরও নেই। ''আমাদের এখন অসুবিধের শেষ নেই। ট্রেন নেই, ভাড়া নেই, পেটে খাবার নেই”'' হতাশা ফুটে ওঠে শিব নারায়ণের গলায়।
অসহায় ফুল বিক্রেতা
বেঁচে থাকার তাগিদে এখন রাত দেড়টার সময় লরি করে বনগাঁ থেকে রওনা দেন শিবাণী মণ্ডল। ভোর চারটেয় পৌঁছে গোরাবাজার অঞ্চলে পুজোর ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেন। আগে ভোরভোর রওনা দিয়ে ট্রেনে চেপে চলে আসতেন। এখন স্টাফ-স্পেশাল চললেও পুলিশের ভয়ে তাতে মাল-পত্র নিয়ে উঠতে সাহস পান না শিবাণী।
অটোচালকের কথা
দমদম ক্যাণ্টনমেণ্ট থেকে নাগেরবাজার রুটে অটো চালান রাজু রায়। ''আগে যখন ট্রেন চলতো, সারাদিনে দেড়হাজার টাকার ওপরে ভাড়া খাটতাম। এখন সারাদিনে পাঁচশো টাকার ভাড়াও খাটতে পারিনা। গ্যাস ভরার টাকা পর্যন্ত নেই।'' হতাশ গলায় প্রশ্ন করলেন রাজু।