পলিমাটি জমে সাগরতীরে নতুন ভূমির সৃষ্টি হচ্ছে
৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা আসলে কতখানি৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে দিনদিন৷ এর ফলে বাড়ছে সমুদ্রের পানির উচ্চতা৷ ফলে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও নেদারল্যান্ডের মত নীচুভূমির দেশগুলো৷
সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের কুতুবদিয়া দ্বীপের ৪০ শতাংশ সমুদ্রের নীচে তলিয়ে গেছে৷ এর ফলে আশ্রয় হারা হয়েছে অনেক মানুষ৷ তাদেরই একজন জাফর আলম৷ ২২ বছর আগে সাগরের পানিতে তার ঘরবাড়ী ডুবে গেছে৷ তখন থেকেই তিনি কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের পাশে ঘর তুলে কোনভাবে পরিবার নিয়ে বাস করছেন৷ সেসময় তার মত আরও প্রায় দেড়শ জনের ঘরবাড়ী এভাবে সাগরের পানিতে ডুবে গিয়েছিলো৷
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে যারা স্থান ত্যাগে বাধ্য হয় তারা হচ্ছে পরিবেশ উদ্বাস্তু৷ কুতুবদিয়া থেকে চলে আসা জানে আলমরা হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রথম পরিবেশ উদ্বাস্তু৷ বিজ্ঞানীদের আশংকা, ভবিষ্যতে এমন আরও বহু পরিবেশ উদ্বাস্তু বাংলাদেশে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের নাসার গডডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ এর পরিচালক জেমস হ্যানসেন মনে করেন এ শতাব্দীর শেষে পুরো বাংলাদেশটাই পরিবেশ উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে৷
তবে বিজ্ঞানীদের এ ধারণার উল্টোটাও কিন্তু ঘটছে৷ ঢাকার সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা সিইজিআইএস জানিয়েছে প্রতিবছর বাংলাদেশের ভুমির পরিমানণ বাড়ছে ২০ বর্গকিলোমিটার করে৷ গত ৩২ বছরে স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি পর্যবেক্ষণ করে তারা এই সিদ্ধান্তে এসেছে৷ তারা আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশের নদীগুলো থেকে যে বিপুল পরিমাণ পলিমাটি এসে জমা হয় সমুদ্রে তার ফলে গত তিন দশকে এদেশের ভূমির আয়তন এক হাজার বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়েছে৷
উল্লেখ্য, প্রতিবছর বাংলাদেশের নদীগুলো একশ কোটি টনেরও বেশী পলিমাটি বহন করে থাকে৷ এবং এক তৃতীয়াংশ পলিমাটি সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাগুলোতে আটকা পড়ে৷ কিন্তু বাংলাদেশের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান জানিয়েছেন, যে গতিতে নতুন ভূমি সৃষ্টি হচ্ছে তার চেয়েও দ্রুত গতিতে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে৷ পরিবেশবিদদের এ হিসাবের পর এখন প্রশ্ন নদীর পলিমাটি কি বাংলাদেশকে সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে?