1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গ জেতার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিলেন মোদী

গৌতম হোড়
৫ মার্চ ২০২০

লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ বিজয়। তার জন্য এখন থেকেই সক্রিয় হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

https://p.dw.com/p/3Ytvr
ছবি: picture-alliance/AP

আগামী বছরে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে দলকে জেতানোর দায়িত্ব এখন থেকেই নিজের কাঁধে তুলে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবারই তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত দলের কিছু সাংসদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। সেখানে তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চান, রাজ্যে দলের সংগঠনের অবস্থা কী রকম? কী পরিবর্তন দরকার? রাজ্যের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়েও জানতে চেয়েছেন তিনি।

নরেন্দ্র মোদীর কার্যশৈলীর সঙ্গে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা জানেন, তিনি সুপরিকল্পিতভাবে এগোন। অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করেন। বিধানসভা নির্বাচনের কৌশল চূড়ান্ত করার আগে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এভাবেই বৈঠকের পর বৈঠক করেন। সেখানে দলের প্রকৃত অবস্থার কথা তাঁরা জেনে নেন। রাজ্যে দলের সংগঠনকে দিয়ে কতদূর যাওয়া যাবে, কীভাবে সেই সংগঠনকে চাঙ্গা করতে হবে, তার জন্য বাইরে থেকে দলের কতজনকে নিয়ে আসতে হবে, তাদের কী দায়িত্ব থাকবে, সে সব বিষয় ঠিক হয়। এর সঙ্গেই চলে একের পর এক সমীক্ষা। পেশাদারদের নিয়ে সেই সমীক্ষা করানো হয়। বিশ্লেষকরা তার ব্যাখ্যা করেন। সব জায়গা থেকে ইনপুট আসার পর মোদী-শাহ কৌশল চূড়ান্ত করেন।

তবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এ বার একটু বদল দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই এতদিন আগে থেকে উদ্যোগী হয়েছেন, যা তিনি সচরাচর অন্য রজ্যের ক্ষেত্রে হন না। প্রাথমিকভাবে এই কাজটা মূলত করেন অমিত শাহ। এখন অবশ্য অমিত শাহ দলের দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছেন জে পি নাড্ডাকে। প্রধানমন্ত্রীর এ হেন উদ্যোগ থেকে পরিস্কার, পশ্চিমবঙ্গে জয় পাওয়ার জন্য মোদী মরিয়া, তাই এখন থেকে তিনি নিজেই পরিকল্পনার দায়িত্ব হাতে নিলেন।। মোদীর সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''প্রধানমন্ত্রী নিজে কিছু বলেননি। কেবল জানতে চেয়েছেন। সংগঠনের অবস্থার কথাই বিশেষ করে জেনেছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথাও তাঁকে জানিয়েছি।'' বৈঠকে উপস্থিত আরেক বিজেপি নেতা খগেন মুর্মুও ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''প্রধানমন্ত্রী একেবারে জেলা ধরে ধরে জানতে চেয়েছেন, সংগঠনের কী অবস্থা। তিনি নিজে থেকে বেশি কিছু বলেননি।'' যে কোনও বৈঠকের আগে মোদী তৈরি হয়েই আসেন। দলের সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকেও এভাবে তৈরি হয়ে আসা বুঝিয়ে দিচ্ছে, রাজ্যে ভোট প্রস্তুতিকে এখন থেকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন মোদী।  বাংলার ভোট প্রস্তুতি তিনি নিজের কাঁধেই নিয়ে নিয়েছেন।

তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই ঠিক করেছে, তারা এনআরসি, এনপিআর ও সিএএ-র বিরুদ্ধাচরণকেই বিধানসভা ভোটের প্রধান বিষয় করবে। সেইমতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত বলতে শুরু করেছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকলে রাজ্যে কোনওভাবেই এনআরসি হতে দেবেন না। কাউকে কাগজ দেখিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে না। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, রাজ্যে বসবাসকারী সব বাংলাদেশিও ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এসেছেন। ভারতের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। তাঁরা সকলেই ভারতের নাগরিক।  তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে, এই অবস্থানটা শুধু পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু ভোটদাতাকে খুশি করার জন্য নয়, হিন্দুদের মধ্যেও একটা বড় অংশ কাগজ দেখানোর বিরোধী। বিশেষ করে যাঁরা একসময় বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এসেছিলেন। ডয়চে ভেলেকে কিছুদিন আগে নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী বলেছেন, নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য তিনি কাউকে কাগজ দেখাবেন না। তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন। এখনও পর্ষন্ত বিজেপি সিএএ-কেই তুরুপের তাস করে এগোচ্ছিল। বিজেপি নেতাদের প্রচারই ছিল, এনআরসি হবেই। অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে হবে। হিন্দুদের তাতে আশঙ্কার কোনও কারণ নেই।  তারা যদি উদ্বাস্তুও হন তো সিএএ আছে। তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না।

অসমের পর পশ্চিমবঙ্গই হল সেই রাজ্য যেখানে এনআরসি এবং সিএএ প্রসঙ্গ রীতিমতো প্রাসঙ্গিক। এখানে পক্ষে বা বিপক্ষে আবেগ ভোটে জেতার হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। সম্প্রতি দিল্লিতে বিজেপি যেভাবে পুরোপুরি হিন্দুত্ববাদী প্রচার করেছে, তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক, তারা পশ্চিমবঙ্গেও একই পথে চলবে। রাজ্য নেতারা সে কথা বলছেনও।  তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী সব দিক বিচার করবেন, সমীক্ষার ফলাফল দেখবেন, বাংলার লোকের মনোভাব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। তারপর মোদী ঠিক কী পরিকল্পনা করেন, কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেন, নতুন কোনও চমক দেন না কি প্রধাণত এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে এগোন, তা বোঝা যাবে।