1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচন পর্যবেক্ষক : যে যোগ্যতায় যোগ্য তারা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ আগস্ট ২০২৩

বাংলাদেশের কোনো নাগরিক এসএসসি পাস করলেই নির্বাচন পর্যবেক্ষক হতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের নীতিমালায় সেরকমই বলা আছে। আর বিদেশিদের ব্যাপারে দেশীয় নীতিমালার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন থাকতে হয়৷

https://p.dw.com/p/4UePw
Wahlen in Bangladesch 2018
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance

ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম (ইএমএফ) নামে বাংলাদেশি একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে চার বিদেশির  প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকও করছেন। ইএমএফ-এর প্রধান আবেদ আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, " তারা (বিদেশি) নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক। সাংবাদিকরা সবচেয়ে বড় নির্বাচন পর্যবেক্ষক।” তার কথা, "যারা আমাকে পছন্দ করেন না, তারা আমার প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করেন।” এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালেও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য কয়েকজন বিদেশিকে নিয়ে এসেছিল। তারা তখন বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রশংসা করেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষকের ‘যোগ্যতা'

২০১৭ সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালায় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তির আট ধরনের যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে বয়স, অরাজনৈতিক, কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করার সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন এসএসসি পাসের কথা বলা হয়েছে। তবে এই পর্যবেক্ষকদের  নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোনো পর্যবেকক্ষণ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।

যে কাউকে বিশেষজ্ঞ বানিয়ে আনলে তো প্রশ্ন উঠবে: রফিকুল ইসলাম

নির্বাচনের আগে এই সংস্থাগুলোকে কমিশন আবেদনের ভিত্তিতে নিবন্ধন দেয়। এবার নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হতে ১৯৯টি সংস্থা আবেদন করেছে। আগে থেকেই কমিশনে ১১৮টি সংস্থা নিবন্ধিত ছিল। তাদের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে। যারা আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে ৪০টির নিবন্ধন ১১ জুলাই পর্যন্ত ছিল। বাকিগুলো নতুন।

২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো পর্যবেক্ষক টিম না এলেও দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন।

ওই সময় নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী আলোচিত দুটি সংস্থা ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন' এবং ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম'-এর কাজ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই দুইটি প্রতিষ্ঠানেরই প্রধান আলোচিত আবেদ আলী। ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন' আসলে সার্কের কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। এটির নামের সঙ্গে সার্ক জুড়ে দেয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, "আমরা সব সমই চাই যেন বেশি সংখ্যায় দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। আমাদের এজন্য দুইটি আলাদা নীতিমালা আছে।  সেটা আমরা অনুসরণ করি। কিন্তু যারা পর্যবেক্ষণের কাজ করেন, তারা তাদের ব্যাপারে যে তথ্য দেন তা আমরা সত্য ধরে নিই। কারণ, ওই তথ্য যাচাইয়ের কোনো ব্যবস্থা আমাদের নেই। আর বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়টি আসলে দেখে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমরা অনুমোদন দিই। কিন্তু তারা ক্লিয়ারেন্স না দিলে  বিদেশিরা ভিসা পান না।”

তিনি জানান, "ইউরোপীয় ইউনিয়সহ আরো যে চার বিদেশি প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এসেছেন, এটা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নয়। তাই আমাদের অনুমোদনেরও প্রয়েজন হয়নি। তাদের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখেছে। তারা এখানে এসে আমাদের  অ্যাপয়ন্টমেন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করার সুযোগ আমাদের নেই।”

সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘নির্বাচনের সময় যারা পর্যবেক্ষণ করবেন, তাদের অনুমোদন দেয় নির্বাচন কমিশন। আর আমরা বিদেশিদের অনুমতি দিলেও যে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে পারবেন, তা কিন্তু নয়। আমাদের সময়ে আমরা অনেক বিদেশি পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে অনুমোদন দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সবাই আসতে পারেননি। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্লিয়ারেন্স না দেয়ায় তারা ভিসা পাননি। আবার আবেদ আলী সাহেব যাদের নিয়ে আসতে চেয়েছেন, তারা আসতে পেরেছেন।”

তিনি জানান, " নীতিমালা অনুযায়ী বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কোনো সংগঠন আনতে পারে, রাষ্ট্রও আনতে পারে। সাধারণভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তি আছে। তাদের নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু যে কাউকে বিশেষজ্ঞ বানিয়ে আনলে তো প্রশ্ন উঠবে।”

পর্যবেক্ষণ সংস্থার যোগ্যতা থাকতে হবে: বদিউল আলম মজুমদার

২০২০ সালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশের দূতাবাসগুলোইসির কাছে থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষকের কার্ড নেয়।  তখন ১০টি দেশের মিশনের মোট ৭৪ জন পর্যবেক্ষক কার্ড পান। তবে এর মধ্যে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি করা ২৮ জন বাংলাদেশি ছিলেন। বাকি ৪৬ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক। বাংলাদেশি ২৮ জনকে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।

নির্বাচন কমিশনে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে তাদের সুশাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে ভোটাধিকার ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রচারের কাজের কথা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, "নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হতে হলে তাকে উচ্চ শিক্ষিত হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এসএসসি পাস হলেই হয়, যদি কাজটি তারা পারেন। কিন্তু যারা পর্যবেক্ষণ সংস্থা পরিচালনা করবেন, তাদের তো অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা থাকতে হবে।” তার কথা, "আবেদ আলী সাহেব যে চার জন বিদেশিকে নিয়ে এসেছেন, তাদের তো কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ২০১৮ সালেও তিনি বিদেশিদের এনে জালিয়াতি করেছেন, এখনো একই কাজ করছেন। নির্বাচন কশিমনের নীতিমালা যদি এই জালিয়াতির সুযোগ করে দেয়, তাহলে তা বদলানো উচিত।” তবে আবেদ আলী বলেন, তাদের আমন্ত্রণে যারা প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এসেছিলেন তারা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের টেরি ইসলে,  আয়ারল্যান্ডের নিক পল, চীনের এন্ডি লিন ও জাপানের ইউসুকি সুগো। তারা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সমাজ সেবক এবং রাজনৈতি বিশ্লেষক বলেও দাবি তার৷ তাদের মধ্যে একজন সাংবাদিক। তিনি জানান, " সামনের নির্বাচনে আমাদের বড় পর্যবেক্ষক দল থাকবে। সেখানেও বিদেশি পর্যবেক্ষকরা থাকবেন।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান