1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিমিত আলো ত্বকের জন্য ভালো

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রোদের তেজ আমাদের ত্বকের জন্য কতটা ক্ষতিকর? ক্যানসার এড়াতে সূর্যের আলো কি এড়িয়ে চলা উচিত? কিন্তু ভিটামিন ডি উৎপাদনের জন্য সূর্যের আলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ জার্মানির এক গবেষকদল এ নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3Q8GZ
ছবি: Colourbox

আবহাওয়া ভালো থাকলে টোমাস ফোগ্ট সাইকেল চালিয়ে কাজে যান৷ সচেতনভাবেই তিনি কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলো সরাসরি উপভোগ করেন৷ অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা তিনি নেন না৷ পেশায় তিনি ত্বক বিশেষজ্ঞ ও প্রোফেসর৷ সূর্য এমনকি ত্বকেরও সুরক্ষা দিতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন৷ টোমাস ফোগ্ট বলেন, ‘‘সূর্যের আলো পুরোপুরি এড়িয়ে চললে, সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে ছিটেফোঁটা রশ্মিও ত্বকে প্রবেশ করতে না দিলে এবং ভিটামিন ডি ওষুধ না খেলে এই ভিটামিনের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিতে পারে৷ হাড়গোড়ের উপর তার প্রভাব পড়বে, অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়বে৷ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে৷ এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়বে, বিশেষ করে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, এমনকি ত্বকের ক্যানসারও হতে পারে৷’’

প্রোফেসর ভোগ্ট অনেক বছর ধরে আমাদের স্বাস্থ্যের উপর সূর্যের আলোর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন৷ যে ধরনের ক্যানসার বেশি দেখা যায়, তার মোকাবিলায় -র ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই৷ সম্প্রতি ভোগ্ট ও তাঁর গবেষকদল আশ্চর্য এক প্রমাণ পেয়েছেন৷

শরীরের সব তন্তুর মধ্যে ভিটামিন ডি গ্রহণের রিসেপ্টর রয়েছে, যা টিউমার দমন করতে পারে৷ ত্বকের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম খাটে৷ ক্যানসারের রক্ষাকবচ হিসেবে তার ভিটামিন ডি-র প্রয়োজন হয়৷

ত্বকের স্বাস্থ্য অক্ষত রাখতে ভিটামিন ডি-র অভাব অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে৷ অথচ জার্মানিতে এই সমস্যা অত্যন্ত প্রকট৷ প্রোফেসর ফোগ্ট ও তাঁর সহকর্মীরা সতর্ক করে দিয়েছেন, যে জার্মানির মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষের ভিটামিন ডি নিয়ে সমস্যা নেই৷ কারণ শীতপ্রধান দেশ হিসেবে একমাত্র গ্রীষ্মেই এখানে সূর্যের আলো শরীরে ভিটামিন ডি সৃষ্টি করতে পারে৷

একমাত্র পুকুরের তৈলাক্ত মাছ যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ডি-র জোগান দিতে পারে৷ তবে সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করার ক্ষমতা মাছেরও নেই৷ গবেষকদলও সে বিষয়ে সচেতন৷ ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারে বটে, তবে শুধু ট্যাবলেট খেলে কাজ হয় না৷ এ ক্ষেত্রে ত্বকেরও নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে৷ নিয়মিত, হালকা রোদ পোয়ানো তাই সবচেয়ে ভালো উপায়৷ টোমাস ফোগ্ট বলেন, ‘‘ভিটামিন ডি ট্যাবলেটের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি ভিটামিন ডি-র গুণাগুণ যে বেশি, তার অনেক ইঙ্গিত পাওয়া যায়৷ যেমন সেটি আরও বেশি সময় ধরে রক্তের মধ্যে অক্ষত থাকে৷ আরেকটি সুবিধা হলো এ ক্ষেত্রে ওভারডোজের আশঙ্কা নেই৷’’

সে কারণে টোমাস ফোগ্ট নির্দিষ্ট মাত্রায় রোদ পোয়ানোর পরামর্শ দেন৷ কিন্তু এর অর্থ কী? টোমাস ফোগ্ট জানান, ‘‘আমার পরামর্শ হলো, সপ্তাহে নিয়মিত বেশ কয়েকবার রোদ পোয়ানো উচিত৷ যেমন মুখ, বগল ও শরীরের ভাঁজের জায়গাগুলি কম সময়ের জন্য সূর্যের আলোর সামনে উন্মুক্ত করা ভালো৷ তবে নিজস্ব সুরক্ষার সময়সীমা অতিক্রান্ত করলে চলবে না৷ দুপুর ১২টার গনগনে রোদ এড়িয়ে সকাল ও দুপুরের দিকে এটা করা উচিত৷’’

কিছুক্ষণ রোদের ছোঁয়া পেলেই ভিটামিন ডি উৎপাদন প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়৷ একই সঙ্গে ত্বক নিজস্ব প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে৷ কর্নিয়ার পিগমেন্ট আরও পুরু হয়ে যায়৷ তা সত্ত্বেও সাবধান থাকতে হবে, কারণ ত্বকের সহনশীলতার সীমা রয়েছে৷ বিশেষ করে ভরদুপুরের অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য বিপজ্জনক৷ ত্বক বিশেষজ্ঞ হিসেবে টোমাস ফোগ্ট বলেন, ‘‘ত্বকের ধরনের উপর প্রত্যেক মানুষের সহনশীলতার মাত্রা নির্ভর করে৷ যথেষ্ট ভিটামিন ডি উৎপাদনের জন্য কত পরিমাণ রোদ পোয়াতে হবে, তা জানতে হয়৷ মনে সন্দেহ থাকলে তা পরিমাপ করা যায়, সান বার্ন এড়িয়ে চলতে হয়৷ জীবনধারা এমনভাবে স্থির করতে হবে, যা স্বাস্থ্যের জন্য সহনীয় এবং ক্যানসারের সুরক্ষা দিতে পারে৷’’

মোটকথা ত্বক বাঁচাতে সূর্যের আলো পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া সঠিক পথ নয়৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে রোদের উত্তাপ না নিয়ে পরিমিতভাবে সূর্যের আলো উপভোগ করলে জীবনযাত্রা সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর হবে৷

পাট্রিসিয়া মেৎস/এসবি