1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নয়া নীতিতে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবায় সংকটের আশঙ্কা

২১ ডিসেম্বর ২০১৯

এমডি পঠনপাঠনে লাগাম টেনে সরকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব মেটাতে চাইছে৷ কিন্তু সরকারি চিকিৎসকরাই বলছেন, এতে ফল হবে উল্টো৷ গ্রামীণ চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হবে৷

https://p.dw.com/p/3VBrE
Indien Ländliche Gesundheitsdienste in Westbengalen
ছবি: DW/Payel Samanta

জেলায় জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল৷ কিন্তু তাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব৷ সেটা মেটাতে সরকার আগামী বছর থেকে এমডি পঠনপাঠনে নিয়ন্ত্রণ জারি করতে চলেছে৷ নতুন নিয়মে সরকারি চিকিৎসকরা এমডি পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন না৷ এমডি ডিগ্রি লাভের পর চিকিৎসকরা রোগী পরিষেবায় যোগ দিচ্ছেন না, শিক্ষকতার কাজে যুক্ত হচ্ছেন বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের অভিযোগ৷ এর ফলে রোগীরা পরিষেবা পাচ্ছেন না৷ এই সমস্যা বেশি ধরা পড়ছে গ্রামীণ অঞ্চলে৷ সেখানে হাসপাতাল গড়ে উঠলেও পাওয়া যাচ্ছে না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক৷ পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েক বছরে অনেকগুলি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে৷ এর মধ্যে কয়েকটি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি৷ জেলায় জেলায় এই পরিকাঠামো গড়ার উদ্দেশ্য শহরের চিকিৎসা পরিষেবার উপর চাপ কমানো৷ কিন্তু পরিকাঠামো গড়লেও চিকিৎসকের অভাবে পরিকল্পনা কার্যকর হচ্ছে না৷ 

ডা. শুভজিৎ রায়

এমডি ডিগ্রি নিয়ে প্রতি বছর যত চিকিৎসক পাশ করছেন, তার একটা বড় অংশ চিকিৎসার কাজে যোগ দিচ্ছে না৷ স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, এই সংখ্যা পাশ করা চিকিৎসকদের প্রায় অর্ধেক৷ এই সমস্যা মেটাতে নয়া নীতির পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ একমাত্র এমডি পঠনপাঠনে ঝোঁক কমালে তবেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি দূর করা যাবে৷ সরকার কোনো এমডি ডাক্তারকে শিক্ষকতায় যোগ দেওয়া থেকে বিরত করতে পারে না৷ তাই স্বাস্থ্য দফতরের পরিকল্পনা, সরকারি চিকিৎসকদের এমডি পঠনপাঠনে নিয়ন্ত্রণ জারি করলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বেশি সংখ্যায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবায় পাওয়া যাবে৷ এই চিকিৎসকরা এমডি পড়ার ক্ষেত্রে যে সংরক্ষণ বা কোটার সুবিধা পান, একে বলা হয় সার্ভিস ক্যাটেগরি৷ এই সংরক্ষণ তুলে দেওয়া হবে৷ সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার অর্থ, অনেক চিকিৎসকের এমডি পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হবে৷

পশ্চিমবঙ্গে পাশ করা চিকিৎসকের সংখ্যা ৭০ হাজার৷ এর মধ্যে ৮০ শতাংশ চিকিৎসকই শহরমুখী৷ তাঁদের গ্রামীণ পরিষেবার দিকে ঠেলে দেওয়ার যে সরকারি পরিকল্পনা, তার বিরোধিতা করছে সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম'৷ এই সংগঠনের সদস্য, বাঁকুড়া জেলার চিকিৎসক ডা. সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের জেলায় যেকে অনীহার অন্যতম কারণ সরকারি বদলি, পদোন্নতি, পোস্টিং নিয়ে দুর্নীতি৷ সরকারি চিকিৎসকদের এমডি, এমএস করার বিশেষ সুযোগ কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ সার্ভিস ক্যাটেগরি তুলে দিলে লাভ কিছু হবে না৷ এতে গ্রামীণ চিকিৎসা পরিষেবা ভেঙে পড়বে৷'' এক সরকারি চিকিৎসক জানান, ‘‘প্রশাসনের উদাসীনতার জন্য পশ্চিমবঙ্গে ১০,৩৪৬ জন রোগীপিছু রয়েছেন মাত্র একজন সরকারি চিকিৎসক৷ এই সংখ্যা সর্বভারতীয় স্তরে আরো খারাপ, ১১,৪৩৫ জন রোগীর জন্য একজন সরকারি চিকিৎসক রয়েছেন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এক হাজার জন রোগীপিছু একজন চিকিৎসকের কথা বলেছে৷''

ডা. স্বপন বিশ্বাস

চিকিৎসকদের বক্তব্য, সার্ভিস কোটা তুলে দেওয়ার নীতি কেন্দ্রীয় সরকারের, রাজ্য যা বাস্তবায়িত করছে৷ ২০১৯ সালেও সংরক্ষণের সুবিধা পেয়েছেন চিকিৎসকরা, আগামী বছর থেকে উঠে যেতে পারে৷ উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘‘নব্বইয়ের দশক থেকে এই সুবিধা চালু হয়৷ তিন বছর গ্রামে থাকলে চিকিৎসকরা উচ্চতর পঠনপাঠনে কোটার সুবিধা পান৷ সেটা উঠে গেলে গ্রামে যাওয়ার আগ্রহ কমবে৷'' এটাকে চিকিৎসা পরিষেবার বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ বলে মনে করছেন তিনি৷ ডা. বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘একজন চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতালে চলে যেতে পারেন, প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন৷ এতে তাঁর বিশেষ ক্ষতি নেই৷ ক্ষতি হবে গ্রামীণ জনতার৷''

বীরভূমের দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শুভজিৎ রায় সংরক্ষণ প্রত্যাহারের পরিকল্পনায় উদ্বিগ্ন৷ বিপুল রোগীর ভার সামলাতে হয় তাঁকে৷ তিনি বলেন, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় একজন চিকিৎসককে তিনজনের কাজ করতে হয়৷ অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ চালাতে হয়৷ আমরা একেক জন গড়ে একবেলায় ৩০০জন রোগী দেখি৷ সংরক্ষণ উঠে গেলে গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে৷ এটা গরিব মানুষকে বেসরকারি হাসপাতাল ও বীমা সংস্থার দিকে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত বলে মনে হচ্ছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান