1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পলিথিন বর্জ্য থেকে তেল

২৪ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশের এক তরুণ উদ্ভাবক পলিথিন বর্জ্য থেকে তেল তৈরির যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন৷ তাঁর এই উদ্ভাবনকে এখন সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করছে সরকার৷

https://p.dw.com/p/36z0b
Plastikmüll am Strand
ছবি: picture alliance/WILDLIFE

জামালপুর সদরের মঙ্গলপুর গ্রামের তৌহিদুল ইসলাম তাপস পলিথিন বর্জ্য থেকে তেল তৈরির যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন৷ এ যন্ত্র থেকে এলপি গ্যাস ও কার্বন উৎপাদনও সম্ভব৷ কিন্তু পলিথিন নিয়ে কেন তাঁর আগ্রহ? তৌহিদুল বলেন, ‘‘আমার একটা ফুল বাগান ছিল৷ কিছুদিন পর আমি দেখলাম বাগানের গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ তখন আমি গাছগুলো উপড়ে ফেললাম৷ উঠানোর পরে দেখিসেখানে পলিথিন রয়েছেএবং গাছের শিকড়গুলো পলিথিনে কুণ্ডলী পাকিয়ে গেছে৷ তখন আমি ভাবলাম যে, পলিথিনের কারণেই এই সমস্যা৷ তারপর থেকেই আমি এই পলিথিন নিয়ে কাজ শুরু করলাম৷''

তাঁরই শিক্ষক রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মো. ইকরামুজ্জামানের সহযোগিতায় কলেজের গবেষণাগারে এ ব্যাপারে গবেষণা শুরু করেন তাপস৷ দীর্ঘদিন পর আসে সফলতা৷

একসময় নিজ উদ্যোগেই স্বল্প পরিসরে পলিথিন পুড়িয়ে পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন ও এলপি গ্যাস তৈরি শুরু করেন তাপস৷ জেলা বিজ্ঞান মেলা ও বিভাগীয় বিজ্ঞান মেলায় পুরস্কৃত হয় তাঁর এই উদ্ভাবন৷ জামালপুর শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক মো. ইকরামুজ্জামান বলেন, ‘‘সে আমার কাছে সাজেশন চেয়েছে, আমি দিয়েছি৷ যখন যে সমস্যার কথা আমাকে বলেছে, আমি সেভাবে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি৷ আমার পক্ষ থেকে তাকে যতটুকু সাপোর্ট দেয়া দরকার, ততটুকু আমি দিয়েছি৷''

ফেলে দেয়া পলিথিন থেকে তেল!

নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তৌহিদুল ইসলাম তাপস বলেন, ‘‘২০০৯ সালে আমি প্রথমবারের মতো পলিথিন থেকে জ্বালানি গ্যাস উদ্ভাবন পরীক্ষায় সফল হলাম৷ গ্যাসটা যখন রিজার্ভারে জমা করি, তখন দেখি তার নীচে তেলের মতো কিছু জমা পড়েছে৷ পরে বুঝলাম, এটা পলিথিন থেকে উৎপাদিত তেল৷''

বাংলাদেশ সরকারের এটুআই প্রোগ্রামের দেশসেরা উদ্ভাবকের পুরস্কার পেয়েছেন তাপস৷ এরপর সরকারি অনুদানে জেলা শহরের পৌর বর্জ্য শোধনাগারে স্বল্প পরিসরে বসিয়েছেন পলিথিন থেকে তেল উৎপাদনের প্ল্যান্ট৷ এর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০৫ লিটার বলে জানান তাপস৷ তিনি বলেন, ‘‘রিয়্যাক্টর চেম্বারে পলিথিন ভরে এয়ারটাইট করে ঢাকনা লাগিয়ে দিই৷ তারপর সেখানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তাপ প্রয়োগ করি৷ তাপের ফলে পলিথিন গলে কেমিক্যাল রিয়্যাকশনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বাষ্প উৎপাদন হয়৷ সে তেল ও গ্যাসের বাষ্প একসাথে মিশ্রিত হয়ে সেখান থেকে আমাদের কনডেন্সারে আসে৷ কনডেন্সার থেকে তা আবার চলে আসে ইভাবরেটরে৷ এখানে আসার পর জ্বালানি গ্যাসের বাষ্প ঠান্ডা হয়ে তরলে রূপ নেয়৷ আর গ্যাস ঠান্ডা হলেও উপর দিকে উঠে যায়৷ তখন নীচে জমে থাকা তরল আস্তে আস্তে আউটপুট লাইন দিয়ে রিজার্ভারে জমা হয়৷''   

পরিপূর্ণভাবে চালু হলে এ প্ল্যান্ট থেকে তিন ধাপে তরল, গ্যাস ও কার্বন সংগ্রহ করা সম্ভব হবে৷ তরুণ এই উদ্ভাবকের ইচ্ছা ৫ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্ল্যান্ট স্থাপন৷ তৌহিদুল ইসলাম তাপস বলেন, ‘‘ক্রুড অয়েল আমাদের ঐ মেশিনে নেয়ার পর নির্দিষ্ট একটা তাপমাত্রায় হিট করার পর পেট্রোল পাচ্ছি, আবার তাপ বাড়ালে ডিজেল পাচ্ছি, তখন আবারও যদি তাপমাত্রা বাড়াই দেখা যায় কেরোসিন বের হচ্ছে৷''

এটুআই সংস্থার ইনোভেশন এক্সপার্ট ফারুক আহমেদ জুয়েল এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা তার এই তেলকে ল্যাবে টেস্ট করেছি৷ খুব সুন্দর কিছু রিপোর্ট পেয়েছি৷ আমার মনে হয়, আর অল্প কিছু প্রসেস করলেই এটা দারুণ একটা তেলে রূপান্তর করা সম্ভব৷ আমরা চেষ্টা করছি এটাকে বিভিন্ন জেলায় কীভাবে রেপ্লিকা করা যায়, যাতে করে ঐ সমস্ত জেলার পলিথিনগুলোকে আমরা রি-ইউজ করতে পারি৷ এর সাথে কিছু কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়৷''

পরিত্যক্ত পলিথিন থেকে এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়৷ পলিথিনের এ ধরনের পুনর্ব্যবহারই পারে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনতে৷ স্থানীয় পরিবেশ কর্মী মো. জাহাঙ্গীর সেলিম এ বিষয়ে বলেন, ‘‘এই পলিথিনের কারণে দুর্ভোগের শিকার সারা দেশবাসী৷ একদিকে তাঁর এই উদ্ভাবনে পলিথিন রিসাইকেল হয়ে সম্পদে পরিণত হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে৷''

জামালপুর শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মো. ইকরামুজ্জামান বলেন, ‘‘তৌহিদুল ইসলামের এই উদ্ভাবনকে যদি আমরা সারাদেশে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে স্বল্প খরচে তেল পাবো, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক কাজে আসবে৷''তাপসের এই আবিষ্কার যদি বড় আকারে রূপ দেয়া যায়, তাহলে একদিকে যেমনপলিথিন বর্জ্যের অভিশাপ থেকে জনগণ রক্ষা পাবে, অন্যদিকে এখান থেকে উৎপাদিত তেল, গ্যাস ও কার্বন দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করবে৷ তাপস বলেন, ‘‘যেহেতু পলিথিন আমাদের দেশ ও পরিবেশের জন্য একটা হুমকি, তাই আমার এখন একমাত্র উদ্দেশ্যই হলো পলিথিনকে নির্মূল করা৷''

 

এটুআই সংস্থার ইনোভেশন এক্সপার্ট ফারুক আহমেদ জুয়েল বললেন, ‘‘আমরা আমাদের এক্সপার্টদের এ প্রকল্পে ইনভল্ব করেছি, যাতে করে এই প্রজেক্টটাকে সফলভাবে এগিয়ে নেয়া যায় এবং এটা যাতে পরিবেশবান্ধব হয়৷ তৌহিদের এই সাফল্য মানে আমাদের সাফল্য৷''

সাখাওয়াৎ লিটন