1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নেতাজীর নামে নতুন দ্বীপ

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১ জানুয়ারি ২০১৯

আন্দামান নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের রস দ্বীপের নতুন নাম নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বীপ৷আরো দু'টি দ্বীপ নতুন নাম পেয়েছে৷ একটির নাম হয়েছে শহীদ দ্বীপ এবং অন্যটির স্বরাজ দ্বীপ৷

https://p.dw.com/p/3Arpt
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G. Singh

প্রধানমন্ত্রী মোদী ৩০শে ডিসেম্বর আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের তিনটি প্রধান দ্বীপের নতুন নামকরণ করেন৷ আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ সফরকালে তিনি বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পও ঘোষণা করেন৷

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শীর্ষ নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ গত ৩০ শে ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের তিনটি প্রধান দ্বীপের নতুন নামকরণের কথা ঘোষণা করেন৷ এই তিনটি দ্বীপ হলো, রস, নীল ও হ্যাভলক৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি সেনা আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ দখল করার পর নেতাজী এখানে আসেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে৷ সেই দিনটি ছিল আজ থেকে ৭৫ বছর আগে ১৯৪৩ সালের ৩০শে ডিসেম্বর৷ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্দামানে এসে ভারতের তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন৷ সেই ঐতিহাসিক দিনটির স্মরণে ৭৫-তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই দ্বীপপুঞ্জের তিনটি প্রধান দ্বীপের নতুন নামকরণ হয়৷ রস দ্বীপের নাম হয় নেতাজি সুভাষ দ্বীপ, নীল দ্বীপের নতুন নাম শহিদ দ্বীপ এবং হ্যাভলক দ্বীপের নাম স্বরাজ দ্বীপ৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী নেতাজীর নামে একটি স্মারক ডাকটিকিট এবং ৭৫ টাকার একটি বিশেষ মুদ্রাও প্রকাশ করেন৷ পাশাপাশি নেতাজীর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাসও করেন মোদী৷

পরে স্থানীয় নেতাজী স্টেডিয়ামে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘‘যখনই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত হিরোদের কথা ওঠে, তখন আমরা নেতাজীর নাম স্মরণ করি৷ আন্দামান নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের মাটিতেই ভারতের স্বাধীনতর প্রস্তাব দেন নেতাজী৷ স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেরণা পায় গোটা দেশ৷'' মোদী জনসভায় উপস্থিত সবাইকে মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে নেতাজীকে স্মরণ করার অনুরোধ করেন৷ সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে ওঠে শত শত মোবাইল লাইট৷ জনসভায় কেন্দ্র শাসিত এই অঞ্চলের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেন মোদী, যার মধ্যে আছে এনার্জি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পর্যটন৷ প্রধানমন্ত্রী মারিনা পার্কে ১৫০ ফুট উঁচু স্তম্ভে উত্তোলন করেন ভারতের জাতীয় পতাকা৷ এরপর তিনি যান ঐতিহাসিক সেলুলার জেল পরিদর্শনে৷ ব্রিটিশ আমলে সেলুলার জেলের বিভিন্ন সেলে বন্দি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা৷ যেমন, বীর বিনায়ক দামোদর সাভারকর, বাবা ভান সিং, ইন্দুভূষণ রায় প্রমুখ৷ নির্যাতিত সেইসব স্বাধীনতা যোদ্ধাদের রক্তের ঘ্রাণ মিশে আছে৷ তাই প্রধানমন্ত্রী সেইসব সেলকে তুলনা করেছেন মন্দিরের সঙ্গে৷

হরিপদ বিশ্বাস

 বিজেপি সরকারের এই ‘উথলে পড়া' ভক্তির পেছনে কি বিশেষ রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে ? এর উত্তরে নেতাজীর গড়া নিখিল ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক দলের কর্মকর্তা এবং তিন বারের বিধায়ক হরিপদ বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের আগে কিছু পশু-পাখি তা আগাম আঁচ করতে পারে৷ তেমনি আগামী দুই-তিন মাসে নেতাজীর প্রতি মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে, জানা কথা৷ কাল গ্যাসের দাম কম করা হলো, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের কল্যাণ প্রকল্পের কথা বললেন, রাহুল গান্ধী তিন রাজ্যে কৃষিঋণ মকুব করে দিলেন৷ এরা সব সিজনড ফ্লাওয়ার বা মরশুমী ফুলের মতো৷  বিজেপি ধর্মের নামে যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে, মানুষ তা মেনে নেয়নি৷ মোদী সরকারের কাছে দৈনিক বহু খবরাখবর আসে এই বিষয়ে৷ ভারত এমন একটা দেশ, যেখানে বহু ভাষা, বহু ধর্ম, বহু সম্প্রদায়ের বাস৷ সবই রেকর্ড করা আছে৷ কিছু আবার রেকর্ড করা নেই৷ ভারতের মতো দেশে একই রীতি, একই জীবনধারা চলতে পারে না৷''

‘‘সেটা বুঝতে পেরেছিলেন একমাত্র নেতাজি৷ জাতীয় সংহতির কাঠামোয় তিনি গড়ে তুলেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ৷ সেখানে সব ভারতীয় একই শব্দবন্ধে একে অপরকে সম্বোধন করবে৷ আর সেটা হলো ‘জয়হিন্দ'৷ কিন্তু পরবর্তী কালে আমরা তার ধারেকাছেও গেলাম না৷ এর একমাত্র ব্যতিক্রম নেতাজী সুভাষ'' বললেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা হরিপদ বিশ্বাস৷ নেতাজির প্রতি এখন কেন মোদীর এত ভক্তি? এককালে হিন্দুমহাসভা, পরবর্তীকালে সংঘ পরিবার এবং বিজেপি তারই বাই-প্রোডাক্ট বা ডাইরেক্ট প্রোডাক্ট৷ তাহলে শুরুতে তাদের ভূমিকাটা কী ছিল ? শুধু মোদী নন, প্রয়াত অটল বিহারি বাজপেয়ির ভূমিকা কী ছিল? বাজপেয়ি একবার নেতাজীকে সম্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী বলে৷ তিনি ছিলেন তখন দশ নম্বরে৷ তার আগে দশটি দেশ আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ দুর্ভাগ্য আমাদের নেতাজীকে আমরা যথাযোগ্য সন্মান দিইনি৷''

এবছর আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই অতি ভক্তির পেছনে কি ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি কাজ করছে ? উত্তরে ডয়চে ভেলেকে ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা বললেন, ‘‘অবশ্যই আছে৷ ক্ষমতায় আসার আগে এক রাজনীতি, ক্ষমতায় টিকে থাকতে আরেক রাজনীতি৷ নেতাজীকে তো আমরা ক্ষমতায় আসতে দেখিনি৷ দেখেছি রণাঙ্গনে৷ অখন্ড স্বাধীন ভারত গড়ে তুলতে, যার পরিধি আজকের পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত৷ কিন্তু আজ আমরা কী দেখছি? দেখছি লক্ষ লক্ষ লোক আজও অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত৷ আটক শিবিরে বন্দি৷ এই ভন্ডামি চেপে রাখা যাবে না৷ নেতাজীকে যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সন্মান দেওয়া হয়, তাহলে তার সীমানা অখন্ড ভারত৷''