1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ উন্নয়নের নামে ভারতে চলছে জমি অধিগ্রহণ

২৪ জুন ২০১১

পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কাণ্ডের পর থেকে ভারতে জমি-অধিগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে৷ এমনকি পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থেও জমি অধিগ্রহণ চলছে৷

https://p.dw.com/p/11iYk
ভারতের প্রকৃতি রক্ষা হলে এসব প্রাণীও টিকে থাকবেছবি: picture-alliance/Dinodia Photo

বিকল্প জ্বালানির সন্ধানে

অন্যান্য অনেক দেশের মতো ভারতেও জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ও বায়ো গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে চলেছে৷ এই মুহূর্তে সেদেশে বায়ুশক্তি কাজে লাগিয়ে প্রায় ১৩,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে৷ ফলে এক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে ভারত পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে৷ কিন্তু বায়ু শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে বিশাল এলাকা জুড়ে ‘উইন্ড পার্ক'এর প্রয়োজন হয়৷ তার জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে ভারতে জটিলতা দেখা দিচ্ছে৷ মুম্বইয়ের কাছে শুরু হয়েছে এমনই একটি প্রকল্প৷

মুম্বই থেকে প্রায় একশো কিলোমিটার উত্তরে ওয়েস্টার্ন ঘাট পর্বতমালায় প্রায় এক হাজার মিটার উচ্চতায় ছোট্ট গ্রাম – নাম কারপুড৷ প্রায় সবসময়ই সেখানে ঝোড়ো বাতাস বইছে৷ চারিদিকের পাহাড় ঢেকে রয়েছে ঘন জঙ্গল৷ কাছেই রয়েছে ভীমশঙ্কর অভয়ারণ্য৷ এই এলাকায় মহাদেও কোলি নামের আদিবাসীদের বাস৷ তাদের জীবনযাত্রা আশেপাশের জঙ্গলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত৷ এই জঙ্গলের উপরই তাদের অস্তিত্ব নির্ভর করছে বলে তাদের বিশ্বাস৷ গ্রামের মোড়ল গণপত মাদাগে বললেন, ‘‘গ্রামের মেয়েরা প্রতিদিন জঙ্গল থেকে শুকনো কাঠ কুড়িয়ে আনে, যা দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়৷ সেখানে তারা পায় নানা গাছপালা ও লতাগুল্ম, যার ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে৷ নিজেদের প্রয়োজনে বা বাজারে বিক্রি করতে সেখান থেকে জংলি ফল ও মধুও সংগ্রহ করা হয়৷''

প্রকল্পের নামে ধ্বংসলীলা

ধানের খেত ধরে প্রায় ১০ মিনিট চলার পর ভীমশঙ্কর অভয়ারণ্যের সীমার সামনে এসে পড়তে হয়৷ ঘন জঙ্গলের এক প্রান্তে গাছের উপর ধুলোর মেঘ দেখা যাচ্ছে৷ জঙ্গল কেটে যে কাঁচা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, তা দিয়ে পাহাড়ের উপর উঠছে বড় বড় ট্রাক ও সিমেন্ট মেশানোর যন্ত্র লাগানো গাড়ি৷ রাস্তার আশেপাশে ধ্বংসের চিহ্নের অভাব নেই৷ মানুষের হাত পড়ার আগে গোটা এলাকা কেমন দেখতে ছিল, তার একটা আন্দাজ পাওয়া যায়৷ গণপত মাদাগে আরও বললেন, ‘‘এইখানে, মানে পাহাড়ের পেছনে একটি বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে৷ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই আমাদের আর জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি নেই৷ নির্মাণ সংস্থার প্রহরীরা আমাদের সেখানে প্রবেশ করতে দেয় না৷ নির্মাণ কাজের প্রয়োজনে হাজার-হাজার গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে৷''

এই অবস্থায় গ্রামের মেয়েরা আর কাঠ কুড়ানোর জন্য জঙ্গলে ঢুকতে পারছে না৷ সবচেয়ে কাছের জঙ্গল প্রায় ৫ গুণ দূরে৷ সেখানে যেতে-আসতে অনেক বেশি সময় লাগে৷ তাছাড়া নির্মাণের নামে যা চলছে, তার ফলেও গ্রামের মানুষ দুশ্চিন্তায় ভুগছে৷ গণপত মাদাগে জানালেন, ‘‘পাহাড় থেকে যে ঢাল নেমেছে, ঠিক তার মুখেই শুরু হচ্ছে আমাদের ধানের খেত৷ আর কিছুদিনের মধ্যেই বর্ষা আসবে৷ পাহাড়ে ক'দিন ধরেই জোর বৃষ্টি হচ্ছে৷ পাহাড়ের গায়ে যেসব বড় বড় পাথর রয়েছে, বৃষ্টির জলের তোড়ে সেগুলি গড়াতে গড়াতে সমতলে এসে আমাদের খেত নষ্ট করে দিতে পারে৷''

বনাঞ্চলের ক্ষতি

‘অন্ধ্র লেক উইন্ড পার্ক' সংস্থা যে ৩টি জায়গায় উইন্ড পার্ক চালু করছে, তার মধ্যে কারপুডও রয়েছে৷ এখানে মোট ১৪২টি কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷ বন দপ্তর এই কাজের জন্য জঙ্গলের মধ্যে ১৯৪ হেক্টরে নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল৷ ২০১০ সালের মার্চ মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হয়৷ সবার আগে ডায়নামাইট ও বুলডোজার দিয়ে পথ সাফ করে পাহাড় পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা তৈরি করা হয়৷ তারপর উইন্ড হুইল বা বায়ুশক্তি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বিশাল চাকা বসানোর জন্য ঢালাই করে ভিত্তি তৈরি হয়৷ কিন্তু প্রথমে যে রাস্তা তৈরি হয়েছিল, দেখা গেল বিশাল যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য তা মোটেই যথেষ্ট নয়৷ ফলে রাস্তা আরও চওড়া করতে হলো৷


ক্ষোভ ও প্রতিরোধ

এত বড় আকারের নির্মাণ প্রকল্পের ফলে গাছপালা ও খেত ধ্বংস হওয়া সত্ত্বেও গ্রামবাসিকে কিছু জানাবার প্রয়োজন রয়েছে বলে কেউ মনে করে নি৷ তাদের যথেষ্ট ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় নি৷ বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ দেখা দিলেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় নি৷ স্থানীয় মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই নিরক্ষর, নাগরিক হিসেবে নিজেদের অধিকার সম্পর্কেও তারা সচেতন নয়৷ ফলে নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে সংঘাতের পথে যাবার ক্ষমতাই তাদের নেই৷ তবে স্থানীয় সাংবাদিক অতুল কালে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন, তাদের প্রতিরোধ করতে শেখাচ্ছেন৷ বন দপ্তর এতকাল তাদের গাছ কাটতে দেয় নি৷ অথচ নির্মাণ সংস্থা হাজার হাজার গাছপালা কেটে ফেলছে৷ এই প্রকল্প থেকে তাদের সরাসরি কোনো উপকারই হবে না বলে তিনি মনে করেন৷ তাছাড়া এমন সব প্রকল্প পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, তা যাচাই না করেই সরকার ছাড়পত্র দিয়ে থাকে৷ অতুল প্রশ্ন তুলছেন, বন-জঙ্গল ধ্বংস না করে কেন এমন সব জায়গায় উইন্ড পার্ক তৈরি হচ্ছে না, যেখানে খালি জমি পড়ে আছে৷

প্রতিবেদন: রাইনার হ্যোরিশ/সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য