পরিশ্রম কমাতে পারে ভার্চুয়াল অবতার
১৮ অক্টোবর ২০২১করোনা মহামারির সময় হোম অফিস বা মোবাইল ওয়ার্ক একেবারে নতুন মাত্রা পেয়েছে৷ কাগজেকলমে আমাদের মধ্যে অনেকেই যে কোনো জায়গা থেকে কাজ করতে পারেন৷ তবে নটা-পাঁচটার কাজের দিন শেষ৷ হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের নতুন এক গবেষণা অনুযায়ী অবশ্য নতুন এই স্বাধীনতা বিভ্রান্তিকর৷
বাস্তবে আমাদের কাজের দিন প্রায় দশ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ আগের তুলনায় অনেক বেশি সময় অনলাইন থাকতে হচ্ছে৷ ডিজিটাল ডিভাইস দূরে রেখে ঘুমাতেও আমাদের সমস্যা হচ্ছে৷ বাস্তব ও ডিজিটাল জগতের মধ্যে সীমানা আরও কমে চলেছে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, কঠিন পরিশ্রমের বদলে কীভাবে আরও বুদ্ধিমানের মতো কাজ করতে পারি?
লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের ট্যারিন সাদার্ন একজন ইউটিউব তারকা, পরিচালক, গায়ক ও অভিনেতা৷ গত এক দশক ধরে তার সংগীত ও ভিডিও গোটা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে৷ কিন্তু বেড়ে চলা খ্যাতি ও অনুরাগীদের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে আরও ডিজিটাল কনটেন্ট সৃষ্টির জন্য চাপও বেড়ে গেল৷ নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে ট্যারিন বলেন, ‘‘আমি আর পেরে উঠছিলাম না৷ সফল থাকতে হলে ক্রমাগত কনটেন্ট তৈরি করে যেতে হবে৷ কেউ প্রতিদিন কিছু পোস্ট না করলে অ্যালগোরিদম কোনো মায়াদয়া করে না৷ সব প্ল্যাটফর্মেই সেই খেসারৎ দিতে হয়৷ আমি আর সেই অঙ্গীকার করি নি৷ বরং অন্য কিছু করতে চেয়েছি এবং করেওছি৷''
সৃজনশীল সমাধানসূত্রের সন্ধানে ট্যারিন ভবিষ্যতমুখী প্রযুক্তির প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন৷ ২০১৮ সালে তার প্রথম মিউডিক অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন, যেটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার ও ডিপ লার্নিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তৈরি হয়েছিল৷ ট্যারিন সাদার্ন বলেন, ‘‘এআই ও নিউরো টেকনলজির প্রতি আমার আগ্রহ বাড়ছিল৷ সে সব ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিদিনই অবিশ্বাস্য অগ্রগতি ঘটছে৷ মনে প্রশ্ন জাগলো, সেখানে কী ঘটছে, কোন কাহিনি শোনানো যায়?''
২০১৯ সালে ট্যারিনের সব পরিশ্রমের ফল সংকটের মুখে পড়ে৷ কারণ তার থার্ড স্টেজের ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়েছিল৷ সেই ধাক্কার পরের অনুভূতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম বার আমার মনে নিজেকে এবং নিজের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিল৷ আমি সব সময়ে কঠিন পরিশ্রম করেছি৷ ‘না' বলতে এবং কাজ কমাতে আমার খুব সমস্যা হতো৷ এমন কাজ খোঁজা জরুরি হয়ে উঠেছিল, যা আমাকে প্রতিদিন নিংড়ে না নেয়৷''
করোনা মহামারির মাঝে ট্যারিন নিজের ‘ওয়ার্ক-লাইফ-ব্যালেন্স' নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে বাধ্য হলেন৷ তিনি ‘আওয়ার ওয়ান' নামের স্টার্টআপ কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজের এক ডিজিটাল ক্লোন সৃষ্টির কাজে মেতে উঠলেন৷ ভারচুয়াল জগতে নিজের হুবহু নকল সৃষ্টি হলো৷ নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে ট্যারিন বলেন, ‘‘প্রায় দশ মিনিট সময় লেগেছিল৷ একটি ক্যামেরার মাধ্যমে আমার ছবি ও কণ্ঠ ধারণ করে মেশিন লার্নিং প্রোগ্রামে ভরে দেওয়া হলো৷ তারপর এআই ট্যারিনের জন্ম হলো৷''
বোতাম টিপলেই তাঁর সেই ভার্চুয়াল অবতার ভিডিও তৈরি করতে পারে৷ শুধু একটা টেক্সট ভরে দিতে হয়৷ এআই ট্যারিন নানা ভাষা বলতে পারে৷ সে নানা রকম মুখচ্ছবি, লিঙ্গ ও বয়স আত্মস্থ করতে পারে, এমনকি গানও গাইতে পারে৷ ট্যারিন মনে করেন, ‘‘আমাদের সময় আসলে সীমিত সম্পদ৷ আমার এআই ক্লোন তার কিছু অংশ আউটসোর্স করতে পারে৷ দারুণ ব্যাপার!''
করোনা মহামারি সামলাতে বিভিন্ন কোম্পানি যখন ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে ব্যস্ত, সে সময়েই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং-এর সাহায্যে কৃত্রিম কন্টেন্ট তৈরির ক্ষেত্রেও জোয়ার এসেছে৷ সেইসঙ্গে ভার্চুয়াল অবতারের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে৷
আমেলিয়া হেম্পহিল/এসবি