1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবহনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

৮ অক্টোবর ২০০৯

বিকল্প জ্বালানী কীভাবে ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে, বৃহস্পতিবার বার্লিনে বিশেষজ্ঞরা তার একটা রূপরেখা তুলে ধরলেন৷

https://p.dw.com/p/K2GM
এই রকম হাইব্রিড গাড়ি ভবিষ্যতে জ্বালানীর সমস্যা মেটাতে সাহায্য করবেছবি: dpa

জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানীর সমাপ্তি

পেট্রোলিয়াম বা কয়লার মত জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানীর ভাণ্ডার ক্রমশঃ ফুরিয়ে যাচ্ছে৷ অন্যদিকে বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষ পরিবহন ব্যবস্থার উপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে৷ বিকল্প জ্বালানীর ব্যবহার বাড়ানোর জন্য চাপ বেড়ে চলেছে বটে, কিন্তু এক্ষেত্রে একের পর এক বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ঘটে চললেও সেই সব প্রযুক্তি এখনো পুরোপুরি বাজারের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে নি৷ ফলে বিকল্প জ্বালানীর ব্যাপক ব্যবহার এখনো ব্যাপক আকারে শুরু হতে পারছে না৷ অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে বায়ু দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনাও অত্যন্ত জরুরি৷ এমনই এক প্রেক্ষাপটে এশিয়া প্যাসিফিক সপ্তাহ উপলক্ষে বিশেষজ্ঞরা বৃহস্পতিবার ঠিক এই বিষয়ে আলোচনা করলেন৷

গাড়ি চালাতে হলে পেট্রোল বা ডিজেল প্রয়োজন হয়৷ প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারও বেড়ে চলেছে৷ ব্যাটারি-চালিত বৈদ্যুতিক গাড়ির সাফল্য এখনো সীমিত৷ জ্বালানী হিসেবে হাইড্রোজেনের প্রয়োগও বাড়ছে৷ মার্সিডিজ গাড়ি নির্মাতা ডাইমলার সংস্থার প্রতিনিধি ড.ব্যার্ন্ড হেনসে এক্ষেত্রে ভবিষ্যতের এক রূপরেখা তুলে ধরলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমশঃ শেষ হয়ে আসছে৷ জীবাশ্ম-ভিত্তিক জ্বালানীর ব্যবহার আমাদের কমিয়ে ফেলতে হবে৷ মানুষের জীবনযাত্রার মান বজায় রেখে বড় শহরগুলির পরিবহন ব্যবস্থার কাঠামোকে কীভাবে এই পরিস্থিতির উপযোগী করে তোলা যায়, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে৷ কার্বন নির্গমন কমাতে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং বিকল্প জ্বালানীর প্রসারের জন্য করের ক্ষেত্রে উৎসাহ দিতে হবে৷’’

G8 Klima Schwellenländer China Smog Luftverschmutzung
শহরের দূষিত বাতাস দূর করতে হলে বিকল্প জ্বালানী ছাড়া অন্য কোন পথ নেইছবি: AP

তাঁর মতে, প্রথমত সাধারণ পেট্রোল বা ডিজেল-চালিত ইঞ্জিনে ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়ে জ্বালানীর ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব৷ দ্বিতীয়ত, হাইব্রিড বা মিশ্র-প্রযুক্তির মাধ্যমে পেট্রল-ডিজেলের সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানীর অন্য উৎসের সমন্বয় ঘটানো সম্ভব৷ তৃতীয়ত ‘ফুয়েল সেল’ প্রযুক্তির বিশেষ ব্যাটারির মাধ্যমে গাড়ি চালানো যেতে পারে৷

প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু বিষয় বাস্তবে গুরুত্ব রাখে৷ যে কোন বিকল্প জ্বালানীর ব্যাপক প্রসারের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে৷ সরকারের নীতিও সাফল্যের অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি৷ যেমন লন্ডন শহরে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহ হিসেবে বিভিন্ন রাস্তায় ব্যাটারি চার্জ করার ব্যবস্থা রয়েছে৷

প্রাকৃতিক উপাদানের ভাল-মন্দ

একেবারে প্রাকৃতিক উপাদানকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে, যদিও এবিষয়ে বিতর্কের শেষ নেই৷ খাদ্যশস্য, গাছপালার মত উপাদানকে জ্বালানীতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে৷ ‘বায়ো ফুয়েল’এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, গাড়ির সাধারণ তেলের ট্যাঙ্কেই ঐ জ্বালানী ঢালা যেতে পারে৷ এই ধরনের ‘বায়ো ফুয়েল’ বিকল্প জ্বালানী হিসেবে সাফল্যের মুখ দেখলেও এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে৷ যেমন আখের রস, রেপসিডের মত উৎস থেকে ইথানল ব্যবহার হচ্ছে, যার ফলে খাদ্য হিসেবে আখ বা চিনির ব্যবহার নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে৷ খাদ্যশস্যের মূল উদ্দেশ্য ক্ষুধা নিবারণ করা৷ খাদ্যের বদলে সেই উপাদানকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করলে কৃষক বাড়তি মুনাফার জন্য জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতে উৎসাহ পেলে শস্যের মূল্য বেড়ে যাবে৷ তাছাড়া শস্যের নির্ভরযোগ্য সরবরাহ ও মান বজায় রাখাও বড় চ্যালেঞ্জ৷ মালয়েশিয়ার আর ভাসু ভাসুথেওয়ান বললেন, গত ২ বছরে খাদ্যের মূল্য বাড়ার পেছনে আসলে পেট্রোলিয়ামের মূল্যবৃদ্ধি বা অনাবৃষ্টির মত কারণ কাজ করেছে৷ তিনি আরও বললেন, ‘‘অবশ্যই খাদ্যাভাবের ঝুঁকির প্রশ্ন উঠলে জ্বালানী অগ্রাধিকার পেতে পারে না৷ কিন্তু অন্যদিকে আমি মনে করি, খাদ্যাভাবের বিপদের বিষয়টিকে অত্যন্ত ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে এবং ‘বায়ো ফুয়েল’ এই বিতর্কের শিকার হচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনর মারিয়ন ফিশার নিজে একথা বলেছেন৷’’

Zuckerrohr
আখের রস ইথানল হিসেবে গাড়ির ট্যাঙ্কে ভরা হলে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছেছবি: Geraldo Hoffmann

‘ফুয়েল সেল’ প্রযুক্তি

‘ফুয়েল সেল’ প্রযুক্তির বিষয়ে চীনে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে৷ অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে গাড়ির সংখ্যা যেভাবে বেড়ে চলেছে, তার আলোকে সেদেশের সরকার বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে ‘ফুয়েল সেল’ গবেষণায় উৎসাহ ও সহায়তা দিচ্ছে৷ ইতিমধ্যেই কিছু সাফল্য দেখা যাচ্ছে৷ গত বছর বেইজিং অলিম্পিকের সময় ‘ফুয়েল সেল’ চালিত এমন বেশ কিছু গাড়ি ও বাস ব্যবহার করা হয়েছিল৷ শুধু বিচ্ছিন্ন কিছু প্রয়াস নয়, ব্যাপক আকারে ‘ফুয়েল সেল’এর উৎপাদন হচ্ছে চীনে৷ ২০২০ সালের মধ্যে ৮ শতাংশ গাড়ি নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবে বলে পূর্ববাণী করা হচ্ছে৷

জার্মানির উদ্যোগ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জার্মানি চিরকাল অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে৷ ড.ক্লাউস বোনহফ ‘ফুয়েল সেল’ গবেষণার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরলেন৷ এক জাতীয় উদ্ভাবন কর্মসূচির আওতায় সামগ্রিক এক উদ্যোগ চলছে৷ সরকার ও শিল্প মহলের সমন্বয়ে শুধু বিকল্প জ্বালানীর প্রয়োগ নয়, উদ্ভাবনের মাধ্যমে জার্মান অর্থনীতিকে সুবিধাজনক অবস্থানে আনার চেষ্টা চলছে৷ এই প্রযুক্তির উন্নতি ও বেড়ে চলা প্রয়োগ হলে কর্মসংস্থানও বেড়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ বেশ কয়েকটি শহরে পরীক্ষামূলকভাবে বিকল্প জ্বালানী চালিত গাড়ি ও বাস চালানো হচ্ছে৷ শুধু পরিবহন নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ‘ফুয়েল সেল’এর প্রয়োগ বাড়ানোর বিষয় ভাবনা চিন্তা চলছে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: দেবারতি গুহ