1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পর্তুগালের অভিনব টাইলস এখনো আকর্ষণীয়

৮ জানুয়ারি ২০২১

পর্তুগালের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার নানা প্রান্তের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে৷ সে দেশের বিখ্যাত টাইলসের ঐতিহ্য আজও আকর্ষণীয়৷ এই শিল্পকর্মের ইতিহাস ও উপযোগিতা সত্যি অনবদ্য৷

https://p.dw.com/p/3nfWG
লিসবন শহর
লিসবন শহরছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Tetra-Images/H. Sadura

পর্তুগালের অনেক অভিনব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ‘আসুলেশু' অন্যতম৷ এমন সুন্দর সেরামিক টাইলসের ডিজাইন নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে৷ তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নীল ও সাদা রংয়ের ডিজাইন প্রাধান্য পেয়েছে৷ বিশেষ করে লিসবন শহরে এই শৈলির অসংখ্য নিদর্শন দেখা যায়৷ লেওনেল রিবেইরু ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শহুরে শিল্পকর্ম সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘লিসবন শহরের বৈশিষ্ট্য হিসেবে এই বিখ্যাত সাদা আলো শুধু টেশু নদীর মোহনা ও পর্তুগালের সাদা ফুটপাথের কারণে দেখা যায় না৷ টাইলসের প্রতিফলনের কারণে পথঘাট আলোয় ভরে যায়৷ এর ফলে লিসবনের অনবদ্য এক জ্যোতি ফুটে ওঠে৷''

এই টাইলস মোটেই শুধু সাজানোর উপকরণ নয়৷ সেগুলি উত্তাপ ও সমুদ্রের লবণাক্ত বাতাস থেকে ভবনগুলি রক্ষা করে৷ অ্যাটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত দক্ষিণ ইউরোপের কোনো শহরের জন্য এটা সুরক্ষার এক আদর্শ কবচ৷ সুন্দর কারুকাজ করা এই টাইলসের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে৷ আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল থেকে আসা মুর মুসলিমরা এই ঐতিহ্যের উৎস৷ অষ্টম শতাব্দী থেকে আইবেরীয় উপদ্বীপের বড় অংশে টাইলস ছড়িয়ে পড়ে৷ আটশো বছর পর মুরদের তাড়িয়ে দেওয়া হলেও ‘আসুলেশু' টাইলস কিন্তু থেকে গেছে৷ লেওনেল রিবেইরু বলেন, ‘‘প্রায় ৯০০ বছর ধরে এই টাইলস আমাদের দৈনিক জীবনযাত্রার অংশ৷ আমরা আজও নতুন মোটিফ সৃষ্টি করছি৷ আমার পেছনের দেওয়ালে তার কিছু নমুনা শোভা পাচ্ছে৷ শিল্পের শাখা হিসেবে মুর আমলে আবদ্ধ না থেকে এর বিবর্তন ঘটে চলেছে৷’’

টাইলসের নগরী লিসবন

১৭৪১ সাল থেকে এই কারখানায় বিশেষ ধরনের টাইলস তৈরি হচ্ছে৷ এটি পর্তুগালের প্রাচীনতম ও গোটা ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন টাইলস কারখানা৷ ফ্রান্সিশকু টুমাশ এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান৷ এখনো সেই কারাখানায় হাতে করে নীল টাইলস তৈরি হয়৷ ৩০০ বছর ধরে সেই প্রযুক্তি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে৷ সেকালে বাস্তব কারণেই বড় আকারে টাইলস তৈরি করা হতো৷ টাইলস কারখানার প্রধান হিসেবে ফ্রান্সিশকু টুমাশ বলেন, ‘‘১৭৫৫ সালের ভূমিকম্পের ফলে লিসবন শহর প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ পুনর্গঠনের জন্য পাথর ও টাইল ছিল৷ সেকালে টাইল পাথরের তুলনায় সস্তা ছিল৷ একসঙ্গে এত ভবন পুনর্নিমাণের জন্য লিসবনের সব রূপ তুলে ধরতে বিশেষ কিছু ডিজাইনের ব্যবহার শুরু হলো৷ সেটা ছিল পর্তুগালে সেরামিক টাইলসের ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ৷''

টাইলসে ব্যবহৃত রংয়ের ক্ষেত্রেও বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করা হয়৷ পানিভিত্তিক অ্যাক্রিলিক রংগুলি যাতে একে অপরের সঙ্গে মিশে না যায়, তা নিশ্চিত করতে বর্তমানে স্টেনসিল ও বিশেষ ধরনের আন্ডারগ্লেজ ব্যবহার করা হয়৷ নতুন করে পোড়ানোর ফলে রং অনেকটাই বদলে যায়৷

পর্তুগালের অভ্যন্তরীণ চাহিদার পাশাপাশি মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি টাইলস কিনে নেয়৷ পর্যটকরাও টাইলস কিনতে ভালবাসেন৷ ছোট এই শিল্পকর্মের প্রতি চোরেদের কুনজরও কম নয়৷ লেওনেল রিবেইরু মনে করিয়ে দেন, ‘‘কয়েক দশক আগে ‘আসুলেশু' টাইলস ব্যাপক আকারে চুরি হতো৷ পরে চোরাবাজারে সেগুলি বিক্রি হতো৷ তারপর মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচার অভিযান শুরু হলো৷ বর্তমানে মানুষ টাইলসের আরও কদর করে৷ এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেছে৷''

রোদের আলোয় লিসবন শুধু জ্বলজ্বল করে না৷ অসংখ্য ‘আসুলেশু'-র দৌলতে শহরটি ঝকমকে মনে হয়৷

ইয়োসেফিন গ্যুন্টার/এসবি