1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নুসরতের পুষ্পাঞ্জলি নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১২ অক্টোবর ২০১৯

দুর্গাপুজোয় পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে ইসলামি ধর্মগুরুদের রোষের মুখে পড়েছেন অভিনেত্রী ও সাংসদ নুসরত জাহান৷ এর আগেও হিন্দু ধর্মের আচার পালন করেছেন তিনি৷ নুসরতের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন৷

https://p.dw.com/p/3RB1e
Nusrat Jahan | indische Schauspielerin und Politikerin
ছবি: imago/Pacific Press Agency/S. Paul

ধর্ম যার যার উৎসব সবার— এই স্লোগান জনপ্রিয় হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে এই স্লোগান তুলে প্রচার চালানো হচ্ছে পুজোর সময়৷ মৌলবাদীদের এই প্রচার পছন্দ হওয়ার কথা নয়৷ নুসরতের অঞ্জলি সেই ব্যাপারটাই সামনে এনে দিল৷ তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ নুসরত এবার দুর্গাপুজোয় কলকাতার সুরুচি সঙ্ঘের মণ্ডপে যান৷ স্বামী নিখিল জৈন সঙ্গে ছিলেন৷ মণ্ডপে ছিলেন চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও পুজো উদ্যোক্তা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস৷ এখানে সকলের সঙ্গে অঞ্জলি দেন নুসরত৷ সেই ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়৷ এতে রুষ্ট মুসলিম মৌলবিরা৷ তাঁদের বক্তব্য, ইসলাম ধর্মাবলম্বী হয়ে কীভাবে নুসরত প্রতিমার সামনে প্রার্থনা করলেন৷ তিনি ধর্মের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন৷ মুসলমান হয়েও ধর্মের অবমাননা করেছেন৷

নুসরতকে ঘিরে এই বিতর্ক নতুন নয়৷ নিখিল জৈনের সঙ্গে বিয়ের পর তিনি শাঁখা-সিঁদুর পরে সংসদে গিয়ে শপথ নেন৷ তখন একপ্রস্থ বিতর্ক হয়েছিল৷ তার পর অভিনেত্রী বলেছিলেন, ধর্মবিশ্বাসে তিনি মুসলমানই৷ এবার অঞ্জলি দেওয়ায় সেই বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে৷ বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন নুসরতের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ ৭ অক্টোবরের ট্যুইটে তিনি বলেছেন, ‘‘অমুসলমান হয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন হিজাব পরে প্রার্থনা করেন, তখন মুসলিম ধর্মগুরুরা খুশি হয়ে তাঁকে ধর্মনিরপেক্ষ বলেন৷ যখন অহিন্দু নুসরত পুজোর সময় প্রার্থনা করেন, তখন মুসলিম ধর্মগুরুরা অখুশি হন ও এই কাজকে ইসলামবিরোধী তকমা দেন৷'' 

রেজাউল করিম

রাজনৈতিক কর্মী ও চিকিৎসক রেজাউল করিম নুসরতের পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ গত সাধারণ নির্বাচনে বাম প্রার্থী রেজাউল বলেন, ‘‘একটি স্বাধীন দেশের একজন নারী কোনো ধর্ম পালন করবেন, নাকি নাস্তিক থাকবেন, সে ব্যাপারে মোল্লা, পুরোহিত, যাজকের ফতোয়া জারি করার অধিকার নেই৷ কে তাদের এই দায়িত্ব দিয়েছে৷ নুসরত অঞ্জলি দিয়ে কোনো ভুল করেননি৷ আমি এগারো ক্লাসে পড়ার সময় থেকে অঞ্জলি দিই৷ আমার মেয়েরাও দেয়৷'' রেজাউলের মতে, ‘‘দুর্গাপুজো নিছক কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এখানে উৎসবটাই প্রধান৷ বারোয়ারি পুজো সেভাবেই হয়৷ ঘরের মেয়ে হিসেবে দেখা হয় দুর্গাকে৷ এটাই বাংলার সংস্কৃতি৷ বাঙালি হিসেবে নুসরত ঠিক কাজই করেছেন৷''

কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু মানুষ পুজোয় অংশ নেন৷ দর্শনার্থী হিসেবে নয়, পুজো পরিচালনার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকেন তাঁরা৷ মুর্শিদাবাদের এক বিধায়ক প্রতিবারের মতো এ বছরও নিজে হাতে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন৷ অবাঙালি সংখ্যালঘুরাও এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই৷

কলকাতার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত খিদিরপুরে একটি ক্লাবের পুজোর প্রধান কর্তারা মুসলমান৷ বিবিধের মাঝে মিলনের ভারতীয় পরম্পরার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন কলকাতা পৌরসভার কাউন্সিলর রেহানা খাতুন ৷ শহরের প্রথম সারির পুজো মহম্মদ আলি পার্কের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত তিনি৷ তাঁর ওয়ার্ডের ১৬-১৭টি পুজোর তত্ত্বাবধান করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘পুজোর একমাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিই৷ কোন কমিটির কোথায় সমস্যা আছে দেখি৷ অনেক রাত পর্যন্ত মেডিক্যাল ক্যাম্প চালাই৷ খাওয়াদাওয়ার অনুষ্ঠানে থাকি৷'' জনপ্রতিনিধি রেহানা উৎসব নিয়ে বিভেদের ঘোর বিরোধী৷ তাঁর মতে, ‘‘আমি মুসলমান, নামাজ পড়ি৷ আমার কাছে সব ধর্ম একই৷ যিনি আল্লা, তিনিই গড৷ এ নিয়ে বিবাদ করার কোনো মানে হয় না৷''

রেহানা খাতুন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশ নেন৷ ঈদে হিজাব পরে প্রার্থনা করেন, বড়দিনে গির্জায় যান৷ এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷ রেজাউল করিমের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণ সঠিক নয়৷ হিজাব বা বোরখাকে মান্যতা দেয় তাঁর এই ভূমিকা৷ সব মুসলমান মহিলা কি হিজাব পরেন? তাহলে সেই পোশাক পরে মুখ্যমন্ত্রী কী প্রমাণ করতে চান? প্রশাসনের প্রধান হিসেবে তাঁর উচিত সব ধর্মের থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখা৷''