1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরীমনি এবং ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’

১ সেপ্টেম্বর ২০২১

ভালোবাসা কে না চায়? কিন্তু জামিনে মুক্ত পরীমনি জানালেন ভালোবাসা চান না৷ হাতের তালুতে স্পষ্ট লেখা ছিল ‘আমাকে ভালোবেসো না...৷’ তবে বাক্যের শেষে আরেকটা শব্দ ছিল যা দিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন কাদের ভালোবাসার প্রয়োজন নেই তার৷

https://p.dw.com/p/3zmpY
Bangladesch Schauspielerin Pori Moni
জামিনে মুক্ত হওয়ার পর পরীমনিছবি: DW

তারা কারা?

জামিনে মুক্তি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এ বিষয়ে খুব ইঙ্গিতপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন পরীমনি৷ বলেছেন, ‘‘যারা বিচ তাদের উদ্দেশ্যে এমন কথা বলেছি৷ লেখাটা পড়ে যাদের মনে হবে, আল্লাহ, আমাকে নিয়ে এটা লিখলো—তাদের উদ্দেশ্যেই এই লেখা৷ ওদের তালিকা তো আমি নাম ধরে বলতে পারবো না৷ আমাকে আটক, গ্রেপ্তার এবং কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের জীবন সার্থক মনে হয়েছে৷'' 

পরে হয়ত আরো বলবেন৷ আবার এমনও হতে পারে আর কোনোদিন এ নিয়ে কিছু বললেনই না৷ হতেই পারে৷ এমন তো হয়৷ জীবনের কত কথাই তো অব্যক্ত থেকে যায়৷

পরীমনির এই বক্তব্যটা রবীন্দ্রনাথের সেই গানের মতো, ‘‘অনেক কথা যাও যে বলে, কোনো কথা না বলি...'', কারণ, তার কথায় যতটা বলা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি অব্যক্ত রয়ে গেছে৷

অবশ্য সব কথা খুলে না বললেও একটা কথা পরীমনি কিন্তু বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় কারাগার থেকে বের হয়ে মুখের হাসি, হাতের কথায় জানিয়ে দিয়েছেন, জানিয়েছেন তার সাহস অনেক এবং সে সাহস তাকে বলেছে ‘‘মাথা নত করো না৷''

বাংলাদেশে সবকিছুরই নাকি বিশেষ কার্যকারণ থাকে৷ মাঠে হয়ত খেলে একজন, আড়াল থেকে খেলায় আরেকজন৷ অনেক খেলনা দিব্যি চলে, দেখে মনে হয় আসল গাড়ি, কিন্তু সেই গাড়ি চালায় আসলে কারো হাতের রিমোট কন্ট্রোল৷ ‘রিমোট' ছাড়া নাকি ওসব ‘গাড়ি' একটুও চলে না৷

পরীমনির এভাবে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়েও কেউ কেউ এসব কথা বলতে পারেন৷ জানতে চাইতে পারেন- পরীর এমন সাহসের উৎস কী? তাদের বিশেষ কিছু বলার নেই৷ আজকাল সারা বিশ্বেই কন্সপিরেসি থিওরির রমরমা৷ যে ঘটনার একেবারে ভেতরেই ‘কন্সপিরেসি' আছে কিনা তা কেউ জানে না, যে ঘটনায় পরীমনি এখনো দোষী প্রমাণিত হননি, তার কোনো পর্যায়ের বিশ্লেষণেই ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে গুরুত্ব দিতে কেউ বাধ্য নয়৷

তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, দু'দিন আগেও যিনি আদালত প্রাঙ্গনে শুধু কাঁদতে বাকি রেখেছেন, সেই পরীমনি ২৬ দিন পর জামিনে মুক্ত হওয়ার সময় এভাবে আনন্দে ভাসবেন- তা খুব কম মানুষই ভাবতে পেরেছেন৷ অনেকেই হয়ত ভেবেছিলেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে ঢালিউডের সুপারস্টার বেরিয়ে আসবেন থমথমে মুখে৷ অনেক কাঁদবেন৷ কেঁদে কেঁদে সিমপ্যাথি আদায় করবেন কোটি মানুষের৷ যাদের অনেক খুঁটির জোর তাদেরও তো সংকটের সময় সহানুভূতি আদায়েই মরিয়া হতে দেখা যায়, এমন হাস্যোজ্জ্বল, সাহসী রূপে তো খুব একটা দেখা যায় না কাউকে৷ ভুক্তভোগী নারী হলে তো নয়ই৷ 

চেহারা সুন্দর হলে, যোগ্যতায় অনেককে ছাড়িয়ে গেলে নারীর এমনিতেই অনেক মুশকিল৷ পুরুষ তো তাকে হিংসা করেই, নারীরাও কম যায় না৷ সুযোগ পেলে তার সংস্পর্শে যেতে চান অনেকেই৷ তাকে ব্যবহারও করতে চান নানাভাবে৷ তাদের কাছে নারী স্রেফ পণ্য৷ তাই তারা যখন যেভাবে যতটা দরকার এবং সম্ভব, ততটা ‘ব্যবহার' করে, আবার হিংসা, ঘৃণাও করে৷ স্বাভাবিক অবস্থায় সেই ঘৃণা-বিদ্বেষ থাকে আড়ালে৷ সংকটের সময়ে সেটা বেশি প্রকাশ পায়৷ নানাভাবে নানা প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ পায়৷ সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ পায়, মিডিয়ায় প্রকাশ পায়, নানা পর্যায়ের ক্ষমতাবানদের বক্তব্যেও প্রকাশ পায়৷

পরীমনির বেলায়ও তাই হয়েছে৷ নইলে নাসির উ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ তোলার কিছুদিনের মধ্যেই দৃশ্যত সবাই ‘পরীমনিবিরোধী' হয়ে গেল কেন? শুধু জামিন পেতেই যে দেরি হয়েছে বা তিনবার রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তা কিন্তু নয়৷ মিডিয়া ট্রায়াল হয়েছে খুব আপত্তিকরভাবে৷ মহিলা পরিষদ তাতে আপত্তি জানিয়েছে

পরীমনিসহ সব অভিনয় শিল্পী-মডেলের গ্রেপ্তার এবং তা প্রচারের ধরন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জাতীয় নারী জোট বলেছে, আদালতে শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী ধরে নিয়ে প্রচারণা চালানো আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়, এ রীতিমতো ‘অসভ্যতা'৷ এ ধরনের অসভ্যতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা৷ ডয়চে ভেলে সে খবর প্রকাশও করেছে৷ 

Ashish Chakraborty
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/T. Mehedi

তারপরও কিন্তু সবার মাঝে দায়িত্বশীলতা, মানবিকতা, নারীর প্রতি শ্রদ্ধার আলামত খুব একটা দেখা যায়নি৷ তাই আমরা দেখেছি, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী চলচ্চিত্র তারকাকে নিয়ে খুব আপত্তিকরভাবে কথা বলেছে এবং সংবাদ মাধ্যমের বড় একটি অংশ তা প্রচারও করেছে৷ বলা বাহুল্য, পরীমনিকে রাতের সঙ্গে যুক্ত করে করা মধ্যযুগীয় চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো সেসব কথাবার্তা ডয়চে ভেলে প্রচার করেনি৷

তো পরীমনি সেই মানুষদের কারো কারো ভালোবাসা হয়ত একেবারেই চান না৷ এমনকি অতীতে খুব ভালোবাসা দেখালেও এই সংকটের সময়ে যারা ‘পরীমনিকে চিনি না' ভাব ধরে ঘরে বসে থেকেছেন তাদের প্রতিও তার অসন্তোষ থাকতে পারে৷ যারা তার মাধ্যমে নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন তাদের একটা অংশও যে গত কিছুদিন তার চরিত্র নিয়ে, আয়ের উৎস নিয়ে অনেক বাকবাকুম করেছেন, তাদের কারো কারো প্রতিও অভিমান, অনুযোগ বা ক্ষোভ থাকতেই পারে৷

এমন দুর্বলের ওপর অত্যাচারকারী কিংবা সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানীদের ভালোবাসা তো বিপদের দিনে কোনো কাজে আসে না, তাই পরীমনি যদি মনে করেন এমন মানুষদের ভালোবাসার দরকার নেই, দোষ দেবেন কী করে!