পরিবেশ সুরক্ষাও অর্থনৈতিক উদ্ধারে একমত ইইউ নেতারা
১২ ডিসেম্বর ২০০৮ইইউ-র বর্তমান সভাপতি দেশ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি এবারের ব্রাসেলস বৈঠককে এক ঐতিহাসিক শীর্ষ বৈঠক বলে অভিহিত করেছেন৷ বৈঠককে সফল বলে মন্তব্য করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ ব্যাপক মতবিরোধ এবং তর্ক বিতর্কের পর ২শো বিলিয়ন ইউরোর অর্থনৈতিক উদ্ধার প্যাকেজ এবং জলবায়ু সুরক্ষা সংক্রান্ত দুটো চুক্তিতে সব সদস্য দেশের একমত হওয়াকে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷
তিনি বলেন, যে সমঝোতায় আমরা পৌঁছেছি তার মধ্য দিয়ে দুটি ক্ষেত্রেই অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষার শর্তগুলো তৈরি করার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া হয়েছে৷ আমি মনে করি এই সিদ্ধান্তগুলোর মধ্য দিয়ে ইউরোপ বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সুরক্ষার নীতির ক্ষেত্রে পথ প্রদর্শক হিসেবে তার অবস্থান নিশ্চিত রাখতে পারবে৷ আমরা চাই , নতুন মার্কিন সরকার কার্যভার গ্রহণ করার পর তারাও একই পথে সিদ্ধান্ত নেবে৷ আর তা হলে আমরা অত্যন্ত খুশি হবো৷
ইউরোপীয় অর্থনীতি থেকে মন্দাভাব কাটাতে ২শো বিলিয়ন ইউরোর উদ্ধার প্যাকেজকে উচ্চাভিলাষী এবং সমন্বিত পরিকল্পনা বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন৷ ইইউভুক্ত দেশগুলোর মোট অভ্যন্তরীণ আয়ের ১ দশমিক ৫ শতাংশ পরিমাণের ঐ প্যাকেজে কর হ্রাস, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সমর্থন এবং ব্যাংক সুদের হার কমানোর কথা বলা হয়েছে৷ শুরুতে এর অর্থ সংস্থান নিয়ে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা ঘুচিয়ে একমত হন সংশ্লিষ্ট দেশের নেতারা৷
এছাড়া সম্মেলনে জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন রোধে গৃহীত চুক্তিটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন ইইউ-র বর্তমান সভাপতি ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি৷ তিনি বলেন, ইউরোপ ছাড়া অন্য কোন মহাদেশ বিশ্ব জলবায়ু রক্ষায় এ পর্যন্ত এ রকম বাধ্যবাধকতামূলক কোন চুক্তি গ্রহণ করেনি৷ বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে ক্ষতিকর গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে ইইউ-র এই প্রচেষ্টাকে উদাহরণ হিসেবে নিতে গোটা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
টুয়েন্টি-টুয়েন্টি-টুয়েন্টি নামের ওই জলবায়ু-জ্বালানি চুক্তিতে ২০২০ সালের মধ্যে ক্ষতিকর কার্বন গ্যাসের নির্গমন ১৯৯০ সালের মাত্রা থেকে ২০ শতাংশ কমানোর কথা বলা হয়েছে৷ এছাড়া বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণকারী জ্বালানির পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব পুনর্নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর কথাও৷ এর ফলে মোট জ্বালানির ২০ শতাংশই উত্পাদন করতে হবে বায়ু, পানির স্রোত এবং সৌর শক্তি থেকে৷ চুক্তিতে ইইউ-র যেসব দেশ বেশি দূষণ করছে তাদের ব্যাপারে বেশ ছাড় দেয়া হয়েছে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুমোদনের পর চুক্তিটি আইনে পরিণত হবে৷ তবে জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সমালোচনা করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা৷ তাদের মতে, জলবায়ুর ক্ষতিকর পরিবর্তন রোধে এই চুক্তি যথেষ্ট নয়৷ কারণ, ২০২০ সালের মধ্যে দূষণের মাত্রা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ কমানো না গেলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব নয়৷