পরমাণু বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ কী?
১৯৮৬ সালে চেরনোবিল এবং ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমায় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর পরমাণু শক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে৷
সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল চেরনোবিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর ইউক্রেন, বেলারুশ ও রাশিয়ার বাতাসে ব্যাপক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও চিন্তিত হওয়ার মতো তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গিয়েছিল৷ দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে এখনও ‘এক্সক্লুশন জোন’ আছে, যেখানে মানুষজনকে বসতি স্থাপন করার অনুমতি দেয়া হয় না৷
পরের শিকার জাপান
২০১১ সালের মার্চে জাপানে প্রথমে নয় মাত্রার ভূমিকম্প ও তারপর সুনামির কারণে ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি রিঅ্যাক্টর দুর্ঘটনায় পড়ে৷ ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় নিউক্লিয়ার বোমা ফেলার কারণে যে পরিমাণ সিজিয়াম-১৩৭ বের হয়েছিল, ফুকুশিমার ঘটনায় তার চেয়ে প্রায় ৫০০ গুন বেশি তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল৷
তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব
চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ জাপানেও একই অবস্থা তৈরি হয়েছে৷ ঐ অঞ্চলের শিশুদের টাইফয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা জাপানের অন্যান্য অঞ্চলের শিশুদের তুলনায় প্রায় ২০ গুন বেশি৷
৩০ থেকে ১ শতাংশ
ফুকুশিমায় দুর্ঘটনার আগে জাপানের বিদ্যুৎ চাহিদার ৩০ শতাংশ আসত পরমাণু শক্তি থেকে৷ তবে ২০১১ সালের পর সেটি নেমে এসেছে মাত্র এক শতাংশে৷
সংকটে পরমাণু শক্তি শিল্প
বর্তমানে এই শিল্প আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ক্ষতি গুনছে৷ আর নতুন করে রিঅ্যাক্টর তৈরির কাজও স্থগিত আছে৷
ফ্রান্সে বাধা
‘প্রেসারাইজড ওয়াটার রিঅ্যাক্টর’ বা পিডাব্লিউআর নামে দেশটির সর্বাধুনিক নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর নিয়ে ফ্রান্সের অনেক আশা ছিল৷ প্রকল্পটি বেশ নিরাপদ বলেই তারা মনে করেছিল৷ কিন্তু ২০১২ সালে এটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ২০১৮ সালে সেটি চালু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ব্যয় হচ্ছে ১০ বিলিয়ন ইউরো - প্রকৃত খরচের চেয়ে প্রায় তিন গুন বেশি৷
নতুন রিঅ্যাক্টর তৈরি করবে ব্রিটেন
অনেক বছর ধরে দেশটি দুটি নতুন পিডাব্লিউআর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে৷ এতে খরচ হতে পারে ৩৩ বিলিয়ন ইউরো৷ তবে আর্থিকভাবে এটি লাভজনক হবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ কারণ, ঐ রিঅ্যাক্টরগুলো থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তার দাম সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের চেয়ে বেশি হবে৷ ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ভর্তুকি দিতে হতে পারে৷
দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা
২০২২ সালের মধ্যে সব পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে একটি আইন পাস করেছিল জার্মানি৷ তবে বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ২০০৫ সালে ক্ষমতায় এসে সেই আইন থেকে সরে এসেছিলেন৷ তবে ২০১১ সালে জাপানে দুর্ঘটনার পর ম্যার্কেল তাঁর সিদ্ধান্ত বদল করেন৷
একে একে বন্ধ হচ্ছে
এখন পর্যন্ত জার্মানির নয়টি রিঅ্যাক্টর বন্ধ হয়েছে৷ বাকি আছে আটটি৷ সেগুলোও ২০২২ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে৷
দুর্ঘটনার আশঙ্কা
ইউরোপীয় ইউনিয়নে এখনও ১৩২টি রিঅ্যাক্টর চালু আছে৷ ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত এগুলো কার্যকর থাকার কথা৷ এদের গড় বয়স এখন ৩২৷ ফলে মাঝেমধ্যেই ত্রুটি ধরা পড়ছে৷ দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে বিক্ষোভকারীরা এগুলো এখনই বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন৷
চীন এখনও পরমাণু বিদ্যুৎ চায়
ফুকুশিমায় দুর্ঘটনার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও রাশিয়ায় এখনও নতুন কোনো পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়নি৷ তবে চীন এখনও এর থেকে সরে আসেনি৷ বরং কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকল্প হিসেবে পরমাণু শক্তির কথা চিন্তা করছে তারা৷ পাশাপাশি সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের প্রসার ঘটানোরও পরিকল্পনা আছে তাদের৷