1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে নতুন সাত জেলা

পায়েল সামন্ত
৩ আগস্ট ২০২২

পশ্চিমবঙ্গের নতুন সাতটি জেলা গঠনের সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিতর্ক। বিরোধীরা বলছে, নিয়োগ দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরাতেই এই পদক্ষেপ। জেলাবাসীর বক্তব্য, প্রশাসনিক কাজের সুবিধা হলেও এই বিভাজনে মুছে যাবে ইতিহাস।

https://p.dw.com/p/4F2gA
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: Subrata Goswami/DW

নতুন সাত জেলা

সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করেছেন, দক্ষিণবঙ্গে নতুন সাতটি জেলা গঠন করা হবে। পাঁচটি জেলা থেকে ভেঙে নতুন সাতটি জেলা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ভেঙে তৈরি হচ্ছে সুন্দরবন জেলা। উত্তর ২৪ পরগনা থেকে বসিরহাট জেলা এবং বনগাঁ ও বাগদা নিয়ে ইছামতী নামে নয়া জেলা। নদিয়া ভেঙে তৈরি হবে রানাঘাট জেলা। বাঁকুড়া থেকে বিষ্ণুপুর। এর ফলে ২৩ থেকে বেড়ে পশ্চিমবঙ্গে জেলার সংখ্যা হবে ৩০। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, ছোট জেলা তৈরি করার ফলে প্রশাসনিক কাজে সুবিধা হবে। মানুষ আরো সহজে পরিষেবা নিতে পারবেন। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আরো কার্যকরী ভূমিকা নেবে নতুন জেলা প্রশাসন।

নজর ঘোরানোর চেষ্টা?

বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, "তৃণমূলের দুর্নীতি ক্রমশ সামনে আসছে, তা থেকে নজর ঘোরাতে মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ করে জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেলার নাম ঠিক হয়নি এখনো, বোঝাই যাচ্ছে এ নিয়ে প্রস্তুতি ছিল না।" সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, "জেলা তৈরির আগে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। বিধানসভাতেও আলোচনা হয়নি। এই সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক।"

পরিকাঠামো গড়ার খরচ

পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, জেলা ভাগের ফলে প্রশাসনিক কাজ মসৃণ হবে ঠিকই। কিন্তু এর জন্য রাজ্য সরকারের খরচ অনেকটা বেড়ে যাবে, সাতটি নতুন

জেলার প্রশাসনিক পরিকাঠামো তৈরির ব্যয় বহন করতে গিয়ে চাপ পড়বে রাজকোষের উপর। এমনিতেই বিপুল ঋণের বোঝা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মাথায়। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথী, কন্যাশ্রী-র মতো জনকল্যাণমূল প্রকল্প চালাতে যে টাকা খরচ হচ্ছে, তার সংস্থান করাই রাজ্য সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জের। সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, "সরকারি কর্মচারীরা মহার্ঘভাতা পাচ্ছেন না। হাতে টাকা নেই, তা হলে নতুন জেলা গঠনের ঘোষণা কেন?"

আগে কী অভিজ্ঞতা?

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সুবিধার্থে এর আগে রাজ্যে নতুন পুলিশ জেলা তৈরি করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই পুলিশ জেলা রয়েছে তিনটি। আবার স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করেছেন স্বাস্থ্য জেলা। সেই প্রসঙ্গ টেনে অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস, রাজ্যের প্রাক্তন শীর্ষ পুলিশকর্তা নজরুল ইসলামের মন্তব্য, "বাড়ির কাছে থানা বা সরকারি অফিস হলে ভালোই। কিন্তু দেখতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা নিয়ম মেনে কাজ করছেন কি না। তবেই মানুষের উপকার হবে। নইলে পুলিশ বা প্রশাসনের আধিকারিকরা জনগণের বাড়িতে বসে থাকলেও লাভ হবে না।" তার মতে, "এর আগে একের পর এক পুলিশ ও স্বাস্থ্য জেলা তৈরি হয়েছে। তাতে সাধারণ মানুষের কতটা লাভ হয়েছে? বেশি লাভ হয়েছে শাসক দলের নেতাদের।"

খুশি জেলাবাসীর বড় অংশ

নতুন সাত জেলা গঠনের সিদ্ধান্তে জেলায় জেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের বাসিন্দা নবারুণ ঘোষাল বলেন, "নিয়মিত জেলা সদর বারাসাত যাওয়ার হাত থেকে এ বার রেহাই পাব। একটা কাজ সারতে সারাদিন চলে যেত। ভবিষ্যতে জেলাশাসকের দপ্তর কাছেই হবে আশা করি।" দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের বাসিন্দা সৌমিত্র মণ্ডল বলেন, "সুন্দরবন আলাদা মনোযোগ পাবে। আমাদের সেই আলিপুরের সদর দপ্তরে যেতে হতো। নয়া জেলার সদর কাছাকাছি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।"

সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ, পথে জনতা

জেলা গঠনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদও শুরু হয়েছে মঙ্গলবার সকাল থেকে। বহরমপুরে আলাদা জেলা গঠনের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী। ভিডিও বার্তায় বলেন, "মুর্শিদাবাদ নামটাকে মুছে দেওয়া

যাবে না এই জেলার সঙ্গে যোগ রয়েছে ইতিহাসের। এক সময় বাংলা-বিহার-ওড়িশার রাজধানী ছিল এই মুর্শিদাবাদ। এই নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা হলে তা রুখতে যতদূর যেতে হয় যাব।"

একই সুর শোনা গেছে নদিয়ার শান্তিপুরের প্রতিবাদ মিছিল ও সভায়। প্রাচীন বৈষ্ণবভূমি শান্তিপুরের রাস্তায় প্ল্যাকার্ড, ঢোল-করতাল নিয়ে মিছিল হয় মঙ্গলবার। মিছিলে অংশ নেওয়া শৈবাল চৌধুরী বলেন, "আমরা নদিয়ার বাইরে যেতে চাই না। রানাঘাট আলাদা জেলা হলে আমাদের তার সঙ্গে জুড়ে দেয়া হবে। আমরা চাই নদিয়ার নামটা আমাদের সঙ্গে থাক।" নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব প্রশ্ন তুলেছেন জেলার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, "নদিয়াকে ভাগ করতে হলে বেথুয়াডহরির পর থেকে করিমপুর একটা জেলা হলে মানুষের উপকার হত। করিমপুর অনেক প্রত্যন্ত এলাকা। আবার রানাঘাটের বদলে কল্যাণী নতুন জেলা হতে পারত। সেখানে পরিকাঠামো তৈরি আছে। রানাঘাটের সব নতুন করে তৈরি করতে বিপুল খরচ হবে।"

মুখ্যমন্ত্রী সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পরই জানিয়েছেন, ছয় মাস সময় লাগবে সম্পূর্ণ পরিকাঠামো তৈরি করতে। তার পরপরই রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। দুটি ক্ষেত্রেই বিপুল প্রস্তুতি নিতে হবে রাজ্য সরকারকে। তার সঙ্গে চাই টাকার সংস্থান।