1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নূর মুকাদামের খুন এবং পাকিস্তানে নারীবিদ্বেষ

২৭ জুলাই ২০২১

গত সপ্তাহে পাকিস্তানে ২৭ বছর বয়সি এক নারীকে প্রথমে গুলি ও পরে গলা কেটে হত্যা করা হয়৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নৃশংস হত্যা থেকেই পাকিস্তানের সমাজে বিষাক্ত নারীবিদ্বেষ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷

https://p.dw.com/p/3y82K
প্রতীকী ছবিছবি: Aurat foundation

নূর মুকাদাম দক্ষিণ কোরিয়ায় সাবেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের মেয়ে৷ ২০ জুলাই তাকে ইসলামাবাদে হত্যা করা হয়৷ অভিযুক্ত হত্যাকারী জহির জমির জাফর মুকাদামের পরিচিত৷ পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, মুকাদামকে গুলি করার পর শিরচ্ছেদ করা হয়৷

পাকিস্তানে নারীর প্রতি সহিংসতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে৷ কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে সাম্প্রতিক কিছু নারী হত্যার ঘটনা এর ভয়াবহতা সম্পর্কে দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে৷

২৫ জুলাই সিন্ধ প্রদেশে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা করে৷ একই দিনে শিকারপুর শহরে আরেক ব্যক্তি তার স্ত্রী, খালা এবং নিজের দুই অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে গুলি করে হত্যা করে৷ শনিবার রাওয়ালপিন্ডিতে এক ৩০ বছর বয়সি নারীকে ধর্ষণের পর ছুরির আঘাত করা হয়৷ রোববার তিনিও মারা যান৷

১৮ জুলাই সিন্ধ প্রদেশে এক স্বামী তার স্ত্রীকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন৷ গত মাসে পেশাওয়ারে এক ব্যক্তি তার সাবেক স্ত্রীসহ দুজনকে ‘সম্মানরক্ষার’ নামে হত্যা করে৷

সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনাগুলো নারীর সুরক্ষায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং নারীর অধিকার দমনে সমাজের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷

পাকিস্তানে বিশেষভাবে সক্ষম নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করছেন যিনি

বিচারহীনতার সংস্কৃতি

নারীর জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় পাকিস্তান বিশ্বে ছয় নম্বরে অবস্থান করছে৷ যৌন নির্যাতন ও পারিবারিক সহিংসতার হার বেড়েই চলেছে৷ অধিকারকর্মীরা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ার জন্য বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেই দায়ী করছেন৷

বালোচিস্তানের সাবেক আইনপ্রণেতা ইয়াসমিন লাহিড়ি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এক নারী আইনজীবীকে ছুরি দিয়ে ১২ বার আঘাত করার পরও আদালত এক ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছেন৷ নারীর প্রতি যারা সহিংসতা করে, তাদের কী বার্তা দেয়া হলো এর মাধ্যমে?’’

২০০২ সালে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়া অধিকারকর্মী মুখতার মাই-এর মতও একই৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা নারীর প্রতি সহিংসতা করে, তারা আইনি প্রক্রিয়াকে ভয় করে না৷’’ তিনি জানান, বেশিরভাগ পাকিস্তানি পুরুষ নারীকে পেটানোকে কোনো সহিংসতাই মনে করে না৷ পাকিস্তানি সমাজ এখনও সামন্তবাদী এবং গোত্রবাদী প্রথা থেকে বের হতে পারেনি বলেও মনে করেন তিনি৷

সমাজের পুরুষতান্ত্রিক আচরণকেও দায়ী করেন অনেকে৷ লাহোর-ভিত্তিক নারীবাদী আন্দোলনকারী মাহনাজ রেহমান বলেন, যখনই নারীরা তাদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয় তখনই তাদের সহিংসতার শিকার হতে হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘নারীদের শিক্ষা দেয়া হয় পুরুষকে মান্য করে চলার জন্য, কারণ, পরিবারে তাদের স্ট্যাটাস উঁচুতে৷’’

পুরুষতন্ত্র ও ধর্ম

লাহোর-ভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট সাজিয়া খান মনে করেন, কিছু কিছু পুরুষ ধর্মীয় শিক্ষার কারণে নিজেদের আলাদা ভাবতে শুরু করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আলেমরা এমনভাবে ধর্মের ব্যাখ্যা দেন যে পুরুষরা মনে করে তারা নারীদের পেটাতেই পারে৷ তারা বাল্যবিয়েও সমর্থন করে এবং নারীদের বলে, স্বামী মারধর করলেও তাকে মেনে চলতে৷’’

প্রধানমন্ত্রীর ‘ভিকটিম ব্লেমিং’

অনেক অধিকার কর্মীই দেশটির প্রধানমন্ত্রী 'সহিংসতার শিকার নারীকেই উলটো দায়ী' করার কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে বলে মনে করেন৷

গত মাসে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যৌন নির্যাতনের জন্য নারীকেই দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেন৷ মার্কিন টিভি চ্যানেল এইচবিওতে ডকুমেন্টারি নিউজ সিরিজ এক্সিওস-এর জন্য দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘নারী যদি খুব কম কাপড় পরে তাহলে পুরুষের ওপর তার প্রভাব পড়তেই পারে, যদি তারা রোবট না হয়৷’’ এটাকে ‘সাধারণ জ্ঞান’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷

এ বছরের শুরুতেও একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পাকিস্তানে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির পেছনে ‘পর্দার’ অভাবকে দায়ী করে বক্তব্য দেন তিনি৷

সাজিয়া খান বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী খান এবং তার মন্ত্রীদের একের পর এক নারীবিরোধী মন্তব্য নারীবিদ্বেষ এবং নারীর প্রতি সহিংসতাকেও এক প্রকার উসকে দিয়েছে৷’’

সাবেক আইনজীবী ইয়াসমিন লাহিড়ি মনে করেন, ইমরান খানের সরকার নারীদের রক্ষায় কিছুই করেনি৷ বরং নারীর প্রতি সহিংসতা দমনে একটি আইন দেশের ইসলামিক আলেমদের কাছে পাঠানোর পর তারা তা আটকে দিয়েছেন৷

‘পশ্চিমা সংস্কৃতির’ দায়

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মতোই দেশটির সমাজের রক্ষণশীল অংশও নারীর প্রতি শারীরিক ও যৌন সহিংসতার জন্য ‘পশ্চিমা সংস্কৃতি' দায়ী বলে মনে করেন৷

সাবেক আইনপ্রণেতা সামিয়া রাহিল কাজি বলেন, ইসলামিক শিক্ষা থেকে সরে যাওয়ার কারণেই এসব ঘটনা ঘটছে৷ তিনি বলেন, ‘‘নূর মুকাদামের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন নাস্তিক৷’’

এস খান/এডিকে