1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌পশ্চিমবঙ্গ নামছে মদ ব্যবসায়

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১২ অক্টোবর ২০১৮

পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় সরকারি মদের দোকান এবং পানশালা খোলার সিদ্ধান্ত নিলো মমতা ব্যানার্জির আবগারি দপ্তর৷ মদের ক্রমশ বেড়ে চলা বিক্রিই এমন সিদ্ধান্তের কারণ৷

https://p.dw.com/p/36QhV
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Adhikary

চলতি কথায় বলে, দুটি ব্যবসার কোনো মার নেই – ওষুধ এবং মাদক৷ দুটি বস্তুই যখন কারো দরকার হয়, না হলে চলে না৷ ফলে শিল্পহীন, চাকরিহীন, কর্মহীন পশ্চিমবঙ্গে অন্তত মদের ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠছে প্রতি বছর, এটাই সরকারকে উৎসাহিত করার পক্ষে যথেষ্ট৷ এ কারণে এক বেনজির সিদ্ধান্ত– সরকার মদের খুচরো বিক্রিতে নামবে৷ এর আগে দেশি মদ এবং আইএমএফএল, অর্থাৎ ইন্ডিয়ান মেড ফরেন লিকার, যাকে চলতি কথায় ‘বিলিতি মদ’ বলা হয়, এই দুই ধরনের মদেরই বাণিজ্যিক সরবরাহের দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজের হাতে নিয়েছিল৷ রাজ্যের সমস্ত মদের দোকান, পানশালা এবং রেস্তোরাঁ, যেখানে মদ বিক্রি হয়, তাদের সবার লাইসেন্স নতুন করে নিতে হয়েছিল৷ এর পরের ধাপ ছিল চলতি বছরের জুলাইয়ে, এক হাজারেরও বেশি নতুন মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত, যা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক শুরু হয়েছিল৷ কারণ, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং পথ দুর্ঘটনা এড়াতে, সামগ্রিকভাবে দেশের সড়কগুলিকে অপরাধমুক্ত রাখতে কেন্দ্র সরকার ২০১৭ সালেই এক নতুন আইন করে জাতীয় সড়কের ১,৫০০ মিটার ব্যাসের মধ্যে মদের দোকান, পানাশালা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার লটারির মাধ্যমে মদের দোকানের লাইসেন্স বিলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সেই বিধি-নিষেধ কার্যত আগ্রাহ্য করছিল৷ তখন মমতা ব্যানার্জির সরকারের যুক্তি ছিল, আশপাশের রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে মদের চোরা কারবার রুখতে, বেআইনি জাল মদের রমরমা ব্যবসা বন্ধ করতে এবং মদ্যপায়ীরা যাতে খাঁটি মদ পান, তা নিশ্চিত করতেই নতুন দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত৷ এবার সরকার নিজেই মদের ব্যবসায় নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় অবশ্য আসল কথাটি বলেছে৷ বলেছে, মদের বিক্রি যে হারে বাড়ছে, সরকার এই খাতে রাজস্ব আদায় আরো বাড়াতে চায়৷ এবং সেই রাজস্ব আদায় করতে চায় সরাসরি, সরকারি মদের দোকান এবং পানশালার মাধ্যমে৷ এখন রাজ্যে প্রায় ৪,৫০০ বেসরকারি মদের দোকান, যার থেকে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়৷ রাজ্যের আবগারি দপ্তরের অনুমান, সরকার সরাসরি মদের ব্যবসায় নামলে এই আদায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ২০ হাজার কোটি হতে পারে৷

প্রাথমিক পর্যায়ে ঠিক হয়েছে, প্রায় ২,০০০ মদের দোকান এবং পানশালা খুলবে সরকার৷ জেলার সেইসব অঞ্চলে, যেখানে এখনো কোনো মদের দোকান নেই৷ এইসব দোকান চালাবে রাজ্য সরকারের বেভারেজ কর্পোরেশন, বা পানীয় নিগম৷ কিন্তু মমতা ব্যানার্জি সরকারের এই বাণিজ্যিক উদ্যোগ নিয়ে সঙ্গত কারণেই আপত্তি, অভিযোগ উঠছে৷ বিশেষত প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে যেখানে মদ্যপানের সমস্যা থেকে সমাজকে মুক্তি দিতে রাজস্ব ক্ষতি সত্ত্বেও মদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সরকার, গুজরাটে দীর্ঘদিন ধরেই মদ কেনা-বেচা নিষিদ্ধ, বিধিনিষেধ আরোপিত আছে মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যেও, মূলত জনস্বাস্থ্য রক্ষার খাতিরে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ হঠাৎ কেন শুঁড়িখানার ব্যবসায় নামল, সে প্রশ্ন উঠছে৷ যেখানে আরও বেশি স্কুল-কলেজ দরকার, সুলভে চিকিৎসার সুযোগ দরকার, আরো বেশি সরকারি হাসপাতাল দরকার, সেখানে কেন মদের দোকানের সংখ্যা বাড়াতে মনোযোগী হলো সরকার?‌

‘‘‌আসলে আগে মদ বিক্রির ক্ষেত্রে যেটুকু আড়াল-আবডাল ছিল, সেটুকুও এবার উঠে গেল!‌’’ ডয়চে ভেলেকে সখেদে বললেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার৷ তাঁর সোজাসাপটা বক্তব্য, ‘‘‌আমি প্রাচীনপন্থি এবং নীতিবাগীশ, তাই হয়ত আমার এরকম মনে হচ্ছে, কিন্তু এ এক সর্বনেশে সিদ্ধান্ত৷ এতে এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে-মেয়েদের কাছেও মদ সুলভ হবে, যার জেরে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে৷ আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হবে৷’’

ওদিকে সোশ্যাল মিডিয়াও সরব ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে৷ তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয়টি হলো— গ্রামে গঞ্জে সরকারি মদের দোকান থেকে মদ বিক্রি হবে, এবার রেশন দোকানে মদের চাট বিক্রির ব্যবস্থা থাকলে ষোলো কলা পূর্ণ হয়৷