1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরমাণু বর্জ্য পাঠাবেন না – জার্মানির প্রতি রুশ পরিবেশবাদীদের আহ্বান

১৪ জানুয়ারি ২০১১

কিছুদিন আগে পুড়ে খাক হয়েছে উরাল পর্বতমালার জঙ্গল৷ সবুজ গাছগুলো পুড়ে হয়েছে কয়লা৷ সেই দাবানল প্রায় স্পর্শ করেছিল একটি পারমাণবিক কেন্দ্রকে৷ এর নাম মায়াক পরমাণু স্থাপনা৷ সেখানেই পাঠানো হচ্ছে পরমাণু বর্জ্য৷ খোদ জার্মানি থেকে৷

https://p.dw.com/p/zxQ8
জার্মানি থেকে পরমাণু বর্জ্য বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে (ফাইল ছবি)ছবি: dapd

রাশিয়ার উরাল পর্বতমালায় জমে থাকে বরফ৷ সেই বরফ গলা জল গিয়ে পড়ে একটি নদীতে৷ এই নদীর নাম তেচা৷ কলকলিয়ে বয়ে যাচ্ছে এর পানি৷ সেই জলের ধারে বসে ছিলেন আলিমভ৷ সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধ৷ ভাবছিলেন, এই জলে কি নামা যাবে আর কখনো? নদীর গভীরের নানা রঙের মাছ আর সবুজ শ্যাওলা কি বেঁচে থাকবে? এমনিতেই অনেকটা খারাপ অবস্থা নদীটির৷ বিষাক্ত এই জল!

কেন এমন ভাবছেন আলিমভ? উত্তর – পরমাণু বর্জ্য৷ জার্মানির ড্রেসডেন শহরের খুব কাছে সাবেক পূর্ব জার্মানির রসেনডর্ফ পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র৷ সেই কেন্দ্র থেকেই পরমাণু বর্জ্য যাচ্ছে রাশিয়ার উরাল পর্বতমালা সংলগ্ন মায়াক পরমাণু স্থাপনায়৷ ২০০৪ সালে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসারে এই বিষাক্ত বর্জ্য যাচ্ছে সেখানে৷ তেজস্ক্রিয় পরমাণু রডগুলো থেকে বর্জ্য অপসারণ করে সেই বিষাক্ত পানি ফেলতে হবে নদীতে৷ আর এর ফলেই নদীর জলে জমা হবে আরও বিষ৷

আলিমভের মতো শতশত মানুষের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছে সেখানকার পরিবেশবাদীরা৷ তারা সরাসরি জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দয়া করে এই বর্জ্য পরিবহণ বন্ধ করুন৷ কারণ, মায়াক পরমাণু স্থাপনায় নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আধুনিক নয় সেটি৷ বর্জ্য পরিশোধন করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয় এটি৷ এক কথায় তারা মায়াক পরমাণু স্থাপনাকে তুলনা করছেন জীবন্ত টাইম বোমার সঙ্গে৷

Wege des Urans Vom Erzgebirge ins Wendland Flash-Galerie
মোর্সলেবেনে পরমাণু বর্জ্য জমা রাখা হচ্ছে (ফাইল ছবি)ছবি: picture-alliance/ZB

সেখানকার বিরোধী দল ইয়াবলোকোর নেতা সের্গেই মিত্রোচিন বলছেন, ‘আমরা জেনেছি এখানে বিষাক্ত ১ হাজারটি পরমাণু ফুয়েল রড পাঠানো হচ্ছে৷ এর মানে এই যে আরও বিষাক্ত হয়ে যাবে তেচা এবং উরাল পর্বতমালা- এক কথায় চেলিয়াবিনস্ক অঞ্চলের পানি৷'

আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের স্থানীয় নেতা ভ্লাদিমির চুপরভ'এর মতে, প্রতি বছর এমনিতেই তেচা নদীতে পাঁচ থেকে ছয় মিলিয়ন ঘন মিটার বিষাক্ত পরমাণু মিশ্রিত পানি পড়ছে৷ ফলে বিষাক্ততা সর্বত্র৷

‘আমরা ২০০৩ সালে এই নদীর পানি পরীক্ষা করেছিলাম৷ তখনই আমরা এখানে প্লুটোনিয়ামসহ নানা বিষাক্ত পদার্থের অস্তিত্ব পেয়েছিলাম৷ এক কথায় এখন যা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে রয়েছে৷ জনজীবন এখানে মারাত্মক হুমকির মুখে৷ তা সত্ত্বেও এখানে মানুষ মাছ ধরছে, শিশুরা গোসল করছে৷ এখানেই আছে আরেকটি লেক৷ নাম কারাচাই৷ মধ্য ও দক্ষিণ উরালে রুশ গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন অনেক শিল্পকারখানা স্থাপন করে৷ মায়াক কমপ্লেক্স ১৯৪৮ সাল থেকে পরমাণু অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন করে আসছে৷ মায়াকেই প্রথম সোভিয়েত পারমাণবিক বোমার কাঁচামাল প্রস্তুত হয় এবং ১৯৪৯ সালের আগস্টে বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়৷ সেখানে ১৯৪৯, ১৯৫৭ ও ১৯৬৭ সালে তিন দফায় পরমাণু বর্জ্য দূষণের ঘটনা ঘটে৷ সব মিলিয়ে এগুলির বিকিরণ, চেরনোবিল বিপর্যয়ের ফলে সৃষ্ট বিকিরণের প্রায় দশগুণ৷ ১৯৫০-এর দশকে মায়াকের পরমাণু বর্জ্য নিকটস্থ কারাচাই হ্রদে ফেলা হতো এবং এর ফলে হ্রদটি তেজস্ক্রিয় হয়ে পড়ে৷ ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে শ্রমিকেরা হ্রদটিকে পাথর দিয়ে ভরাট করা শুরু করে এবং মধ্য ৯০-এর দশকের মধ্যে এটিকে কংক্রিট চাপা দেয়ার কথা থাকলেও ১৯৯১ সালে এক সরকারি কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে এটা করলে ভূগর্ভস্থ পানির তেজস্ক্রিয়তা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ উরালে এখনও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য কীভাবে পরিষ্কার করা হবে এ নিয়ে বিতর্ক চলছে৷

সরকারি নির্দেশনা অনুসারে এই নদীর জল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ৷ কিন্তু মিলা কাবিরোভা, যিনি সেখানকার অধিবাসী, যিনি বেড়ে উঠেছেন এই নদীর তীরেই, তিনি জানালেন, আমাদের কাছে এর পানি ব্যবহার করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই৷ তাই এই নদীর পানি আমরা ব্যবহার করছি৷

‘১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে তেচা'য় পরমাণু বর্জ্যবাহী পানি ফেলা শুরু হয়৷ এর আগে এই নদীর পানিই ছিল এখানকার মানুষের খাবার জলের একমাত্র সংস্থান৷ সকলে এই পানি ব্যবহার করতেন৷'

এ অবস্থায় যদি আবারো মায়াকে নতুন করে ফেলা হয় বর্জ্য মিশ্রিত পানি, তাহলে এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ আর মানুষের হবে সবচেয়ে ক্ষতি৷ তাই তাদের আহ্বান জার্মানির প্রতি, ‘দয়া করে এখানে পরমাণু বর্জ্য পাঠাবেন না৷'

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন